নাটোরে বাড়ির ছাদে বেদানা চাষ করে আলোচনায় এক আইনজীবী

নাটোর পৌর শহরের দক্ষিণ বড়গাছায় বাসার ছাদবাগানে আমদানিনির্ভর ফল বেদানা চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহিল বাকি তরিত নামে এক তরুন আইনজীবী।

নাটোরে বাড়ির ছাদে বেদানা চাষ করে আলোচনায় এক আইনজীবী

নাটোর প্রতিনিধি

বেদানা বা আনার খেতে কার না ভালো লাগে। ছোট থেকে বড় বেদানার প্রতি আকর্ষণ সবার। দানাদার এই ফলের বীজ মুখে দিলেই এর সুমিষ্ট রসে মন ভরে ওঠে। পুষ্টিগুণে ভরপুর স্বাস্থ্যসম্মত বলবর্ধক এই ফল রোগীদের পথ্য হিসেবে আদর্শ।

হর্টিকালচার বিভাগের তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ মৌসুমে দেশে ৩৮ হাজার ৩২৮ টন বেদানা আমদানি হয়েছে। যার আনুমানিক বাজার দর অন্তত ৮ হাজার কোটি টাকা। বাজারে এর বিপুল চাহিদা থাকলেও আবহাওয়াজনিত কারণে এই ফল আমাদের দেশে চাষ করা সম্ভব হয় না।

এবার নাটোর পৌর শহরের দক্ষিণ বড়গাছায় বাসার ছাদবাগানে আমদানিনির্ভর ফল বেদানা চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহিল বাকি তরিত নামে এক তরুন আইনজীবী।

মাত্র ৪০০ স্কয়ার ফিট আয়তনের ছাদে বছরে প্রায় ৩০০ কেজি উন্নত জাতের বেদানা উৎপাদন করে তিনি সাড়া ফেলেছেন।

শুরুটা শখের বসে হলেও সহজে বুদ্ধি খাটিয়ে ছাদবাগানে এই ফলের চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। অধিকাংশ গাছেই ঝুলতে দেখা গেছে টকটকে লাল বেদানা। দানাদার বেদানার রং, অতি রসালো এবং নরম বীজের কারণে বাজারে আমদানিকৃত বেদানার তুলনায় অনেকটা সুস্বাদু। ছাদবাগানে বিদেশি বেদানা-আনার দেখে মুগ্ধ এলাকাবাসী। ভালো ফল পাওয়ায় আশপাশের ছাদেও বাণিজ্যিকভাবে আবাদ করতে চান তিনি।

স্থানীয়রা অনেকেই বলছেন, আমাদের দেশের মাটিতে এবং ছাদের উপর বিদেশি বেদানা চাষ করা সম্ভব এটা জানা ছিলো না। এছাড়া বেদানাগুলো যেমন রসালো তেমন সুমিষ্ট। রীতিমত অনেকেই চারা সংগ্রহ করছেন এবং পরামর্শ নিচ্ছেন ওই আইনজীবীর কাছ থেকে।

নাটোরে অনেকেই বাড়ির ছাদে ছাদকৃষিতে মেতে উঠলেও প্রথমবারের মত বিভিন্ন প্রকার বেদানার চারা রোপন করে আলোচনায় উঠে এসেছেন ওই আইনজীবী।

আব্দুল্লাহিল বাকি তরিত বলেন, আমি মহামারি করোনার মধ্যে শুরু করি ছাদবাগান। শখের বসে বাড়ির ছাদে সবজির পাশাপাশি ফলের চাষ শুরু করি। বর্তমানে আমার ৫২টি গাছে বছরে ৫ থেকে ৬ কেজি বেদানা ধরছে। যা স্বাদে ও মানে আমদানি করা বেদানার চেয়ে কোন অংশে কম নয়। প্রথম বছর থেকেই ফল দিয়েছে এবং প্রতিটি বেদানা ৩০০-৩৫০ গ্রাম ওজনের হয়। ওইগুলো যেমন রসালো তেমন সুমিষ্ট।

আরও পড়ুন: কুমিল্লায় বাসের নিচে পিষ্ট দুই নারী নিহত

গাছগুলোর পরিচর্যায় মাটি, গোবর, খইল, সবজি, পচা পানি দিয়ে জৈব সার তৈরি করে ব্যবহার করা হয়। তবে একটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে গাছের গোড়ায় কোনো প্রকার পানি জমতে দেয়া যাবে না। নিস্কাশন ব্যবস্থা অবশ্যই ভালো থাকতে হবে বলে জানান তরিত।

কৃষি উদ্যোক্তা অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহিল বাকি তরিতের স্ত্রী তাসনিন সুলতানা বলেন, পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আমরা আত্মীয়-স্বজনদের দিতে পারছি। এতে করে তারাও খুশি হন।

কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্ষাকাল নেই এমন দেশে বেদানার আবাদ বেশি হয়। বাংলাদেশে বর্ষাকাল থাকায় মাটিতে রোপণ করে তেমন ভাল ফল পাওয়া যায় না। তবে বাড়ির ছাদে জিও ব্যাগ বা বড় টবে চাষ করা হলে বেদানার রয়েছে ব্যাপক সম্ভাবনা।

নাটোর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক ড. জাহাঙ্গীর ফিরোজ বলেন, নাটোরে বাসাবাড়ির ছাদগুলো কৃষিকাজের আওতায় আনার জন্য আমরা নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছি। আর বাড়ির ছাদে এসব ফল চাষ করে বাড়তি আয় করাও সম্ভব।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (হর্টিকালচার উইং) পরিচালক কে জে এম আব্দুল আউয়াল বলেন, এই ফল বাংলাদেশে সরাসরি মাটিতে চাষ করা যায় না। তবে বাড়ির ছাদে বড় টবে কিংবা ব্যাগে চাষ করা যায়। দেশে বেদানার চাহিদার পুরোটাই আমদানিনির্ভর। ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও থাইল্যান্ডসহ অন্তত সাতটি দেশ থেকে আসা বেদানার দামও থাকে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।

নাটোরে উঁচু ভবনগুলোতে সবজির পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে বেদানা চাষ করলে স্থানীয় পুষ্টি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করা সম্ভব বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

news24bd.tv/ab

এই রকম আরও টপিক