গাজা যুদ্ধে চীনের কাছে যেভাবে হারবে যুক্তরাষ্ট্র

বাইডেন ও শি-ফাইল ফটো।

গাজা যুদ্ধে চীনের কাছে যেভাবে হারবে যুক্তরাষ্ট্র

অনলাইন ডেস্ক

গাজায় এ পর্যন্ত ২৬ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল হামাসকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়াটাকেই সফলতা বলে মনে করছে। হামাস তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারাটাকেই সফলতা বলে ভাবছে। এরকম যখন অবস্থা তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই যুক্তরাষ্ট্রকেও দায়ী করছে অনেকে।

কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক বরাবরই ভালো। কিন্তু বাধ্য হয়ে নিজেদের ‘নিরপেক্ষ’ প্রমাণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র –ইসরায়েলের ৭৫ বছরের সম্পর্কে এই প্রথম চার ব্যক্তির ওপর যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।  
এদিকে  ইরাক ও সিরিয়ায়ও হামলা করেছে যুক্তরাষ্ট গত শুক্রবার। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ মানুষ যুদ্ধ চায় না।
ফলে সামনে অনুষ্ঠিতব্য যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আগে জরিপে বাইডেনের জনপ্রিয়তা কমছে।  
এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার করা মামলায় ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস রায় দিয়েছেন যে গাজায় গণহত্যা ঠেকাতে ইসরায়েলকে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। এ রায় ইসরায়েলের জন্য অবশ্যই বড় একটা ধাক্কা। পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন ধরে রাখতে পারলেও এবং বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জোর দিয়ে ‘যুদ্ধ চলবে’ বলেছেন।  
ফলে মধ্যপ্রাচ্যকে কেন্ত্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে। এই দুইদেশের অবনতির ফলে লাভ হবে বেশি চীনের।  
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সম্পৃক্ততা কমিয়ে আনবেন। কিন্তু বাস্তবে পারেননি।  
এ ব্যাপারে লন্ডনের কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক
খ্রিস্টোফার ফিলিপস আরব নিউজে তার কিছু মতামত তুলে ধরেছেন। তিনি এক্ষেত্রে বেশ কিছু ঘটনার উদাহরণ টেনেছেন যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত।  
তিনি বলছেন, যেমন দ্য নিউ ইয়র্কারের মতে, ওবামা প্রশাসনের মধ্যে বাইডেন ছিলেন মার্কিন সেনাদের ব্যবহারের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি সংশয়বাদী। মধ্যপ্রাচ্যে সেনা পাঠানো, লিবিয়া ও সিরিয়ায় অভিযান, এমনকি ওসামা বিন লাদেনের হত্যা অভিযানের ব্যাপারেও বাইডেন ছিলেন সংশয়ী।  
কিন্তু বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর যে বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন :
.তাঁর কৌশলনীতিতে মধ্যপ্রাচ্য যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকারে নেই।  
২.এশিয়া ও চীন (ওবামা ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে শুরু হয়েছিল) তাঁর অগ্রাধিকারে রয়েছে।
৩. ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়া আগ্রাসন শুরু করলে সেই অঞ্চলও বাইডেনের অগ্রাধিকারে চলে আসে।  
৪.আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার এবং সিরিয়া ও ইরাক থেকে সেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারে যে আলোচনা চলছে, সেটা যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলনীতি পরিবর্তনের বিষয়টিকেই স্পষ্ট করে প্রকাশ করে।
কিন্তু ৭ অক্টোবরের পর ইসরায়েলকে সমর্থন জোগাতে গিয়ে বাইডেন প্রশাসনের সেই দীর্ঘমেয়াদি অগ্রাধিকার এখন চাপা পড়তে বসেছে।  
কেন লাভবান হচ্ছে চীন:
এগুলোর ফলে সারাবিশ্বেই একটা অস্থিরতা চলছে। গাজাসহ মধ্যপ্রাচ্য না শুধু , ইউক্রেনও হতাশ অনেকটা। এদিকে চীন এদেশগুলোর সঙ্গে কোনো ঝামেলায় জড়াচ্ছে না। ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ফিলিস্তিদের পক্ষে কথা বলেছে।  ফলে চীনের রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা বাড়ছে।  
২০২৩ সালের মে মাসে জি-৭ সম্মেলনে বাইডেন খুব সাফল্যের সঙ্গে সদস্যদের ডি-রিস্ক বা ঝুঁকিপূর্ণ খাতে চীনে বিনিয়োগ না করার ব্যাপারে সম্মতি আদায় করেছিলেন। কিন্তু গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ায় পশ্চিমা মিত্ররা যেন ইসরায়েলে সমর্থন দিয়ে যায়, সেদিকে মূল মনোযোগ দিতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে।
এ সবকিছুই পশ্চিমা বিশ্বের ও বৈশ্বিক দক্ষিণের অনেক লেখককে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ভন্ডামির অভিযোগ আনতে সুযোগ করে দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আইনভিত্তিক যে বিশ্ব ব্যবস্থা, তার আইনি ভিত্তিটাই নড়বড়ে হয়ে পড়ছে। তার কারণ হলো, যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান একটি মিত্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইন্টারন্যাশাল কোর্ট অব জাস্টিস রায় দিয়েছেন।  
এতে চীন আবারও লাভবান হলো। অনেক বছর ধরে বেইজিং বৈশ্বিক নেতৃত্ব হিসেবে ওয়াশিংটনের কর্তৃত্বের ওপর চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আসছে।  
২০২৩ সালে জোহানেসবার্গ সম্মেলনে ব্রিকস সম্প্রসারণের ঘোষণা দেওয়া হয়। সে সময় চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং বলেছিলেন, ব্রিকসের সম্প্রসারণ অপশ্চিমা বিশ্বের স্বর আরও জোরালো করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য খর্ব করবে।
বৈশ্বিক দক্ষিণের কাছে চীন বারবার এই বয়ান হাজির করছে যে যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বাস করা যায় না। আর বৈশ্বিক দক্ষিণের একটি দেশ হিসেবে চীন অন্যান্য দেশকে নিয়ে আরও ভালো জোট গড়ে তুলবে। এ উদ্দেশ্যে এরই মধ্যে আফ্রিকার সাব-সাহারা, পূর্ব এশিয়া এবং ইদানীং মধ্যপ্রাচ্যে চীন শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। ফলে একইভাবে গাজা যুদ্ধেও চীনের লাভ হচ্ছে বেশি। এমন একটা সময় আসবে যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো চীনের দিকে ঝুঁকবে।  
চীনের নেতারা যে বিবৃতি দিচ্ছেন, সেখানে ইসরায়েলের আগ্রাসনের নিন্দা জানানো হচ্ছে এবং এ থেকে বিরত থাকার আহ্বান থাকছে। এর ফলে বন্ধু হিসেবে চীনই এগিয়ে আসছে।
ব্যবসা ও  সমরাস্ত্রের খাতে চীন ভালো অবস্থানে আছে। হয়তো গাজা যুদ্ধের ভেতর দিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের একচেটিয়া মোড়লগিরির দিন শেষ করবে চীন।  

news24bd.tv/ডিডি