টাঙ্গাইলের শাড়ী নিয়ে বিতর্কের অবসান হোক 

ফরিদা আখতার--সংগৃহীত ছবি।

টাঙ্গাইলের শাড়ী নিয়ে বিতর্কের অবসান হোক 

ফরিদা আখতার

চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি জানা গেল ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়  তাদের দেয়া পোস্ট সরিয়ে নিয়েছে। ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশের মানুষকে। কিন্তু এতে অত খুশির কিছু নেই। তারা জিআই দাবি তুলে তো নেয় নি।

বাংলাদেশের সরকার টাঙ্গাইল শাড়ীর স্বত্ব রক্ষার জন্য কি পদক্ষেপ নিচ্ছে তা আগে দেখতে হবে। আমাদের দায়িত্ব অনেক বেশি। আমাদের গাফিলতির কারণেই অন্যরা এসে আমাদের সম্পদ হাতিয়ে নেয়।  
প্রতিবাদ চলবে।

প্রথমে শোনা গেল, টাঙ্গাইলের শাড়ী নাকি পশ্চিম বঙ্গ থেকে ‘অরিজিনেট’ করেছে। এমন উদ্ভট ও হাস্যকার দাবী করেছে ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। বৃটিশ আমল থেকে এই জেলার বসাক এবং পরবর্তী কালে মুসলমান তাঁতীরা মিহি সুতার (১০০ কাউন্ট ও তার বেশী) সুক্ষ কাজের শাড়ী বুনতেন, এখনও বুনছেন। জমিদারদের জন্যে বোনা হত। টাঙ্গাইলের পাথরাইল বাজার থেকে বৃটিশ ব্যবসায়ীরা মিহি সুতার কাপড় নিয়ে যেতো। এখানে হিন্দু মুসলমান উভয়ে একসাথে মিলেই এই তাঁতশিল্প টিকিয়ে রেখেছেন। বংশ পরম্পরায় এই দক্ষতা চলে আসছে। টাঙ্গাইলের হাতের নকশার বিশেষ শাড়ীকে নকশী বুটি বলা হয়। তাছাড়া জ্যাকার্ড মেশিন দিয়ে নকশা করা জ্যাকার্ড শাড়ীও টাঙ্গাইলের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
টাঙ্গাইল সীমান্তের কোন জেলাও নয় যে পশ্চিম বঙ্গ এর অংশ হিশাবে দাবী করতে পারে। টাঙ্গাইলের একদিকে যমুনা নদী তার ওপারে সিরাজগঞ্জ আরেকদিকে ময়মনসিংহ, আরেকদিকে ঢাকা, মানিকগঞ্জ। পশ্চিমবঙ্গে যারা টাঙ্গাইলের শাড়ি বুনে তারা টাঙ্গাইল থেকে পশ্চিমবঙ্গে যাওয়া বসাক সম্প্রদায়। একটা সময় বিভিন্ন কারণে কিছু বসাক ফুলিয়া সমুদ্রগড় ধাত্রীগ্রাম নবদ্বীপ এসব অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। ভারত সরকার এ দক্ষ কারিগরদেরকে সহযোগিতা করার জন্য সমিতির মাধ্যমে টাঙ্গাইল শাড়ি নামে উৎপাদন এবং বাজারজাত করে তন্তুজ ও তন্তুশ্রীর মাধ্যমে। এই টুকুই শুধু তাদের ইতিহাস, তাও খুব বেশি দিনের নয়। টাংগাইল থেকে যাওয়া বসাকরা ভারতবর্ষে বিভিন্ন অঞ্চলে টাঙ্গাইলের মতো শাড়ি তৈরি করে টাঙ্গাইল শাড়ি নামে বিক্রি করেছে। তবে এখন ভারতবর্ষে যারা বসাক আছেন তারা আর শাড়ি বুনেন না। বাংলাদেশের টাঙ্গাইল শাড়ি প্রতি সপ্তাহে পশ্চিম বঙ্গে যায় ট্রাকে করে।
দুঃখের বিষয় হচ্ছে টাঙ্গাইলের তাঁত শিল্পীরা আমাদের সরকারের কোন সহযোগিতা পায় না। তারা অনেক কষ্টে তাদের এতো কষ্টের বোনা শাড়ী বিক্রি করতে হয়। ঢাকায় প্রবর্তনা ১৯৮৯ সাল থেকে টাঙ্গাইল শাড়ীর জন্যেই প্রতিষ্টিত হয়েছিল, এবং এখনও এই তাঁত শিল্পীদের সাথে সম্পর্ক রেখে চলেছে। এ ছাড়া টাঙ্গাইল শাড়ী কুটির টাঙ্গাইল শাড়ীকে ঢাকায় জনপ্রিয় করেছেন।
বাংলাদেশ সরকারের এ বিষয় অবিলম্বে প্রতিবাদ জানানো উচিত।

( লেখক:অধিকার বিষয়ক নেত্রী ও প্রবর্তনার অন্যতম কর্ণধার। )

news24bd.tv/ডিডি

সম্পর্কিত খবর