কলকাতার বইমেলার স্মৃতি

কোলকাতার বইমেলায় বাংলাদেশে স্টলের সামনে লেখকসহ অন্যান্যরা--ছবি সংগৃহীত।

কলকাতার বইমেলার স্মৃতি

ফরিদ কবির

কলকাতা বইমেলায় একের পর এক অনুষ্ঠান চলতেই থাকে। প্রায় বছর পাঁচেক পর কলকাতা বইমেলায় গেলাম। লেখক-কবিবন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়া ও আড্ডা দেয়ার এর চাইতে ভালো উপলক্ষ আর হয় না। এবারও তাই হলো।

মৃদুল দাশগুপ্ত, গৌতম চৌধুরী, প্রসুন বন্দ্যোপাধ্যায়, সুবোধ সরকার, প্রবালকুমার বসু, প্রবুদ্ধ মিত্র, শামিম আহমেদ, মোস্তাক আহমেদ, তমাল রায়, তানিয়া চক্রবর্তী, ছাড়াও আড্ডা হলো বাংলাদেশের তুষার দাশ, জুয়েল মাজহার, আবদুর রব, জিললুর রহমান, শামীম রেজা, মেঘ অদিতি, ফারহানা রহমান, রিমঝিম আহমেদ, স্নিগ্ধা বাউল, ফরিদ ছিফাতুল্লাহ ও মনিরুজ্জামান মিন্টুর সঙ্গে। ফেরার পথে কিছুটা গল্প হলো সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের সঙ্গেও।

এবারের কলকাতা ভ্রমণে দুই বাংলার কয়েকজন অভিনয়শিল্পীর সঙ্গেও আড্ডা দিয়েছি। এদের একজন পূর্ব-পশ্চিম থিয়েটার গ্রুপের পরিচালক, অভিনেতা ও বাচিকশিল্পী সৌমিত্র মিত্র ও অভিনেতা সাইফুল ইসলাম এবং বাংলাদেশের জ্যোতিকা জ্যোতি।

বহুদিন পর দেখা হলো ঈশিতা ভাদুরী, চৈতালী চট্টোপাধ্যায়সহ আরো অনেকের সঙ্গে।

একদিন আড্ডা হলো কলকাতাস্থ বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনে সেখানকার প্রেসসচিব রঞ্জন সেনের আমন্ত্রণে। জ্যোতিকা জ্যোতি ও ফারহানাও অংশ নেন দ্বিপ্রাহরিক সে আড্ডায়। এ ছাড়া যোগ দিয়েছি চার-চারটি অনুষ্ঠানে। সৌমিত্র দার আমন্ত্রণে এসবিআই অডিটোরিয়ামে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও নবনীতা দেবসেনের স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি ছিলো সবচাইতে আলো ঝলমলে, যেখানে হাজির ছিলেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ও সুনীলপত্নী স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়। ছিলেন মুনমুন মিত্র, পশ্চিমবঙ্গ পাবলিশার্স গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় ও গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ও দে'জ-এর প্রকাশক সুধাংশুশেখর দে ও তাঁর পুত্র অপু দে। সেখানে অংশ নেন সুবোধ সরকার, পায়েল সেনগুপ্ত ও সেবন্তী ঘোষসহ আরো অনেকে।

এছাড়া, প্রেস কর্নারে প্রবাল কুমার বসুর 'যাপনচিত্র' ও তমাল রায়ের 'ঐহিক' আয়োজিত দুটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছি। এবার 'ঐহিক মৈত্রী সম্মাননা' পেয়েছেন শামীম রেজা। এছাড়া, 'শতজল ঝর্নার ধ্বনি'র পুনর্প্রকাশ অনুষ্ঠানেও অংশ নেয়ার সুযোগ হলো। ৩৫ বছর পর 'শতজল'-এর সেই সংকলনটির পুনর্প্রকাশ ঘটলো।

কলকাতায় আমার এবারের শেষ রাতটি ছিলো সবচাইতে আনন্দের। সৌমিত্র মিত্র ও মুনমুন মিত্র দম্পতির বাড়িতে আড্ডা ও নৈশভোজের রেশ থাকবে বহুদিন। সেখানে আমাদের আড্ডায় হাজির ছিলেন সাইফুল ইসলাম ও ফারহানা রহমানও।

কলকাতার নাট্যকর্মী সাইফুল ইসলামের কথা বিশেষ করেই বলতে হয়, তিনি আমাকে এয়ারপোর্ট থেকে আনা ও এয়ারপোর্টে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেই ক্ষান্ত হননি, কলকাতায় ঘোরাঘুরি ও কেনাকাটার জন্য একটি সুবিশাল গাড়িও ব্যবহারের জন্য দিয়েছেন। আমার জন্য প্রস্তুত রেখেছেন মোবাইলের একটি সীমও। তার আন্তরিক যত্নে মনেই হয়নি, আমি ভিনদেশে আছি।

এমন ভালোবাসা ও যত্ন আমি সব সময়ই পেয়ে চলেছি। সম্ভবত আমার অপরাপর ভাগ্য মন্দ হলেও বন্ধুভাগ্য আমার দারুণ! আর সেটা বাংলাদেশ ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গেও। এ জন্মে মানুষের যে পরিমাণ ভালোবাসা, স্নেহ ও সম্মান আমি পেলাম, তা মাথায় করে মরতে পারাও হবে আনন্দের! একজীবনে এর চাইতে বেশি আর কী লাগে! আমার তো আর কিছুর দরকার নেই। আর কিছু চাইও না। আর কিছুদিন বেঁচে থাকলে ভালো কিছু লিখতে চাই। ভালো কিছু কাজ করে যেতে চাই। ভালো কিছু বই পড়তে চাই।

news24bd.tv/ডিডি

সম্পর্কিত খবর