পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য

পিতামাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য

পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য

মুহাম্মদ আবু সাঈদ 

অন্যান্য সম্পর্কের চেয়ে সন্তান এবং পিতা-মাতার সম্পর্ক একেবারেই আলাদা। কারণ পিতা-মাতার মাধ্যমেই সন্তান দুনিয়ায় আসে। সুযোগ পায় পৃথিবীর আলো বাতাস উপভোগের। ফলে জন্ম থেকেই একজন সন্তান পিতা-মাতার কাছে ঋণী কিন্তু পিতা-মাতা এমন‌ই স্নেহশীল সন্তানের প্রতি যে, কখনো এমন কোনো আচরণ করেন না যা দ্বারা সন্তান তাঁর ঋণের কথা মাথায় আনবে।

আমৃত্যু সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার যে স্নেহশীল আচরণ এবং ছায়ার মতো আশ্রয়দান তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনার্থে পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের কিছু নৈতিক কর্তব্য রয়েছে। যে ব্যাপারে ইসলামে রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা।

পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের আচরণ এবং কর্তব্য সম্পর্কে বিস্তারিত নির্দেশনা দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা। সূরা বনী ইসরাইলে এসেছে: “আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে; তাদের একজন অথবা উভয়েই তোমাদের জীবদ্দশায় বৃদ্ধ হলে হলে তাদের কোনো কাজে বা কথায় বিরক্ত হয়ে ‘উফ্’ পর্যন্ত বলবে না এবং তাদেরকে তিরষ্কার করবে না; বরং তাদের সাথে সম্মানসূচক উপাধিতে নম্র ভাষায় কথা বলবে।

তাঁদের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করবে বিনয়ীরূপে এবং দোয়া করবে— হে আমাদের রব! তাঁদের প্রতি রহমত নাজিল করুন যেভাবে তাঁরা আমার শৈশবে রহম করেছিলেন। ” (কুরআন শরীফ, ১৭:২৩-৪)
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের আচরণ সম্পর্কে দুটি আয়াতে এ বিষয়গুলো এসেছে সুস্পষ্টভাবে:

১. পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করা।

২. বৃদ্ধ অবস্থায় পিতা-মাতার কোনো কাজে বা কথায় বিরক্ত না হ‌য়ে ধৈর্যশিলতার পরিচয় দেওয়া।

৩. কোনোরূপ তিরষ্কার না করা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “কবীরা গুনাহসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় গুনাহ পিতা-মাতাকে লানত করা। ” (বুখারী শরীফ, ইফা, ৫৫৪৮)

৪. তাঁদের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করা।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য সম্পর্কে অধিক গুরুত্বের সঙ্গে উপদেশ দিয়েছেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিস শরীফে দেখা যায়, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করা হয়েছিল: আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় আমল কোনটি? জবাবে নবীজি নামাজের পরেই বলেছিলেন পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের সদাচরণের কথা। (প্রাগুক্ত, ৫০২) কেবল পিতা-মাতা নয়, পিতা-মাতার বন্ধুদের সাথেও সদাচরণ করাকে নবীজি উত্তম ইবাদত হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। (মুসলিম শরীফ, ইফা, ৬২৮৩)

পিতা-মাতার খেদমত সন্তানের জন্য অনেক বড় ইবাদত। নবীজির নিকট একজন সাহাবী জিহাদে অংশগ্রহণের জন্য অনুমতি চেয়েছিলেন। নবীজি জিজ্ঞেস করলেন: তোমার কি পিতা-মাতা আছে? তিনি বললেন: জি, আছে। নবীজি বললেন: তাহলে তাঁদের মাঝে জিহাদ করো, অর্থাৎ তাঁদের সেবা করো। (বুখারী শরীফ, ইফা, ২৪৩৫) পিতা-মাতার প্রতি খেদমতের মাধ্যমে একজন সন্তান জান্নাত অর্জন করতে পারে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন: “তার নাক ধুলায় মলীন হোক, তার নাক ধুলায় মলীন হোক, তার নাক ধুলায় মলীন হোক— যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতার উভয়কে অথবা তাদের একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেল, এরপরও সে জান্নাতে প্রবেশ করল না। ” (মুসলিম শরীফ, ইফা, ৬২৮০) অর্থাৎ, পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাবস্থায় পাওয়া সন্তানের জন্য জান্নাতে প্রবেশের গুরুত্বপূর্ণ ওসিলা।

পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে ভয়াবহ অপরাধ। পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের অবাধ্যতাকে নবীজি কবিরা গুনাহ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। (বুখারী শরীফ, ইফা, ২৪৭৭) আরেকটি হাদিসে এসেছে, আল্লাহ তায়ালা সন্তানের জন্য পিতা-মাতার নাফরমানিকে হারাম করেছেন। (প্রাগুক্ত, ৫৫৫০)

একজন মুসলিম হিসেবে পিতা-মাতার প্রতি অবাধ্যতা সন্তানের জন্য কল্পনাতেও আনা উচিত নয়। বরং, এমনভাবে খেদমত করতে হবে যেন পিতা-মাতার দোয়া সবসময় ঝরে পড়ে। কারণ, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তিন ব্যক্তির দোয়া নিঃসন্দেহে কবুল হয় পিতা-মাতা, মুসাফির এবং মজলুম। (আবু দাউদ, ইফা, ৩৭০) যদি পিতা-মাতা সন্তানের কোনো আচরণে দুঃখ পায় এবং বদদোয়া চলে আসে তাহলে কিন্তু সেই সন্তানের আর রক্ষা নেই।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের সদ্ব্যবহার এবং খেদমতকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছেন। উম্মত হিসেবে আমাদের উচিত আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের নির্দেশনা অনুযায়ী পিতা-মাতার প্রতি সর্বোচ্চ সদাচরণ ও খেদমতের আঞ্জাম দেওয়া। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে পিতা-মাতার খেদমত করার তৌফিক দান করুক। আমিন।

news24bd.tv/আইএএম

সম্পর্কিত খবর