পাকিস্তান-ইরান সম্পর্কে হঠাৎ টানাপোড়েন কেন?

প্রতিবেশী দেশ ইরান-পাকিস্তান সম্পর্ক ক্রমেই অবনতির দিকে এগোচ্ছে

পাকিস্তান-ইরান সম্পর্কে হঠাৎ টানাপোড়েন কেন?

অনলাইন ডেস্ক

ইরানের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে ঊঠছে মধ্যপ্রাচ্য। এর মধ্যেই দুই প্রতিবেশী দেশ ইরান-পাকিস্তান সম্পর্ক হঠাৎ করেই অবনতির দিকে যাচ্ছে।  ইরান এতোদিন একতরফা বিভিন্ন সময়ে পাকিস্তানের ওপর হামলা চালালেও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি)  তারাও ইরানে হামলা চালিয়েছে। (সূত্র: ডন)

বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) পাকিস্তান বিমান বাহিনী ইরানে ভূখণ্ডের সিস্তান-বেলুচের  বিচ্ছিন্নতাবাদী বিভিন্ন ক্যাম্পে বিমান হামলা চালিয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, পাকিস্তান মূলত তাদের দেশের কিছু 'ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী' গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আঘাত হানতে ইরানে অবস্থিত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। এর আগে পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী এলাকায় গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছিলেন ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) কর্নেল হোসেইন আলী জাওয়ানফার।

কিন্তু পাকিস্তান-ইরান সম্পর্কের উত্তেজনা কেন চরমে?
মূলত  পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার সূত্রপাত হয় যখন গত মঙ্গলবার গভীর রাতে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের স্থানীয় জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ আল-আদলের দুটি ঘাঁটিতে বিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। আকাশসীমা লঙ্ঘন করে ইরানের চালানো এই হামলায় পাকিস্তানে অন্তত দুই শিশু নিহত ও আরও তিনজন আহত হয়েছিল।

হামলার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে ইরান সরকার পুরোপুরি নিশ্চুপ থাকে। ইরান সরকারের নিশ্চুপ থাকা নিয়ে কূটনৈতিক মহলে প্রশ্ন ওঠে।  তবে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম নুর থেক জানানো হয়েছিলো, পাকিস্তানের ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ আল-আদলের সদর দপ্তর ধ্বংস করা ছিলো ইরানের মূল লক্ষ্য।  

জইশ আল আদল সংগঠনটি কাদের?
ইরানে কালো তালিকাভুক্ত একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে জইশ আল-আদলকে চিহ্নিত করা হয়। ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনটি সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ইরানের মাটিতে বেশ কয়েকটি হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল বলে দাবি করে আসছিলো ইরান সরকার। যদিও পাকিস্তানে এ সংগঠনের তৎপরতার ব্যাপারে দেশটির সরকার কোনো সরাসরি বক্তব্য দেয়নি। কিন্তু ধারণা করা হয় পাকিস্তান ও ইরান, দুটি দেশেই এই গোষ্ঠীর তৎপরতা রয়েছে।

পাকিস্তান-ইরানের কূটনৈতিক সম্পর্ক কোন দিকে যাচ্ছে?
পাকিস্তানে হামলার পর এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করে ইসলামাবাদে নিযুক্ত ইরানের শীর্ষ কূটনীতিককে তলব করে পাকিস্তান সরকার। এই হামলার জবাবে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, এসব অবৈধ হামলার পরিণতি গুরুতর হতে পারে। এর আগে বেলুচিস্তান প্রদেশে ইরানের হামলার ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে ইসলামাবাদে নিযুক্ত তেহরানের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছিল পাকিস্তান। পাশাপাশি  ইরান থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান।  পাকিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করায় দুই দেশের মধ্যে চলমান বা নির্ধারিত সমস্ত উচ্চ-পর্যায়ের সফর স্থগিত করা হয়েছিল।

এর আগে গত মাসে পাকিস্তানি হামলায় বহু ইরানি পুলিশ নিহত হয়েছিল। সেসময় ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমাদ ওয়াহিদি দাবি করেছিল, 'পাকিস্তানি সন্ত্রাসীরা এই হামলা চালিয়েছিল। ' গত কয়েক বছরে পাকিস্তান সীমান্তবর্তী ইরানের সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশে বেসামরিক ও সামরিক অবস্থানে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো হামলা চালিয়ে আসছে। যদিও ইরান ও পাকিস্তান জঙ্গিদের প্রশ্রয় দেয়ার জন্য পরস্পরকেই দায়ী করে আসছে। দুই দেশই দাবি করে আসছিলো ঘাঁটি তৈরি করে জঙ্গিরা এক দেশ থেকে অপর দেশে হামলা চালায়। কিন্তু দেশ দুটির সরকারি বাহিনীর এসব ঘটনায় জড়িত হওয়ার ঘটনা বিরল বলেই উল্লেখ করছেন বিশ্লেষকরা। যদিও এই দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যকার সম্পর্ক কখনো উত্তেজনার এতো শীর্ষে পৌঁছায়নি।

news24bd.tv/SC