জরায়ুমুখ ক্যান্সার সচেতনতা মাসে বিশেষ কর্মসূচি ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতালের

সংগৃহীত ছবি

জরায়ুমুখ ক্যান্সার সচেতনতা মাসে বিশেষ কর্মসূচি ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতালের

অনলাইন ডেস্ক

জরায়ুমুখ ক্যান্সার সচেতনতা মাস উপলক্ষে গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করে ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল এন্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টার কর্তৃপক্ষ। গত ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ঘণ্টাব্যাপী গোলটেবিল বৈঠকটিতে উপস্থিত ছিলেন ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টারের গাইনি অনকোলজি প্যানেলের সিনিয়র কনসালটেন্ট অধ্যাপক ডা. সাবেরা খাতুন, অধ্যাপক ডা. সাহানা পারভীন এবং অধ্যাপক ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস, অনকোলজি প্যানেলের অধ্যাপক ডা. পারভীন আক্তার বানু, অধ্যাপক ডা. মো. এহতেশামুল হক, বিগ্রে. জেনা. (অব.) অধ্যাপক ডা. মো. ইউছুফ আলী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন গাইনি ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. সিলভিয়া হোসেন (মিথুন)।

জানানো হয়, বাংলাদেশের নারীদের ক্যান্সারের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জরায়ুমুখ ক্যান্সার।

গ্লোবোকান ২০২০-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতি বছর নতুন করে ৮ হাজার ৬৮ নারী জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রায় ৫ হাজার নারীই মৃত্যুবরণ করেন। অথচ এটি একটি প্রতিরোধযোগ্য ক্যান্সার।  

প্রফেসর ডা. সাবেরা খাতুন বলেন, এইচপিভি ভাইরাস দিয়ে জরায়ু ক্যান্সার হয় কিন্তু এই ভাইরাস দেহের রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থার মাধ্যমে ২ বছরের মধ্যেই শরীর থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু যাদের ১৮ বছরের নিচে বিয়ে হয়/যৌন সংযোগ ঘটে, বহুবিবাহ হয়, অল্প বয়সে প্রথম বাচ্চা হয়, ঘন ঘন বাচ্চা হয়, দীর্ঘদিন একটানা (৫ বছরের বেশি) জন্ম বিরতিকরণ পিল খায়, ধূমপান করেন, তাদের ক্ষেত্রে এই ভাইরাস দীর্ঘস্থায়ী হয়ে জরায়ুমুখের পরিবর্তন ঘটায় এবং প্রায় ১০-১৫ বছর পর তা ক্যান্সারে রূপ নেয়।

তাই সচেতন হয়ে এইচপিভি ভ্যাকসিন নেওয়া, ৩০-৬০ বছর বয়সে নিয়মিত ভায়া/প্যাপস/এইচপিভি ডিএনএ ভাইরাস পরীক্ষা করালে এই রোগ প্রতিরোধ সম্ভব হবে।

প্রফেসর জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ৯-১৪ বছর বয়সী কিশোরী কন্যাদের ১ ডোজ এইচপিভি ডিএনএ ভ্যাকসিন দিলে তা শতভাগ কার্যকর। ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত এই ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে। সরকারিভাবে গত বছরের অক্টোবর মাসে ৯-১৪ বছর বয়সী কন্যাদের টিকা দেওয়া হয়েছে। ইপিআই-এ অচিরেই এই ভ্যাকসিন যুক্ত হবে বলে আশাবাদী চিকিৎসকরা। বর্তমানে বেসরকারিভাবে ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টারের মতো অন্যান্য ভ্যাকসিন সেন্টারে পাওয়া যাচ্ছে এই ভ্যাকসিন। তবে ভ্যাকসিন নিলেও ৩০ বছর বয়সী নারীদের নিয়মিতভাবে স্ক্রিনিং অবশ্যই করতে হবে।

প্রফেসর ডা. সাহানা পারভীন বলেন, ক্যান্সারের পূর্ববর্তী এবং ক্যান্সারের শুরুতে সাধারণত তেমন কোনো লক্ষণ থাকে না। যখন ক্যান্সার ছড়াতে শুরু করে তখনই অনিয়মিত মাসিক, সহবাসের পর রক্তপাত, মেনোপোজের পর রক্তপাত, অতিরিক্ত দুর্গন্ধযুক্ত সাদাস্রাব শুরু হয়। স্ক্রিনিংয়ে যখনই জরায়ুমুখের পরিবর্তন ধরা পড়ে অথবা জরায়ুমুখের টিউমার দেখা দেয় তখন অবশ্যই একজন গাইনি ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। শুরুতেই ক্যান্সার কোনো পর্যায়ে আছে তা নির্ধারণ করতে হবে, কারণ স্টেজ অনুযায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি ভিন্ন।  
তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায় স্টেজ নির্ধারণ না করে শুধু জরায়ু ফেলে দেওয়া হয়। এটি রোগীর জন্য বিরাট ক্ষতি বয়ে আনে। প্রাথমিক পর্যায়ের ক্যান্সারে শুধুমাত্র অপারেশন করতে হয় এবং এটি একটি জটিল অপারেশন, যা গাইনি ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের মাধ্যমেই করানো উচিত। এদিকে অ্যাডভান্স স্টেজে অপারেশন করা যায় না, সেক্ষেত্রে রেডিওথেরাপি এবং কেমোথেরাপি দিতে হয়।

ডা. পারভীন আক্তার বানু বলেন, প্রথমে জরায়ুমুখের ওপর থেকে রেডিওথেরাপির সাথে কেমোথেরাপি দেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে জরায়ুমুখের নিচ দিয়ে রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। থেরাপি চলাকালীন বা পরবর্তীতে যে সমস্যাগুলো হয় তা খুব সামান্য। থেরাপির জায়গা একটু শক্ত হয়ে যেতে পারে, মাসিকের রাস্তা সরু হয়ে যেতে পারে এবং পায়খানা প্রস্রাবের সাথে হালকা রক্ত যেতে পারে। কিন্তু এখন ভালো আধুনিক রেডিওথেরাপির মেশিন আছে এবং চিকিৎসা আছে তাতে এই সমস্যাগুলো খুব কমই হয়ে থাকে।

ডা. এহতেশামুল হক বলেন, সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও রেডিওথেরাপি মেশিনের অপ্রতুলতা রয়েছে, তবে বেসরকারিখাতে বাংলাদেশে পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে। সুখবর হলো, রেডিওথেরাপিতে ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতালের মেশিন উন্নত এবং খরচও তুলনামূলক কম। যাদের রেডিওথেরাপি প্রয়োজন তাদের ২ মাসের মধ্যেই সেটি শেষ করতে হয়।

ডা. মো. ইউসুফ আলী বলেন, রেডিওথেরাপির আধুনিকরণ এবং অন্যান্য থেরাপি যেমন ইমিউনোথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপিসহ বিশ্বমানের ক্যান্সারের অন্যান্য সকল চিকিৎসা ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতালে রয়েছে।

জরায়ুমূখ ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি, কিশোরী কন্যাদের ভ্যাকসিন দেয়া ৩. ৩০-৬০ বছরের নারীদের স্ক্রিনিং করা, বাল্য বিয়েকে না বলা, বহুবিবাহ/একাধিক যৌনসঙ্গী বর্জন করা, ধূমপান পরিহার করা, ক্যান্সারের কোনো লক্ষণ লক্ষ্য করা মাত্রই যত দ্রুত সম্ভব গাইনি ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া এবং সঠিক স্থানে চিকিৎসা করানোর ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়।

news24bd.tv/health