যাত্রা শুরু করল বিশ্বের বৃহত্তম প্রমোদতরী 'আইকন অফ দ্য সিজ'

বিশ্বের বৃহত্তম প্রমোদতরী 'আইকন অফ দ্য সিজ'। ছবি: সংগৃহীত

যাত্রা শুরু করল বিশ্বের বৃহত্তম প্রমোদতরী 'আইকন অফ দ্য সিজ'

অনলাইন ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে থেকে যাত্রা শুরু করেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রমোদতরী ‘আইকন অব দ্য সিজ’। স্থানীয় সময় শনিবার (২৭ জানুয়ারি) সূর্যাস্তের আগে মায়ামি বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে জাহাজটি। গন্তব্য পূর্ব ও পশ্চিম ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ। প্রমোদতরীটি সাত দিনের সমুদ্রযাত্রার পর গন্তব্যে পৌঁছবে।

খবর সিবিএস নিউজের।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইকন অব দ্য সিজ লম্বায় প্রায় ১২০০ ফুট, যা বিশ্বখ্যাত জাহাজ টাইটানিকের চেয়ে পাঁচগুণ বড়। এর ওজন ২ লাখ ৫০ হাজার ৮০০ টন। জাহাজটি নির্মাণ করেছে রয়্যাল ক্যারিবিয়ান গ্রুপ।

প্রমোদতরীর সবচেয়ে উপরের ডেকে আছে ৪০টির বেশি বার, রেস্তোরাঁ, লাউঞ্জ ও বিনোদোনস্থল। বিশাল এই তরীতে থাকতে পারবেন ৭ হাজার ৬০০ জন যাত্রী। ২ হাজার ৩৫০ জন ক্রু সদস্যের পৃথকভাবে থাকার ব্যবস্থা আছে।

প্রমোদতরীর সামনের দিকে আছে 'অ্যাকোয়াডোম'। সেখানে দেখা যাবে জলপ্রপাত। আরও আছে পাঁচ ডেক উঁচু ও খোলা সেন্ট্রাল পার্ক। তাতে আছে এক সাঁতারুর ভাস্কর্য এবং প্রচুর গাছপালা।

'থ্রিল আইল্যান্ড'-নামে বিশালাকার ওয়াটার পার্কও আছে এ প্রমোদতরীতে। 'সার্ফসাইড' নামে একটি পারিবারিক এলাকা আছে। সরাসরি সমুদ্রের দৃশ্য দেখার জন্য আছে 'রয়্যাল প্রমেনেড'। এতে ছয়টি ওয়াটার স্লাইড, সাতটি সুইমিংপুল ও ৯টি বিশেষ ধরনের পুল থাকছে। এমনকি এতে রয়েছে থিম পার্ক, কৃত্রিম বিচ। পানাহার ও আমোদপ্রমোদের সব ব্যবস্থা তো থাকছেই।

বিশ্বের বৃহত্তম প্রমোদতরী 'আইকন অফ দ্য সিজ'

বিশাল এই জাহাজে রয়েছে ২৮ ধরনের কেবিন। এদের মধ্যে ৮২ শতাংশ ঘরে ৩ থেকে ৪ জন মানুষ থাকতে পারবেন। এছাড়া ব্যালকনি রয়েছে ৭০ শতাংশ কেবিনে। অনেকে আবার পরিবার নিয়ে এই ইতিহাসের সাক্ষী হতে চাইবেন। তাদের কথা মাথায় রেখে আলাদা সুযোগ-সুবিধা রেখেছে রয়্যাল ক্যারিবিয়ান গ্রুপ।

২০২২ সালের এপ্রিলে ফিনল্যান্ডের মেয়ার তুর্কু শিপইয়ার্ডে এই প্রমোদতরী তৈরির করার কাজ শুরু হয়। সেখান থেকেই এর ট্রায়াল রান হয়েছে। সেই পরীক্ষায় কয়েক শো মাইল পথ ভ্রমণ করেছে আইকন অব দ্য সিজ। গত বছরের শেষ দিকে আরেকটি ট্রায়াল রান হয়। জাহাজটি বানাতে খরচ হয়েছে ২০০ কোটি ডলার।

এতদিন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রমোদতরী ছিল রয়্যাল ক্যারিবিয়ানের ‘ওয়ান্ডার অব দ্য সিজ’। সেটিকে পেছনে ফেলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রমোদতরী হলো আইকন অব দ্য সিজ।

যে পথে চলবে জাহাজটি:

মায়ামি থেকে পশ্চিম ক্যারিবিয়ান পর্যন্ত চলবে এই প্রমোদতরী। ক্যারিবিয়ান সাগরের পূর্ব ও পশ্চিম পথ ধরে এক সপ্তাহের সফরে থাকবে এটি। এই সাত রাতের মধ্যে এক রাতে বাহামায় রয়্যাল ক্যারিবিয়ান সংস্থার একটি দ্বীপে অতিথিদের নিয়ে যাওয়া হবে।

আইকন অব দ্য সিজে চড়ার খরচ কত?
 
রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনালসের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, এ বছরের শুরুতে প্রমোদতরীটির প্রথম যাত্রায় জনপ্রতি খরচ হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ ডলার থেকে ২ হাজার ২০০ ডলারের কাছাকাছি।

২০২২ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে দ্য আইকন অফ দ্য সিজ-এর টিকিট বুকিং। তখন মাথাপিছু টিকিটের দাম ছিল ১ হাজার ২৫৯ ডলার। এক বছরের ব্যবধানে সেই খরচ বেশ খানিকটা বেড়েছে। বিলাসবহুল এই জাহাজে বর্তমানে কক্ষ ভাড়া নিয়ে থাকার সবচেয়ে সস্তা টিকিটের দামই ১ হাজার ৭৫৬ ডলার।

মিথেন শঙ্কা:

বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রমোদতরী ঘিরে তৈরি হয়েছে একটি শঙ্কা। এর নাম মিথেন শঙ্কা। পরিবেশবাদীরা সতর্ক করে বলেছেন, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) চালিত এই জাহাজ বাতাসে ক্ষতিকারক মিথেন গ্যাস নির্গমন করবে।

ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অন ক্লিন ট্রান্সপোর্টেশনের (আইসিসিটি) মেরিন বিভাগের পরিচালক ব্রায়ান কমার বলেছেন, এটি ভুল পথে একটি পদক্ষেপ। আমাদের অনুমান হলো সামুদ্রিক জ্বালানি হিসেবে এলএনজি ব্যবহার করলে প্রচলিত তেলের তুলনায় ১২০ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হয়।

আর মেরিন ফুয়েলের তুলনায় এলএনজি অনেক পরিশুদ্ধভাবে পুড়লেও মিথেন নিঃসরনের বড় ধরনের ঝুঁকি আছে। আর শক্তিশালী এই গ্রিনহাউজ গ্যাস মিথেন বায়ুমন্ডলে ২০ বছর ধরে কার্বনডাই অক্সাইডের চেয়ে ৮০ গুন বেশি তাপ ধরে রাখতে পারে। বিশ্ব উষ্ণায়ন কমাতে মিথেন গ্যাস নিঃসরণ কমানোকে বর্তমান সময়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসাবেই দেখা হচ্ছে।

news24bd.tv/DHL