নিয়োগ পরীক্ষায় পাসের চুক্তি, দুই কনস্টেবল ও এক এএসআই গ্রেপ্তার

নিয়োগ পরীক্ষায় পাসের চুক্তি, দুই কনস্টেবল ও এক এএসআই গ্রেপ্তার

নিয়োগ পরীক্ষায় পাসের চুক্তি, দুই কনস্টেবল ও এক এএসআই গ্রেপ্তার

অনলাইন ডেস্ক

চাকরির পরীক্ষায় পাস করানোর চক্রে জড়িয়ে পড়েছিলেন রাজশাহী ও দিনাজপুরের তিনজন পুলিশ সদস্য। টের পেয়ে পুলিশই তাঁদের গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের মধ্যে দুজন পুলিশের কনস্টেবল, অপরজন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই)।  

আজ শনিবার সন্ধ্যায় তাঁদের বিরুদ্ধে রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানায় একটি মামলা হয়েছে।

পরে তিনজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।  

গ্রেপ্তার তিনজন হলেন—পুলিশের এএসআই গোলাম রাব্বানী (৩৩), কনস্টেবল আবদুর রহমান (৩২) ও শাহরিয়ার পারভেজ শিমুল (৩১)। শাহরিয়ার পারভেজের বাড়ি রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার হাজরাপাড়া গ্রামে। আবদুর রহমানের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার যাদুপুরে।

আর গোলাম রাব্বানীর বাড়ি রংপুরের পীরগাছা উপজেলার অনন্তরাম গ্রামে।  

আবদুর রহমান ও শাহরিয়ার পারভেজ শিমুল রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) সদর দপ্তরে কর্মরত ছিলেন। এএসআই গোলাম রাব্বানী কর্মরত ছিলেন দিনাজপুরের পার্বতীপুর থানায়। তিনিও আগে পুলিশ কনস্টেবল ছিলেন। তখন ছিলেন আরএমপিতে। পরে পদোন্নতি পেয়ে এএসআই হন।  

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই পরীক্ষার আগে একটি প্রতারকচক্রের সঙ্গে পুলিশের এই সদস্যরা ১৫–২০ জন চাকরিপ্রার্থীকে পাস করিয়ে দেওয়ার চুক্তি করেন। এ জন্য পরীক্ষার্থীদের প্রত্যেককে খুবই ছোট আকারের ইয়ারফোন সরবরাহ করেন। এই ইয়ারফোনের মাধ্যমে বাইরে থেকে পরীক্ষার্থীকে প্রশ্নের সব উত্তর বলে দেওয়ার কথা ছিল। এ জন্য পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা করে চুক্তি হয়। পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছিল চেক এবং স্ট্যাম্প। পুলিশের অভিযানে কিছু স্ট্যাম্প, একটি ১০ লাখ টাকার চেক এবং ১৪টি গোপন ডিভাইস উদ্ধার করা হয়েছে।  

পুলিশ জানিয়েছে, পরীক্ষার আগের রাতে প্রতারকচক্রের সঙ্গে এই পুলিশ সদস্যদের এমন তৎপরতার বিষয়ে জানতে পেরে প্রথমেই আরএমপি সদর দপ্তরের কম্পিউটার অপারেটর শাহরিয়ার পারভেজ শিমুল ও আবদুর রহমানকে আটক করে আরএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁদের নগর ডিবি পুলিশের কার্যালয়েই রাখা হয়। তাঁদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে গতকাল শুক্রবার রাতে দিনাজপুরের পার্বতীপুর থানা থেকে এএসআই গোলাম রাব্বানীকে আটক করা হয়। এরপর তাঁকে আরএমপির ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়।  

পরে কারিমা খাতুন (৩০) নামের এক পরীক্ষার্থী রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় মামলা করেন। মামলায় গ্রেপ্তার তিন পুলিশ সদস্য ছাড়াও মেহেদী হাসান (৩৭) ও মকলেসুর রহমান আপন (৪৮) নামের দুজনকে আসামি করা হয়েছে। মকলেসুরের ঠিকানা অজ্ঞাত বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। আর মেহেদী হাসানের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার পূর্ব দুর্গাপুর গ্রামে। তাঁরা পলাতক। এ মামলায় অজ্ঞাত আরও ৫–৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।  

চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে এ মামলা করা হয়েছে। মামলার বাদী কারিমা খাতুনের বাড়ি রাজশাহীর তানোর উপজেলার জুমারপাড়া গ্রামে।  

যোগাযোগ করা হলে কারিমা খাতুন এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত হয়েছেন রাজপাড়া থানার এসআই মো. নুরন্নবী হোসেন। তিনিও কথা বলতে চাননি।  

আরএমপির মুখপাত্র জামিরুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তার দুই কনস্টেবল ও এক এএসআইকে আজ সন্ধ্যায় আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।  

এ বিষয়ে দিনাজপুরের পার্বতীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চিত্তরঞ্জন রায় বলেন, কথাবার্তা বলার জন্য আরএমপির ডিবি পুলিশ এএসআই গোলাম রাব্বানীকে নিয়ে গেছে বলে তিনি জানেন। এএসআই গোলাম রাব্বানী কোনো অপরাধ করেছেন কি না তিনি জানেন না। তাঁকে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টিও তিনি জানেন না।  

আজ রাতে আরএমপির আদালত পরিদর্শক আবদুর রফিক জানান, রাতে আসামিদের আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতে আসামিদের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে রিমান্ডেরও আবেদন করা হয়নি।

news24bd.tv/aa