মিয়ানমার সীমান্তে কেন সংঘাত, বিবদমান পক্ষ কারা?

সশস্ত্র বাহিনীগুলো সম্প্রতি বড় ধরনের সাফল্য অর্জন করেছে, ছবি : এএফপি।

মিয়ানমার সীমান্তে কেন সংঘাত, বিবদমান পক্ষ কারা?

অনলাইন প্রতিবেদক

মিয়ানমারে বাংলাদেশ সংলগ্ন সীমান্তে গত কয়েকদিন ধরেই চলছে তুমুল উত্তেজনা। দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর যুদ্ধ চলমান রয়েছে। তাদের অন্তর্বর্তী এ বিবাদের ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। দেশটি থেকে এখন পর্যন্ত ১১৭ সেনা সদস্য বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।

কেন এই সংঘাত?
মিয়ানমারের আভ্যন্তরীণ সংঘাত নতুন নয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই মিয়ানমারে বিভিন্ন ধরণের সশস্ত্র গোষ্ঠী গড়ে ওঠে। এদের বেশিরভাগই এলাকাভিত্তিক স্বাধীনতাকামী। জাতি ভিত্তিক এ সংঘর্ষে প্রত্যোক দল তাদের নিজ নিজ অঞ্চল স্বাধীন নিয়ন্ত্রণের জন্য লড়াই করছে।

১৯৬২ সাল থেকে মিয়ানমারে সেনা নিয়ন্ত্রণ শুরু হলেও প্রায় তিন বছর আগে ২০২১ সালে ফের ক্ষমতায় আসে সেনা নিয়ন্ত্রিত জান্তা সরকার। তবে গত বছরের অক্টোবরে এইসকল স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীগুলোর সাথে সেনা সরকারের সংঘাত উন্মুক্ত হতে শুরু করে।

মা ওয়াই, পিপল লিবারেশন আর্মিতে যোগ দেয়ার আগে দুবাইয়ে একজন শেফ হিসেবে কাজ করতেন, ছবি: এএফপি।

স্পেশাল অ্যাডভাইসরি কাউন্সিল ফর মিয়ানমার' নামে পরিচিত সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে জান্তা সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে মাত্র ১৭% ভূখণ্ডের উপর, ২৩% শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের দখলে রয়েছে ৫২ শতাংশের মতো ভূখণ্ড। তবে এই তথ্য স্পষ্ট নয়।

কতগুলো সশস্ত্র গোষ্ঠী রয়েছে মিয়ানমারে?
বিভিন্ন গণমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে মিয়ানমারে প্রায় ২০টির বেশি সশস্ত্র গোষ্ঠী রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আরাকান আর্মি (এএ), কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (কেআইএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) এবং তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ)। ২০১৬ সালের নভেম্বরের শেষের দিকে চারটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী নিয়ে গঠিত হয় উত্তর জোট।

ভয়েস অব আমেরিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিগত ২০টি গোষ্ঠীর এক লাখ ৩৫ হাজার সদস্য রয়েছে। এছাড়া ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট-এনইউজি এর আওতায় পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের ৬৫ হাজার সদস্য, এবং সিভিল ডিসঅবিডিয়েন্ট মুভমেন্ট-এর অধীনে প্রায় দুই লাখের মতো কর্মী রয়েছে। যারা কমবেশি সেনা বিরোধী কার্যক্রমে লিপ্ত।

আরাকান আর্মির (এএ) সদস্য, ছবি: দ্যা রোহিঙ্গা পোস্ট।
আরাকান আর্মির (এএ) সদস্য, ছবি: দ্যা রোহিঙ্গা পোস্ট।

অন্যদিকে দেশটির সেনা সরকার মিন অং হ্লাইংয়ের রয়েছে প্রায় ৪ লাখের মতো সামরিক সদস্য রয়েছে। তন্মধ্যে সেনাসদস্য দেড় লাখের মতো। বিশেষজ্ঞদের মতে যেটা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো এবং সরকার বিরোধী অ্যালায়েন্সের কর্মীদের তুলনায় যথেষ্ট নয়।

সেনা সরকারের যত ক্ষয়ক্ষতি
বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবর থেকে এখনও পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি জান্তা সেনা নিহত হয়েছে বা আটক হয়েছে। এদের মধ্যে ১০ জন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রয়েছেন। প্রতিরোধ বাহিনী ৩০টির বেশি শহর দখলে নিয়েছে।

মিন অং হ্লাইং-এর বিরুদ্ধে রাস্তায় নামা এক বিক্ষোভকারী, ছবি: গেটি ইমেজ।

সবশেষ খবরে জানা গেছে, চলমান সংঘাতে গত তিন দিনে কয়েকটি সেনা ঘাঁটি দখলে নিয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো। এদিকে বিদ্রোহীদের সঙ্গে চলমান সংঘর্ষে প্রাণহানি এড়াতে দেশটির বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ১০৩ জন সশস্ত্র সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছে।

সোমবার রাতে বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম জানান, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে এখন পর্যন্ত দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির ১০৩ জন সদস্য অস্ত্রসহ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। বিজিবি তাদের নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

news24bd.tv/FA