হাড় কাঁপানো শীতের মধ্যেই বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি, জনজীবন বিপর্যস্ত 

ঝিনাইদহে শীতের মধ্যেও অসময়ের বৃষ্টি

হাড় কাঁপানো শীতের মধ্যেই বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি, জনজীবন বিপর্যস্ত 

অনলাইন ডেস্ক

সারাদেশে হাড় কাঁপানো শীতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অসময়ের বৃষ্টি। আর এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। অসময়ে আকাশ ভেঙে রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, বাগেরহাটে রাজবাড়ি ও মানিকগঞ্জে বৃষ্টি নেমেছে। কনকনে ঠান্ডার সঙ্গে বৃষ্টিতে জেলার জনজীবন অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে।

এতে অসুস্থ হচ্ছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দিনাজপুরে ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এছাড়া চুয়াডাঙ্গায় জনজীবনের পাশাপাশি ফসলের ক্ষতি হয়েছে।  

সারাদেশ থেকে প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে ডেস্ক রিপোর্ট : 

রাজশাহীতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি

রাজশাহীতে আজ বৃহস্পতিবার  সকালে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে।

একই সঙ্গে সকাল ৬টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘন কুয়াশা ও মেঘে আকাশ ঢেকে থাকায় এখনও সূর্যের দেখা মেলেনি। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন জানান, সকাল ৬টা ১০ মিনিট থেকে আধাঘণ্টা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হয়েছে। এ সময় শূন্য দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। মেঘে আকাশ ঢেকে রয়েছে। মেঘ কেটে গেলে সামনের দিনগুলোতে তাপমাত্রা আরও নিচে নামতে পারে।

বাগেরহাটে মাঘের বৃষ্টি 

মাঘের হাড় কাঁপানো শীত, অন্যদিকে হালকা বৃষ্টি। এ দুইয়ে মিলিয়ে বাগেরহাটের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জেলা বিভিন্ন স্থানে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হলেও মোংলা ও রামপাল এলাকায় ভারী বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) ভোর থেকেই রামপাল ও মোংলায় হালকা বৃষ্টিপাত হলেও ৮টার পর ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন অফিসগামী ও খেটে খাওয়া মানুষরা।

ঝিনাইদহে অসময়ের বৃষ্টি 

ঝিনাইদহে শীতের মধ্যেও অসময়ের বৃষ্টি হয়েছে। অসময়ের বৃষ্টির কারণে ভোগান্তিতে পড়েছে সব শ্রেণির মানুষ। বুধবার রাতে হালকা বৃষ্টি হলেও বৃহস্পতিবার ভোর থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়েছে সব শ্রেণির মানুষ। বৃষ্টির কারণে সড়ক মহাসড়কে কমেছে মানুষের উপস্থিতির হার। শীতের পাশাপাশি বৃষ্টিতে ভোগান্তি বাড়িয়েছে দ্বিগুণ।  

রাজবাড়ি-মানিকগঞ্জে বৃষ্টি

ভয়াবহ শীতের আবহের মধ্যেই রাজবাড়ি ও মানিকগঞ্জের বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী এদিন সকালেই দুই জেলায় বৃষ্টির দেখা মেলে। বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে আশপাশের বেশ কয়েকটি জেলায় গুড়িগুড়ি বৃষ্টি দেখা দেয়। শীতের তীব্রতার মাঝেই বৃষ্টিতে জনজীবনে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। মাঘের শীতে বৃষ্টি হওয়ায় শীতের তীব্রতা বাড়তে পারে বলে শঙ্কা সাধারণের। রাজবাড়িতে সকাল থেকেই গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। শীত ও বৃষ্টির ফলে অনেকেই বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না।  

দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা

দিনাজপুরে বইছে মৃদু শৈত্য প্রবাহ। চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চলছে এ জেলায়। যে কারণে আবারও বেড়েছে শীতের তীব্রতা। তবে কুয়াশা অন্যান্য দিনের তুলনায় একটু কম হলেও কমেনি শীত। দিনাজপুরে আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, বুধবার এ জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা এ জেলায় চলতি শীতের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এবং বাতাসের আদ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ।

আরও পড়ুন: তাপমাত্রা নিয়ে আবারও দুঃসংবাদ

চুয়াডাঙ্গায় জনজীবনের পাশাপাশি ফসলের ক্ষতি

সপ্তাহব্যাপী তীব্র শীতে নাকাল জনজীবনের পাশাপাশি ফসলের ক্ষতি নিয়েও কিন্তু উদ্বিগ্ন কৃষকরা। এরই মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বুধবার (১৭ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টার সময় থেকে জেলায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়া শুরু হয়। বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) ভোর থেকে চুয়াডাঙ্গা সদর এলাকায়ও দেখা দেয় একই অবস্থা। কিছু সময় মুষলধারে বৃষ্টি হয়। এরপর আবারও কমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়া অব্যাহত রয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় চুয়াডাঙ্গা জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভোর ৫টা ৫০ মিনিট থেকে চুয়াডাঙ্গা সদর এলাকায় বৃষ্টিপাত শুরু হয়, যা অব্যাহত রয়েছে। তাপমাত্রা কম এবং বৃষ্টি অব্যাহত থাকার কারণে শীত অনুভূত হচ্ছে বেশি। এদিকে, তীব্র শীতের সঙ্গে বৃষ্টির কারণে বোরো আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। জেলার মাঠে মাঠে আলু, বোরো ধান এবং ভুট্টা রয়েছে। অসময়ে বৃষ্টির কারণে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা।

শীতে অসুস্থ হচ্ছে বৃদ্ধ ও শিশুরা

দেশের বিভিন্ন স্থানেই বাড়ছে শীতের তীব্রতা। দিনের বেলা শীতের একটু কম হলেও সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই শুরু হয়। এতে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে হাসপাতালে। তবে হাসপাতালে এসব রোগীর চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ওষুধসহ বেশিরভাগ পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই বলে অভিযোগ স্বজনদের।  

চিকিৎসকরা বলছেন, প্রতিবছর শীত বাড়লে ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত সমস্যা, নিউমোনিয়া, জন্ডিস, আমাশয়, চোখের প্রদাহ, জ্বরসহ মানুষ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়।  

চিকিৎসা নিতে এসে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই বেশি। এরমধ্যে বেশিরভাগ রোগীই শিশু ও বৃদ্ধ। ভর্তি হওয়া এসব শিশুদের মধ্যে ঠান্ডাজনিত নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এসব রোগীর স্বজনদের দাবি প্রয়োজনীয় ওষুধসহ বেশিরভাগ পরীক্ষা করতে হয় হাসপাতালের বাইরে থেকে।  

শিশু বিশেজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, শীতে আক্রান্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। এছাড়া ঠান্ডাজনিত কারণে দুইমাস থেকে দুই বছর বয়সী বাচ্চারা নিউমোনিয়ায় বেশি আক্রান্ত হয়। বাচ্চাদের নিরাপদে রাখতে গরম কাপড়, হাতে পায়ে মুজা সম্ভব হলে মাস্ক পরাতে পরামর্শ দেন।

শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে বৃদ্ধার মৃত্যু

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে জবা রানী (৭৫) নামে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। গত শুক্রবার রাত ১০টার দিকে সুন্দরগঞ্জ পৌর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কর্ণিপাড়া মহল্লায় এ ঘটনা ঘটে। জবা রানী ওই মহল্লার মৃত বিপিন চন্দ্র সরকারের স্ত্রী। স্থানীয়রা জানান, কোনো সন্তান-সন্ততি না থাকায় স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে বাড়িতে একাই থাকতেন জবা রানী।

তীব্র শীতের মধ্যে বাড়ির আঙিনায় খড়ের আগুনের তাপ নিচ্ছিলেন তিনি। এ সময় অসাবধানতাবশত আগুন কাপড়ে লেগে তার শরীর দগ্ধ হয়। খবর পেয়ে স্থানীয়রা তাকে সুন্দরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ওই বৃদ্ধাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন স্থানীয়রা। পরে বৃদ্ধা মারা যান।  

তাপমাত্রা নিয়ে দুঃসংবাদ

সারাদেশে চার বিভাগে বৃষ্টি হচ্ছে ফলে তাপমাত্রা আরও কমে যেতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আজ বৃহস্পতিবার অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান এ তথ্য জানান। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলায় ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যশোরে ১৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণপশ্চিম অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বৃষ্টির ফলে কুয়াশা কমে সূর্যের দেখা মিলবে। সেই সঙ্গে আগামীকাল শুক্রবার থেকে সারাদেশের তাপমাত্রা কমে যেতে পারে। তবে আজকেও শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রংপুর বিভাগের সব জেলায়, ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ এবং রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলায় শৈত্যপ্রবাহ হচ্ছে। মূলত এই মাসজুড়েই শীত বিরাজ করবে।

উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।

news24bd.tv/কেআই