যে কারণে সুইডেন ন্যাটোতে যোগ দিতে চায়

সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদানের ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে তুরস্ক।

যে কারণে সুইডেন ন্যাটোতে যোগ দিতে চায়

অনলাইন ডেস্ক

ইউক্রেনে হামলার পক্ষে যুক্তি হিসেবে রাশিয়া সর্বপ্রথম যে কারণটি দেখিয়েছে সেটি হচ্ছে শীতল যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ইউরোপের পূর্বদিকে ন্যাটোর সম্প্রসারণ রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে রাশিয়া যদি ভেবে থাকে ইউক্রেনে আক্রমণের ফলে ন্যাটো পিছু হটবে তবে তারা হিসাবে ভুল করেছে। খুব শীঘ্রই সুইডেন ন্যাটোতে যোগ দিতে যাচ্ছে, যার ফলে ন্যাটো থেকে রাশিয়াকে পৃথক করা সীমান্তের আয়তন বহুগুণ বেড়ে যাবে।

সুইডেন কেন ন্যাটোতে যোগ দিতে চাচ্ছে? কারণ দেশটির অধিকাংশ নাগরিক মনে করেন ন্যাটোর সদস্য হলে বাড়তি নিরাপত্তা পাওয়া যায়।

আক্রমণ না করলেও রাশিয়া সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশ লিথুয়ানিয়া, এস্তোনিয়া এবং লাটভিয়াকে হুমকি দিয়েছে। একদিকে ন্যাটোর সদস্য হওয়ার পরেও এই তিনটি দেশ অনিরাপদ বোধ করছে, অপরদিকে ন্যাটোর সদস্য না হওয়ার পরেও ইউক্রেনের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে।

ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর সুইডেনের ক্ষমতাসীন সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি এক বিবৃতিতে নিরাপত্তার বিষয়ে সুইডেনের অবস্থান চিরতরে বদলে যাওয়ার কথা জানিয়েছিল। শুধু তাই নয় বরং শুরুর দিকে সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ে অসম্মতি জানানো দেশটির একটি সংবাদপত্রের একজন রাজনৈতিক কলাম লেখক তার এক লেখায় বলেছিলেন, ন্যাটোর বাইরে থেকে কিভাবে সুইডেন তার নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে সে বিষয়টি আমার কাছে স্পষ্ট নয়।

পরবর্তীতে সুইডেনের অধিকাংশ নাগরিক ন্যাটোতে যোগদানের ব্যাপারে সম্মতি জানাতে শুরু করে।

সুইডেনের ন্যাটো সদস্য হওয়ার পথে দুটি বাধা ছিল তুরস্ক এবং হাঙ্গেরির সম্মতি। তুরস্ক সম্মতি দিয়ে দিয়েছে, আর হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান সুইডেনের প্রধানমন্ত্রীকে বুদাপেস্টে এসে ন্যাটোর সদস্যপদের বিষয়ে আলোচনা করতে বলেছেন। ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোর ওপর হাঙ্গেরির নির্ভরতা এবং রাশিয়ার ওপরে পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞাকে দেশটি সমর্থন দেয়ায় ধারণা করা হচ্ছে শেষমেষ হাঙ্গেরির জন্য সুইডেনের পক্ষে আসা ব্যতীত অন্য কোনো উপায় বাকি থাকবে না।  

এখন প্রশ্ন হচ্ছে সুইডেন ন্যাটোতে যোগ দিলে রাশিয়া কি করবে? যতোদিন ইউক্রেনে যুদ্ধ চলবে ততোদিন সুইডেন-রাশিয়া সীমান্তে অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েন করা রাশিয়ার পক্ষে সম্ভব হবে না। ইতোমধ্যে রাশিয়া সুইডেন ন্যাটোতে যোগ দিলে বাল্টিক সাগরে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের হুমকি দিয়েছে, এবং সুইডেনের রাজধানী স্টকহোম থেকে মাত্র ৫০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রাশিয়ার কালিলিনগ্রাদ অঞ্চলে অনেক আগে থেকেই পারমাণবিক অস্ত্র নিয়োজিত করে রাখা হয়েছে।

ন্যাটোতে যোগ দেয়ার পর সুইডেন সরকারের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে রাশিয়ার হ্যাকাররা হামলা চালাতে পারে। পাশাপাশি, বাল্টিক সাগরে সাবমেরিন এবং সুইডেনের আকাশসীমায় যুদ্ধবিমানের অনুপ্রবেশ ঘটাতে পারে রাশিয়া। তবে রাশিয়া ইতোমধ্যে এসকল পদক্ষেপ নিয়ে ফেলেছে। তাই মনে করা হচ্ছে ইউক্রেনকে ন্যাটোর সমর্থন দেয়া এবং রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার ফলে যতোটুকু অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে তারচেয়ে খুব বেশি কিছু সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদানের ফলে হবে না।

আশঙ্কাজনক বিষয় হচ্ছে ইউক্রেনে পরাজয় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বল্গাহীন করে তুলতে পারে। সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদান পুতিনের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দেবে, যা মোকাবিলায় তিনি যে আসলে কি করবেন সে সম্পর্কে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।

কিন্তু এটা সত্য যে ন্যাটোর সদস্য হওয়াটা সুইডেনের জন্য সদস্য না হওয়ার থেকে অধিক নিরাপদ।

সূত্রঃ টাইম

news24bd.tv/ab

এই রকম আরও টপিক