শিশুর স্থূলতা বা মুটিয়ে যাওয়া রোধে 

ডা. আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার

শিশুর স্থূলতা বা মুটিয়ে যাওয়া রোধে 

ডা. আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার 

মা-বাবা বা অভিভাবকদের সহজাত চিন্তা-ভাবনা হলো, তাঁদের সন্তান যত নাদুসনুদুস হবে, সে তত সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে। অথচ ধারণাটা ভুল। কেননা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত ওজন নানা শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। একে বলে ‘চাইল্ডহুড ওবেসিটি’ বা শিশুদের স্থূল হয়ে যাওয়া।

বোঝার উপায়
অনেক অভিভাবকই বুঝতে পারেন না তাঁদের সন্তান কী আসলেই মুটিয়ে যাচ্ছে, না ঠিক আছে। এটি বোঝার কিছু নিয়ম আছে। যেমন—

► নিয়মিত সন্তানের দৈহিক ওজন মাপুন। এ জন্য ঘরেই রাখতে পারেন ওজন মাপার যন্ত্র।

প্রতিটি বয়সের একটি কাঙ্ক্ষিত ওজন আছে বা ওজন চার্ট রয়েছে। নেটে সার্চ করলেও ওয়েট চার্ট পেয়ে যাবেন। যদি কারোর ওজন চার্টে দেওয়া নির্দিষ্ট পরিমাপ থেকে ২০ শতাংশ বেশি হয়, তাহলে বুঝতে হবে শিশুটির ওবেসিটি বা মুটিয়ে যাওয়ার সমস্যা রয়েছে।
► বেসাল মেটাবলিক পার্সেন্টাইল চার্ট ব্যবহার করেও ওবেসিটি মাপা যায়। শিশুর মেটাবলিক ইনডেক্স যদি ৯৫ পার্সেন্টাইলের ওপরে হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে সে ওবিস গ্রুপে আছে। তখন তার বিষয়ে যথেষ্ট সতর্ক হতে হবে।
► দেহের উচ্চতা ও ওজনের আনুপাতিক হার পরিমাপক বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) দিয়ে বোঝা যায় কেউ মাত্রাধিক ওজনের কি না।

কারণ
শিশুদের ওজন বেড়ে যাওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে কিছু হলো—
► পড়াশোনার প্রচুর চাপে থাকা অথচ খেলাধুলা, শরীরচর্চা বা ছোটাছুটি না করা।
► সারাক্ষণ ইন্টারনেটে থাকা। কার্টুন, গেমস ইত্যাদি খেলা।
► মাত্রাতিরিক্ত টেলিভিশন দেখা।
► শ্লথ, আয়েশি বা শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় জীবনযাপন।
► চিপস, পিত্জা, বার্গার, ফ্রেঞ্চফ্রাই, কোমল পানীয়, পপকর্নের মতো মুখরোচক খাবার বেশি বেশি গ্রহণ।
► অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস।
► অপর্যাপ্ত ঘুম।
► শিশুর স্বাস্থ্য ভালো হবে এই ভেবে বেশি বেশি খাবার খাওয়ানো।
► ওষুধের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার।
► কিছু ক্ষেত্রে হরমোনের সমস্যা।

ওবেসিটি হলে যা ঘটে
► ক্লান্তি, শারীরিক অবসাদ, ঝিমুনি ভাব, অতিরিক্ত ঘুমানো অথবা নিদ্রাহীনতা।
► হার্টের অসুখ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি, লিভারের সমস্যা, হাঁটুর সমস্যা, কোমরে যন্ত্রণা, হাড় ক্ষয়, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি হওয়ার আশঙ্কা।
► অতিরিক্ত ওজনের ফলে শিশুটি সহজেই ক্লান্ত ও উদ্যমহীন হয়ে পড়ে।
► ওবেসিটির সঙ্গে সুগার, রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। একে বলে ‘মেটাবলিক সিনড্রোম’। এর জন্য কয়েক ধরনের ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।

ওবেসিটি থেকে পরিত্রানের উপায়
► ওবেসিটি থেকে বাঁচার অন্যতম উপায় হলো লাইফস্টাইল বা জীবনধারণের পরিবর্তন করা।
► জন্মের পর ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে শুধু মায়ের দুধ খাওয়ান। এতে মুটিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।
 শিশুকে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে উৎসাহিত করুন। সুষম খাদ্যের ওপর নজর দিন। খেয়াল রাখবেন, খাদ্যে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল যেন যথেষ্ট পরিমাণ থাকে।
► ফাস্ট ফুড, জাংক ফুড খাওয়ার অভ্যাস কমান; শাক-সবজি, ফলমূল বেশি খাওয়ান।
► সুন্দর পরিবেশনের মাধ্যমে খেতে দিন। এতে বাইরের খাবারের প্রতি আকর্ষণ কমে যায়।
► টিভি দেখে খাওয়ার অভ্যাস বন্ধ করান।
► ঘরে বসে গেমস খেলা নয়, বরং প্রত্যেক শিশুকে আউটডোর গেমস খেলতে উৎসাহ দিন।
► বেশি ওজনধারী শিশুদের প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করান।
► মিষ্টি পানীয় বা খাবার কমিয়ে দিতে হবে। পিপাসা পেলে শিশুকে বেশি করে পানি পান করান।
► ভালো কোনো হরমোন বিশেষজ্ঞের অধীনে অতিরিক্ত ওজনের শিশুর চিকিৎসা করান।

লেখক : ডা. আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার, বিভাগীয় প্রধান, শিশু কার্ডিওলজি বিভাগ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (এনআইসিভিডি)।

news24bd.tv/health