২৬ জনকে ফাঁসি দেওয়া জল্লাদ শাহজাহান জানালেন তার শেষ ইচ্ছার কথা 

শাহজাহানের লেখা বইয়ের কাভার--রকমারি ফাইল ছবি।

২৬ জনকে ফাঁসি দেওয়া জল্লাদ শাহজাহান জানালেন তার শেষ ইচ্ছার কথা 

অনলাইন ডেস্ক

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামি ও যুদ্ধাপরাধীসহ ২৬ জনকে ফাঁসি দেওয়া আলোচিত সেই ‘জল্লাদ’ শাহজাহান গতবছরের রোববার (১৮ জুন) কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান।  
এরমধ্যে তিনি একটি বই লেখেছেন। বইয়ের নাম, কেমন ছিলো জল্লাদ জীবন । হার্ডকাভারের এ বইটি রকমারি ডটকমে পাওয়া যাচ্ছে।

এ বইতে তিনি জল্লাদ জীবনের অনেক ঘটনা জানিয়েছেন।  কিভাবে জল্লাদের দায়িত্ব পেয়েছিলেন, কাকে কাকে ফাঁসি দিতে হয়েছে এসব তথ্য।
তিনি টিভি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ইন্টারভিউ দিয়ে বলছেন , মানুষকে অপরাধ না করতে। মাদক না নিতে।
তিনি একটি ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘জল্লাদ হওয়া মানে নিষ্ঠুর কিছু না। তিনি যেমন এখন জেলের বাইরে , এখন কি জেলে কার্যকর হচ্ছে না ? হচ্ছে। ফলে সরকারি নিয়মে কারাকর্তৃপক্ষের নির্দেশে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন মাত্র। এর বেশি কিছু নয়। ’
তিনি জানান, তিনিও কান্না করেন। আফসোস করেন। তার ইচ্ছা ঝীবনে একবার হলেও হ্বজ করার। তার টাকা নেই। চাকরি নেই। ব্যবসা নেই। কোনো হৃদয়বান যদি এগিয়ে এসে তাকে হ্বজ করার সুযোগ করে দেন ও কোনো কাজ করে খাওয়ার সুযোগ দেন তবে কৃতজ্ঞ থাকবেন।  
কারা সূত্রে জানা গেছে, টানা ৩২ বছর কারাভোগের পর মুক্তি পেয়েছেন তিনি। এই বইটি তিনি লেখেছেন মুলত, কিছু বিক্রি হলে যদি টাকা পান তাহলে তিনি খেয়েপড়ে বাঁচতে পারেন। খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বইতে জানান,  ‘জল্লাদ’ শাহজাহানের পুরো নাম শাহজাহান ভূঁইয়া। তিনি নরসিংদী জেলার পলাশ থানার ইছাখালী গ্রামের মৃত হাছেন আলীর ছেলে। ৭৩ বছর বয়সী শাহজাহান ব্যক্তিগত জীবনে অবিবাহিত । কারাগারে তার কয়েদি নম্বর ছিল ২৫৮৯/এ এবং মুক্তির আগ পর্যন্ত তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান জল্লাদ ছিলেন।
দীর্ঘ ৩২ বছরে ‘জল্লাদ’ শাহজাহান আলোচিত বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ৬ আসামি ও ৪ যুদ্ধাপরাধীসহ মোট ২৬ জনকে ফাঁসি দিয়েছেন।

কারা সূত্রে জানা যায়, শহীদ বুদ্ধিজীবী কন্যা শারমীন রীমা হত্যা মামলার আসামি মুনিরকে ১৯৯৩ সালে ফাঁসি দেন ‘জল্লাদ’ শাজাহান। বহুল আলোচিত ডেইজি হত্যা মামলার আসামি হাসানকে ১৯৯৭ সালে, এরশাদ শিকদারকে ২০০৪ সালে, জঙ্গি নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই ও আতাউর রহমান সানিকে ফাঁসি দিয়েছেন শাজাহান।
এদিকে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ৬ আসামি লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মেজর বজলুল হুদা, লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি) ও লে. কর্নেল এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার) ও ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদের ফাঁসিও দেন ‘জল্লাদ’ শাজাহান।
এছাড়া ৪ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসিও দিয়েছেন ‘জল্লাদ’ শাজাহান। মানবতাবিরোধী অপরাধী আবদুল কাদের মোল্লা, সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও মীর কাসেম আলীরও ফাঁসি দিয়েছেন তিনি।

শাহজাহানের মুক্তির সময় তার আত্মীয়স্বজন আসেনি। তবে তাকে নিতে চারজনকে আসতে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন রকি দেওয়ান ও আরেকজন নজরুল দেওয়ান। কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজনৈতিক মামলায় রকি দেওয়ানের সাথে শাহজাহানের পরিচয় হয়েছিল। তারা সেখানে মেঘনা ভবনের চতুর্থ তলার আট নম্বর রুমে একসঙ্গে ছিলেন। সেখানেই শাহজাহানের সাথে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। সেই সূত্রে শাহজাহানের মুক্তির খবর শুনে তিনি ছুটে আসেন এবং তাকে নিয়ে তার বাসায় যান।
রকির  নর্দার বাসায় ঠাঁই হয়েছিল শাহজাহানের। শাহজাহানের এক বড় বোন ঢাকায় থাকেন। কিন্তু তার সাথে শাহজাহানের যোগাযোগ নেই।  

news24bd.tv/ডিডি