বন্দী ফিলিস্তিনি নারীকে ১৩ মাসে ২৯ বার ধর্ষণের হুমকিসহ ভয়াবহ নির্যাতন

লামা খাতার--ছবি মিডলইস্ট আই ।

বন্দী ফিলিস্তিনি নারীকে ১৩ মাসে ২৯ বার ধর্ষণের হুমকিসহ ভয়াবহ নির্যাতন

অনলাইন ডেস্ক

নাম, লামা খাতার। এক ফিলিস্তিনি সাংবাদিক। তার দুই অপরাধ। একটি ফিলিস্তিনি নারী।

অন্যটি সাংবাদিকতা করা। তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে। গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর, পশ্চিম তীরের হেবরনে নিজ বাড়িতে। বন্দীশিবিরে- কারাগারে কেটেছে।
এরপর বন্দী বিনিময় চুক্তি অনুসারে তিনি গত নভেম্বরের শেষ দিকে ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।  কিন্তু এই অল্পদিনে তিনি ভয়ংকর পরিস্থিতির শিকার হোন। এখনও ট্রমাক্রান্ত। দু:স্বপ্নে ঘুম ভাঙে।

এতোদিন পর শনিবার ( ২০ ডিসেম্বর) তিনি গণমাধ্যমের কাছে তার সেসময়ের তিক্ত নির্যাতনের কথা জানান। সূত্র মিডলইস্ট আই।  
তিনি জানান, ১৩ মাস লামা বন্দিশিবিরে ছিলেন। তাঁর হাতকড়ায় প্লাস্টিকের জিপ লাগিয়ে তাঁকে সেনাদের জিপের মেঝেতে ফেলে নিয়ে যাওয়া হয় কিরিয়াত আরবা বসতি ক্যাম্পে। হাতকড়া যতক্ষণ তাঁর হাতে ছিল, তাতে লাগানো প্লাস্টিকের জিপ সারাক্ষণ তাঁর কবজিতে বিঁধছিল।

সেখানে লামাকে জেরা শুরু হয়। প্রথম দফায় জিজ্ঞাসাবাদেই ইসরায়েলি কর্মকর্তারা তাঁকে নানা ধরনের হুমকি দিয়েছিলেন, এর মধ্যে ধর্ষণের হুমকিও ছিল। লামা বলেন, ‘তাঁরা আমাকে, আমার পরিবারকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার কথা বলছিলেন। এমনকি তাঁরা তাঁকে গাজায় নির্বাসিত করারও হুমকি দিয়েছিলেন। আমাকে বলা হয়েছিল, তিনি একজন যুদ্ধবন্দী, তাই তাঁরা তাঁর সঙ্গে যা খুশি করতে পারেন। ১৩ মাসে ২৯বার ধর্ষণের হুমকি দিয়েছিল’।

লামা আরও বলেন, চার দিন পরে তাঁকে হাশারন কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। হাশরন কারাগার থেকে  নেওয়া হয় উত্তরাঞ্চলের দামোন কারাগারে। সেখানে তাঁকে বিবস্ত্র করে অপমান করা হয়। তার শরীরে যেখানে সেখানে ইসরায়েলি সেনারা যখন তখন হাত দিত। লামার কিছুই করার ছিল না। একজন বন্দীর কিইবা করার থাকে!
ঠিক তখনই হেবরন থেকে আসা এক নারীর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে সেই সময়ই ওই নারী গ্রেপ্তার হন। ওই নারী তাঁকে জানান, তাঁর (লামা) স্বামীকেও ৮ নভেম্বর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার মানে বাবা–মা ছাড়া তাঁদের পাঁচ সন্তান বাড়িতে। এই অবস্থায় সন্তানেরা কীভাবে আছে, তা ভেবে তিনি  আরও ভেঙে পড়েছিলেন।
লামা বলেন, ‘এর মধ্যে সিন-বেতের (ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা) এক সদস্য একরাতে  আমার কাছে এসে চুম্বন করতে করতে বলে ‘তোমার সন্তানরা না খেয়ে মরছে। আমাদের বিরুদ্ধে কলম ধরবে ’ তাঁর চোখে–মুখে ছিল আত্মতৃপ্তি।

লামার ২৩ বছর বয়সী মেয়ে বিসান আল–জাজিরাকে বলেন, তাঁকে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ছোট ভাইবোনদের ‘বাবা ও মা’ দুজনেরই ভূমিকাই পালন করতে হয়েছে। কারণ, ছোট্ট ছোট্ট তিন ভাইবোন স্কুলের শিক্ষার্থী। এবং তাদের দেখভালের দরকার ছিল।
আলজাজিরার এক প্রতিবেদন জানায়,  শেষমেশ লামাকে নভেম্বরের শেষ দিকে অফার কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। সেখানে ঠান্ডা সেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাঁকে অপেক্ষায় রাখা হয়। ওই সময়টুকুতে তাঁকে কোনো খাবার বা পানি কিছুই দেওয়া হয়নি। ভোরে তিনি মুক্তি পান।

news24bd.tv/ডিডি