অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতায় প্রায় বন্ধ হতে চলেছে পঞ্চগড় ডায়াবেটিক সমিতি ও জেনারেল হাসপাতাল। বিশাল অবকাঠামো ও আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম ও পরিচালনা কমিটির উদাসীনতার কারণে উদ্বোধনের এক বছরের মধ্যে জেনারেল হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
সমিতির সদস্য ও স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে নির্বাহী কমিটি। তাদের উদাসীনতা ও স্বজনপ্রীয়তার কারণে এই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
১৯৯৩ সালে পঞ্চগড় শহরের অদূরে মিঠাপুকুর এলাকায় ১ একর ৬২ শতক জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় পঞ্চগড় ডায়াবেটিক সমিতি।
হাসপাতালটি পরিচালনার জন্য সরকারি উদ্যোগে অফিস এবং চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য ডাক্তার কক্ষ, নার্সদের কক্ষসহ রোগীদের জন্য উন্নত মানের বিছানা প্রদান করা হয়। ২০১৯ সাল পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে ৩৫ সদস্যের একটি নির্বাহী কমিটি দ্বারা এই হাসপাতাল পরিচালিত হলেও ২০২০ সালে জেলা প্রশাসককে বাদ দিয়ে কমিটির সভাপতি হন পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য মজাহারুল হক প্রধান। তবে এই কমিটি অনুমোদন দেয়নি সমাজসেবা অধিদপ্তর।
২০১৮-১৯ সালে সরকারী অনুদানে ৭ কোটি টাকা মুল্যের আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি কেনা হয়। ব্যবহারের অভাবে অধিকাংশ যন্ত্রপাতি নষ্ট হতে চলেছে।
এই প্রতিষ্ঠানের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এস এম সাদেকুজ্জামান বলেন, অনেক যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। অনেক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিছু ব্যবহার হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার রাকিবুজ্জামান সোহেল কোন চেইন অফ কমান্ড নেই বলে জানান।
হাসপাতালের কেনাকাটা ও হিসাব-নিকাশেও অসচ্ছতার অভিযোগ উঠেছে। ওষুধ বিক্রয় কেন্দ্রসহ অন্যান্য লাভজনক খাত থেকে পুরো লভ্যাংশ ডায়াবেটিক সমিতির হিসাবে জমা হয় না। ওষুধ বিক্রয় কেন্দ্রটি ডায়াবেটিক সমিতি দ্বারা পরিচালিত হওয়ার কথা থাকলেও সেটি ব্যক্তিগতভাবে পরিচালনা করছেন হাসপাতালের হেলথ এডুকেটর রাহাত পারভেজ অপু। এই কেন্দ্রে হিসাবরক্ষক সোহেল রানা তালুকদারের রয়েছে পার্টনারশীপ।
হাসপাতালের অন্যান্য কর্মচারীরাও নিয়ম বহির্ভূতভাবে চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট অন্য ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েছে। ফলে এই হাসপাতালে রোগীরা চিকিৎসার জন্য আসতে চাইলেও অসাধু কর্মচারীদের উৎসাহে অন্য ক্লিনিক বা ডায়াগনষ্টিকে চলে যাচ্ছেন তারা। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে ৮ মাসের বেতনও পাচ্ছেন না কর্মচারী-কর্মকর্তারা। পাশাপাশি, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহে রোগীদের কাছ থেকে নেয়া হয় অতিরিক্ত টাকা।
নির্বাহী কমিটির যুগ্ন সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এটিএম সারোয়ার হোসেন জানান, অনেক অনিয়ম আছে। অপুর হেলথ এডুকেটর পদে চাকরি করার সার্টিফিকেট নেই। হিসাব-নিকাশেও সমস্যা আছে।
এই প্রতিষ্ঠানের আজীবন সদস্য বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) পঞ্চগড় জেলার সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম খায়ের জানান, একটা সিন্ডিকেটের হাতেই যেন সবকিছু। কোন জবাবদিহিতা নেই। আজীবন সদস্য হয়েও গত ১০ বছরে কোন মিটিংয়ের চিঠি পাইনি।
নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ও জাতীয় পার্টির সাধারন সম্পাদক আবু সালেক জানান, অনেক সম্ভাবনাময় এই হাসপাতাল। কিন্তু স্বেচ্ছাচারিতার জন্য বন্ধ হয়ে যাবে অচিরেই। এখানে আয়ের চেয়ে ব্যয় দেখানো হয় বেশি। সমিতির অর্থ লুটপাট হয়। এই প্রতিষ্ঠানের অনেক সম্পদ রয়েছে। এগুলো পরিকল্পিতভাবে ব্যবহৃত হলে হাজার হাজার মানুষের উপকার হতো। চিকিৎসার জন্য রংপুর, দিনাজপুর যেতে হতোনা।
এই প্রতিষ্ঠানে ৪ জন নিয়মিত ও ২ জন গেষ্ট ডাক্তার চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন।
পরিচালনা কমিটির সদস্য ও সরকারি মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল বারি বাবু জানান, এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে এই হাসপাতাল।
তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হেলথ এডুকেটর রাহাত পারভেজ ও একাউন্টেন্ট সোহেল রানা তালুকদার। তারা বলছেন সকল অভিযোগ মিথ্যা। রাহাত পারভেজ জানান শুধু মাত্র প্যান্ট-শার্ট পড়ে বেড়াতে পারবো বলে এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। না হলে করতাম না।
হিসাব রক্ষক সোহেল রানা তালুকদার জানান, কমিটি নির্দেশনাতেই কাজ করি। আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো মিথ্যা।
সকল অভিযোগ অস্বীকার করে সাধারন সম্পাদক মখলেছুর রহমান মিন্টু জানান, এই হাসপাতালে কোন দুর্নীতি নাই। একটি অ্যাম্বুলেন্স প্রয়োজন।
news24bd.tv/ab