রফিক বাহিনীর তাণ্ডবে রক্তাক্ত রূপগঞ্জের নাওড়া

আবারও রফিক বাহিনীর তাণ্ডবে রক্তাক্ত নাওড়া

রফিক বাহিনীর তাণ্ডবে রক্তাক্ত রূপগঞ্জের নাওড়া

► ৮ জন ছররা গুলিবিদ্ধসহ আহত ১৬ 

► আণ্ডা রফিকের ভাই মিজানের নেতৃত্বে প্রকাশ্যে ছোড়া হয় গুলি, করা হয় হামলা 

► প্রাচীর ভেঙে বাড়ির ভেতরে হামলা, আহত তিন নারী 

► ঘণ্টাব্যাপী হামলায় সন্ত্রাসীদের সহযোগিতার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে

অনলাইন ডেস্ক

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার নাওড়া গ্রামে নিরীহ মানুষের ওপর আবারও হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এতে আটজন গুলিবিদ্ধসহ মোট ১৬ জন আহত হয়েছেন। সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর আড়াইটার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এর আগে ২৯ জানুয়ারি রফিক বাহিনীর হামলায় আটজন ছররা গুলিবিদ্ধ হন।

ওইসময় নারী-শিশুসহ ১৩ জন আহত হন। আণ্ডা রফিকের ভাই মিজানের নেতৃত্বে প্রকাশ্যে গুলি ছোড়া হয় এবং হামলা চালানো হয় বলে গুলিবিদ্ধরা অভিযোগ করেন।

স্থানীয়রা বলছেন, জমি দখলের উদ্দেশ্যে রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান ও কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলামের পালিত ৬০ থেকে ৭০ জন সন্ত্রাসীর সশস্ত্র বাহিনী এ হামলা চালিয়েছে। কায়েতপাড়ার ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নাওড়া গ্রামের হাজী মোতালেব ভূঁইয়ার বাড়িতে প্রথমে হামলার ঘটনা ঘটে।

যা পরে পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে, হাজী মোতালেব ভূঁইয়ার বাড়িতে হামলার পর বিকালে তার ছেলে মোশারফ হোসেনের গাড়িতে হামলা করে সন্ত্রাসীরা। এ সময় তার গাড়িতে গুলি চালায় তারা।  

এ প্রসঙ্গে গাড়িতে গুলির দাগ দেখিয়ে মোশারফ হোসেন বলেন, পূর্বাচলের ৩০০ ফিট রাস্তা দিয়ে কুড়িলের দিকে যাচ্ছিলাম। তখন রফিকের ছোট ভাই মিজানের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আমার গাড়িতে গুলি চালায়। গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আল্লাহর রহমতে আমার কিছু হয়নি।

জানা যায়, বাড়িতে হামলার ঘটনায় হাজী মোতালেব ভূঁইয়ার দুই ছেলে আনোয়ার হোসেন ও সাখাওয়াত হোসেনসহ আটজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ অন্যরা হলেন- ওয়াসিম প্রধান, রিফাত প্রধান, পুলক প্রধান, আব্দুস সোবহান প্রধান, রুবেল হোসেন ও মোহাম্মদ শামীম। এ ছাড়াও দেশীয় অস্ত্র, ইটের আঘাতে আহত হয়েছে একই গ্রামের মো. সাগর, আব্দুল মান্নান, মোহাম্মাদ রিফাত, কবির হোসেন, জুলহাজ উদ্দিন, শামীম হোসেন, মোক্তার মিয়া ও মো. সোবাহান।

হামলার সময় বেশকিছু বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। এ সময় বাড়ির প্রাচীর ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ঘরের মালামাল লুট করা হয়। ঘণ্টাব্যাপী এই হামলায় বেশ তিন নারীও আহত হন। তারা হচ্ছেন- একই গ্রামের জেসমিন আরা, নাসরিন আরা ও শেফালী বেগম। হামলা শিকার এই তিন নারী স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

গুলিবিদ্ধ রিফাত প্রধান রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। আহতদের অন্যন্যারা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হলে হামলার শিকার হওয়ার আশঙ্কায় স্থানীয় কিছু ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।  

সরেজমিনে গেলে ভুক্তভোগীরা জানান, সোমবার বেলা আড়াইটার দিকে রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম সহযোগী একাধিক মামলার আসামি সশস্ত্র সন্ত্রাসী মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আওয়ামী লীগ নেতা মোতালেব ভূঁইয়ার বাড়িতে হাজির হয়। এ সময় সন্ত্রাসীদের হাতে দেশি-বিদেশি পিস্তল, রামদা, চাইনিজ কুড়ালসহ ধারাল অস্ত্র ছিল। আড়াইটার দিকে সন্ত্রাসীরা সেখানে হাজির হয়েই অতর্কিত হামলা করে। এ সময় তারা বাড়িঘর দখলের চেষ্টা চালায়। এতে ব্যর্থ হয়ে তারা গুলি চালায়। এতে বাড়ির সদস্য আনোয়ার হোসেন (৩৮), সাখাওয়াত হোসেন (৩৭), ওয়াসিম প্রধান (৪১), রিফাত প্রধান (২৭), পুলক প্রধান (৩০), আব্দুস সোবহান প্রধান (২৮), রুবেল  হোসেন (২৮) ও মোহাম্মদ শামীম (২৭) গুলিবিদ্ধ হন।

মোতালেব হোসেনের ছেলে আনোয়ার হোসেন জানান, হামলাকারীদের মধ্যে ছিল রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলামের সহযোগী সন্ত্রাসী মাহফুজুর রহমান, মো. ফয়সাল আহমেদ, সাব্বির হোসেন, মিনারুল ইসলাম, মো. রুবেল, মোজাম্মেল হোসেন, মোহাম্মদ আরিফ, মাহাতিম হোসেন, নাজমুল হোসেন, আব্দুর রহমান, মন্নান, জাহাঙ্গীর হোসেন, শিপলু হোসেন ও আলাদিন হোসেন আলালসহ ৬০ থেকে ৭০ জন সন্ত্রাসী। তাদের অধিকাংশের হাতে ছিল দেশি-বিদেশি পিস্তল, রামদা, চাইনিজ কুড়ালসহ ধারাল অস্ত্র।

হামলার শিকার ওয়াসিম প্রধান বলেন, আমরা দুপুরে বাড়িতে খানাপিনা করছিলাম। এ সময় সশস্ত্র সন্ত্রাসী আমাদের ওপর হামলে পড়ে। আমরা কোনো কিছু বুঝে উঠতে না পেরে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করি। বাধ্য হয়ে বাড়ির ভেতরে আশ্রয় নিলে তারা দেয়াল ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে এবং গুলি চালায়।

তিনি বলেন, হামলার সময় সন্ত্রাসীদের পেছনে পুলিশও ছিল। ঘণ্টাব্যাপী  হামলা শেষে সন্ত্রাসীরা নিরাপদে সরে গেলে পুলিশ সামনে আসে। প্রকাশ্যে পুলিশের সামনেই এ হামলার ঘটনা ঘটে। আমরা বারবার পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছি, তারা তাতে কর্ণপাত করেনি।  

হামলার শিকার নাওড়া গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান নিরব জানান, আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়েছে। রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম তার ক্যাডারদের দিয়ে সশস্ত্র হামলা করেছে। এর আগেও গত ২৯ জানুয়ারি বেলা ১১টার দিকে এবং একই দিন বিকেল ৫টার দিকে দুই দফা হামলা করা হয়। সেই ঘটনায় আমরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সহযোগিতা পাইনি।  

তিনি বলেন, ৩০ জানুয়ারি আমরা থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। এখন আবারও হামলা হয়েছে। পুলিশের নিস্ক্রিয়তায় সন্ত্রাসীরা বারবার আমাদের ওপর হামলা করেছে, লুটপাট করছে।

এ বিষয়ে জানতে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহার মুঠোফোনে বারবার কল করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

news24bd.tv/desk