এসইও শেখানোর মাধ্যমে ক্যারিয়ারের পথ দেখাচ্ছেন ফারুক খান

ফারুক খান

এসইও শেখানোর মাধ্যমে ক্যারিয়ারের পথ দেখাচ্ছেন ফারুক খান

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন সবার হাতে হাতে নিত্য নতুন সব আধুনিক ডিভাইস। প্রযুক্তির এই উৎকর্ষতায় মানুষ দিন দিন আরও বেশি ভার্চুয়াল দুনিয়াতে সময় ব্যয় করেছে। জানার জন্য বা কাজের জন্য মানুষ অনলাইন দুনিয়াতে সার্চ করে সবকিছুই। কিন্তু অনেক সময় কাজের ওয়েবসাইটও সার্চ করে খুঁজে পাওয়া যায় না।

এর একমাত্র কারণ  ‘সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন’ বা এসইও না করা।

ই-কমার্স বা ব্যবসায়ী যে কোনো ওয়েবসাইটের অর্গানিক ভিজিটর এবং সেল বৃদ্ধি করার সব থেকে গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় মাধ্যমের নাম হলো এই এসইও। এসইও এমন একটি শব্দ, যা বদলে দিয়েছে লাখো মানুষের ভাগ্যের চাকা। যার উপর দাঁড়িয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বর্তমান তরুণ সমাজ, হচ্ছে ব্যবসার প্রচার-প্রসার ও ব্র্যান্ডিং।

 

দেশে এসইওর প্রসারে অন্যতম ভূমিকা রেখে চলেছেন আইটি উদ্যোক্তা এবং ‘খান আইটি’র প্রতিষ্ঠাতা এসইও বিশেষজ্ঞ মো. ফারুক খান। ফারুক খানের জন্ম খুলনা জেলায় একটি সাধারণ নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে। খুলনা পলিটেকনিক থেকে কম্পিউটার টেকনোলজিতে ডিপ্লোমা শেষে ঢাকায় আসেন তিনি। স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর থেকেই ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে কাজ শুরুর চিন্তা করেন। ২০১৪ সালে তিনি এসইও নিয়ে প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করেন। এরপর ২০১৫-এর শেষ থেকে তিনি BASIS Institute of Technology & Management (BITM)-এর অধীন SEIP প্রজেক্টে ৩ বছরের বেশি সময় এসইও প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। এরই মধ্যে বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের চাহিদা লক্ষ্য রেখে ২০১৭ সালে তিনি নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ‘খান আইটি’ প্রতিষ্ঠা করেন।  দীর্ঘ সময় ধরে তিনি এসইও নিয়ে শুধু যে কাজ করে আসছেন তা নয়, পাশাপাশি তিনি একজন স্বীকৃত এসইও প্রশিক্ষকও।

এছাড়াও তিনি বর্তমানে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের এডজান্ট ফ্যাকাল্টি হিসেবে যুক্ত আছেন। তিনি ১০ মিনিট স্কুলের এসইও মেন্টর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন এবং পাশাপাশি বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কোর্স কো-অর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।

এসইও হলো এমন একটি কৌশল, যার মাধ্যমে কোনো ওয়েব সাইটকে সার্চ ইঞ্জিনের (যেমন গুগল) টপ পজিশনে নিয়ে আসা সম্ভব। অন্যভাবে বললে, কোনো পেইজ বা ওয়েবসাইট এসইও করার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে, তার সার্ভিস বা প্রোডাক্ট লিখে যখন কেউ সার্চ করবে তখন যেনো তার ওয়েবসাইট সার্চ ইঞ্জিনের একটি ভালো পজিশনে র‍্যাংক করে। এসইওর মাধ্যমে ব্যবসার ব্র্যান্ডিংয়ের পাশাপাশি সেল ও বৃদ্ধি করা সম্ভব। এসইও ওয়েবসাইটের অর্গানিক ভিজিটর বাড়ানোর সব থেকে জনপ্রিয় মাধ্যম।  

উদাহণস্বরূপ বলা যেতে পারে, ধরুন আপনি আপনার বাসার জন্য আসবাবপত্র কিনবেন, তাই অনলাইনে রিসার্চ করার জন্য আপনি “Furniture” লিখে গুগলে সার্চ করলেন। যেই ওয়েবসাইট গুলো গুগলের প্রথম পেজে ওপরের দিকে থাকবে, স্বভাবতই আপনি সেই ওয়েবসাইটেই ক্লিক করবেন। যেমন এখানে আপনি হাতিল ফার্নিচারকে টপ পজিশনে দেখছেন, এটাই হচ্ছে এসইও এর ম্যাজিক। যার মাধ্যমে একদিকে যেমন ব্যবসার ব্র্যান্ডিং হচ্ছে অন্যদিকে বিক্রিও বৃদ্ধি পাচ্ছে।  আর এই যে আপনি হাতিল ফার্নিচারকে টপ রাঙ্কিং এ পেলেন এর পেছনে যিনি দক্ষতার সাথে কাজ করছেন, তিনিই জনাব ফারুক খান।

এখন পর্যন্ত ফারুক খান ৭ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীদের সরাসরি প্রশিক্ষণ দিয়েছেন এবং ইউটিউেবর মাধ্যমে ৮০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীকে এসইও বিষয়ক নিয়মিত টিউটোরিয়াল দিয়ে যাচ্ছেন। এই ফ্রি টিউটোরিয়ালগুলো দেখে অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং শুরু করছেন বা কেউ কেউ নিজের ব্যবসায় এই জ্ঞান কাজে লাগিয়েছেন। আবার কেউ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এসইও এক্সিকিউটিভ হিসেবে চাকরি শুরু করছেন।  

‘খান আইটি’ বাংলাদেশের বেশ জনপ্রিয় একটি এসইও এজেন্সি। যারা সফলতার সঙ্গে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- হাতিল ফার্নিচার, ওয়াল্টন গ্রুপ, ইসলামী ব্যাংক ও ইফাদ গ্রুপের মত আরও বেশ কয়েকটি সফল বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান।

‘Acumen Research and Consulting’–এর তথ্যমতে, গ্লোবাল সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন সার্ভিসের মার্কেট সাইজ ২০২১ সালে ৪৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন ইউএস ডলার। যা ২০২২ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে বাড়তি ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ সিএজিআর-এ ২৩৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার বৃদ্ধি হতে পারে।  

অন্যদিকে, বাংলাদেশও বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিংয়ে অনেক এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির (বিএফডিএস) তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে প্রায় ১০ লাখেরও বেশি ফ্রিল্যান্সার কাজ করছেন।  

ফারুক খান বলেন, তিনি স্বপ্ন দেখেন একটি উন্নতমানের পরিপূর্ণ বাংলাদেশের, যেখানে জনগণ দক্ষ জনশক্তিতে রূপ নেবে। তার উদ্দেশ্য সমগ্র তরুণ সমাজকে প্রশিক্ষণ ও ফ্রিল্যান্সিং জগতের জ্ঞান প্রদানের দ্বারা দেশ ও নিজের জন্য স্বাবলম্বী করে তোলা, যাতে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন। এখন পর্যন্ত তিনি প্রায় ৭ হাজার শিক্ষার্থীকে এসইও প্রশিক্ষণ প্রদান করেছেন।

তিনি আরও জানান, সব মানুষের মতোই তার পথ চলা সহজ ছিল না। এই পথ চলার পেছনে তার পরিবারের সদস্যরা ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন। প্রথম থেকেই তার শ্রদ্ধেয় মা এবং সহধর্মিণী নাঈমা আক্তার তার পথচলার সারথি হয়ে আছেন।

news24bd.tv/aa