কুড়িগ্রামে রেলপথ সংস্কার কাজে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

রেলপথের উন্নয়নের নামে রেলের স্লোপ থেকে গর্ত করে নিম্নমানের মাটি উত্তোলন করে সেই মাটি ফেলা হচ্ছে রেলেই। ইনসেটে ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার আহসান হাবীব - নিউজ টোয়েন্টিফোর

কুড়িগ্রামে রেলপথ সংস্কার কাজে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

কুড়িগ্রাম, উলিপুর ও চিলমারী প্রতিনিধি

কুড়িগ্রামে রেলপথের দুইদিকের মাটি সংস্কারের নামে চলছে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি। এরফলে সরকারের কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ ভেস্তে যেতে বসেছে। রেলের স্লোপ থেকে গর্ত করে নিম্নমানের মাটি উত্তোলন করে সেই মাটি ফেলা হচ্ছে রেলেই। কমপেকশন ও কোনো স্থর বিন্যাস ছাড়াই মাটি ভরাট করার ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই আগের জায়গায় নেমে যাবে সেই মাটি।

ফলে এই কাজে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও ঠিকাদাররা লাভবান হলেও, রেলপথের কার্যত কোনো উন্নয়ন হবে না বলে ধারণা করছে স্থানীয়রা।

রেলের কন্ট্রাক্ট এগ্রিমেন্ট সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর থেকে চিলমারী উপজেলার রমনা বাজার পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার রেলপথের মাটি সংস্কারের দায়িত্ব পান ঢাকার বিশ্বাস কন্সট্রাকশন। ১ কোটি ৬৭ লাখ ২১ হাজার ৮২০ টাকার মাটির কাজে দূর থেকে পরিবেশগত বিপদজনক পদার্থ থেকে মুক্ত উন্নতমানের মাটি সংগ্রহ করে ফেলার চুক্তিপত্র সম্পাদন করা হয়।

কিন্তু মূল ঠিকাদার সাব ঠিকাদারের মাধ্যমে অনভিজ্ঞ শ্রমিক দিয়ে দিন হাজিরা হিসেবে দূর থেকে গুণগতমানের মাটি সংগ্রহ না করে রেলের স্লোপ থেকে মাটি কেটে সেই মাটি আবার ফেলছেন রেলেই।

টানা একমাস ধরে কোনো নিয়ম-কানুন ছাড়া ফেলা হচ্ছে নিম্নমানের মাটি। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীরা ফিল্ডে এসে অনিয়মগুলোর বিরুদ্ধে কোনো প্রতিকার না করে, উল্টো ঠিকাদারদের সঙ্গে খোশগল্প করে ফিরে যাচ্ছেন কর্মস্থলে।

মূলত দীর্ঘদিন ধরে চলছে এই অনিয়ম। দেখার যেন কেউ নেই। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কার্যত এলাকায় কোনো সাইনবোর্ড দেখা যায়নি। স্তর বিন্যাস ও কমপেকশন ছাড়াই চলছে মাটির কাজ।

উলিপুরের তবকপুর ইউনিয়নের মিয়াপাড়া গ্রামের সাবেক রেলকর্মচারী আমির উদ্দিন মিস্ত্রী (৭৫) জানান, কোনো বাছবিচার ছাড়াই এরা স্লোপের পাশে গর্ত করে মাটি সংগ্রহ করছে। এর ফলে কোথাও ভালো মাটি, কোথাও বা বালুমাটি কোনো কমপেকশন ছাড়াই ফেলছে। এই মাটি থাকবে না। বৃষ্টি হলেই ধ্বসে পড়বে। ওই গ্রামের মাঈদুল ইসলাম জানান, স্লোপের ডিজাইন তারা মানছেন না। খাড়া করে মাটি ফেলায় সে মাটি টিকবে না।

কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি রাজু মোস্তাফিজ জানান, আমরা প্রায়ই দেখি বন্যা হলেই চিলমারী রুটের রেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরকম কাজ হলে এই রেলপথ কখনো মানুষের উপকারে আসবে না। রেলের উন্নয়নে দুর্নীতিবাজ ঠিকাদার ও কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া উচিত। যাতে তারা অন্যায় করতে না পারে।

কুড়িগ্রাম সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব নীলু জানান, রেলপথ উন্নয়নের নামে এখানে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হচ্ছে। দেখভালেরও যেন কেউ নেই। ফলে সরকারের এই কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ কোনো সুফল বয়ে আনবে না।

লালমনিরহাট রেলওয়ের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার আহসান হাবীব তিনবার ওই ফিল্ডে পরিদর্শনে গেলেও তিনি সেটা অস্বীকার করে জানান, আমি দুই সপ্তাহ ধরে সেখানে ভিজিট করার সুযোগ পাইনি। কাজে কোনো সমস্যা থাকলে আমি ইনসপেকশন করে সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নিবো।

অনিয়ম নিয়ে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, আমরা জানতে পেরেছি রেলপথ সংস্কারের কাজে ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে। যাতে স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাজ হয় তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরবো।

news24bd.tv/SHS