কে বসবে ক্ষমতায় ইমরান, নওয়াজ নাকি বিলাওয়াল

বিলাওয়াল ভুট্টো, ইমরান খান ও নওয়াজ শরিফ 

কে বসবে ক্ষমতায় ইমরান, নওয়াজ নাকি বিলাওয়াল

অনলাইন ডেস্ক

পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ ফলাফল এখনও প্রকাশিত হয়নি। তবুও ভোটের সামগ্রিক ফলাফল অনেকটাই পরিষ্কার। এককভাবে সরকার গঠন করতে পারছে না কোনো দল। তাই জোট গঠন ছাড়া উপায় নেই।

আর তা নিয়েই চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।

বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২৬৫ আসনে। সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ১৩৪ আসনের। সর্বশেষ প্রাপ্ত ফলাফলে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছেন ৯২ আসন, আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল-এন) পেয়েছে ৭১ আসন এবং বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) পেয়েছে ৫৪ আসন।

জমিয়ত উলামায়ে ইসলাম পেয়েছে ৩ আসন এবং অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্ররা পেয়েছে ৩৩ আসন। বাকি ৯ আসনের ফলাফল এখনও জানা যায়নি।

সরকার গঠনের প্রয়োজনীয় ১৩৪ আসন পায়নি কোনো দলই। তাই জোট গঠনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পথেই হাঁটছে দলগুলো। পিএমএল-এন নেতা নওয়াজ শরিফ সরকার গঠনে সব দলের ঐক্য এবং জোটের কথা জানিয়েছেন। এমনকি নওয়াজ শরিফ তারপরই পিপিপির কো-চেয়ারম্যান আসিফ জারদারির সঙ্গে বৈঠক করে। তবে এ বিষয়ে কিছু না বললেও জোটের মাধ্যমে সরকার গঠনের তার সঙ্গে কোনো দলের আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি বলে জানান পাকিস্তান পিপলস পার্টি নেতা বিলওয়াল ভুট্টো। অন্যদিকে, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি সরকার গঠনের জন্য পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফকে (পিটিআই) আমন্ত্রণ জানাবেন বলে দাবি করেছেন দলটির চেয়ারম্যান গহর আলী খান। এত সমিকরণের মধ্যেও সরকার গঠনের মূল চাবি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে বলেও মনে করেন অনেকেই।

সরকার গঠনে জোট প্রসঙ্গে যা বললেন নওয়াজ শরিফ
ফলাফলের ঘোষণা চলাকালীন সময়ে গতকাল শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) লাহোরে পিএমএল-এন কেন্দ্রীয় সচিবালয়ে নওয়াজ শরীফ জানান, ভোটের পর পিএমএল-এন বৃহত্তম দল। তবে সরকার গঠন করার মতো সংখ্যা (আসন) নেই।

এ সময় তিনি বলেন, দেশকে কঠিন সময় থেকে বের করে এনেছি এবং আবারও করব। সরকার গঠনের জন্য সব দলকে একত্রিত হওয়া উচিত এবং আমরা তাদের পাকিস্তানকে সঙ্কট থেকে মুক্তি দিতে আমাদের সাথে বসতে আমন্ত্রণ জানাই। সব দল মিলে সরকার গঠন করা উচিৎ এবং সংকট থেকে উত্তরণে অন্যান্য দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে।

এই বক্তব্যের পর সরকার গঠনে তোড়জোড় শুরু করেন নওয়াজ শরিফ। পূর্ণাঙ্গ ফলের আগেই তৃতীয় সর্বোচ্চ আসন পাওয়া পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) কো-চেয়ারম্যান আসিফ জারদারির সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। তবে ওই বৈঠকে আর কারা উপস্থিত ছিলেন বা কী আলোচনা হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, সরকার গঠনের প্রক্রিয়া নিয়েই আলোচনা হয়েছে।

এর আগে, ২০২২ সালে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পিপিপি ও পিএমএল-এন একসঙ্গে জোট করেছিল।

সরকার গঠনে জোট প্রসঙ্গে যা বললেন বিলওয়াল ভুট্টো
পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা বিলওয়াল ভুট্টো জারদারি বলেছেন, জোট গঠনের মাধ্যমে সরকার গড়ার জন্য তার সঙ্গে কোনো দলের আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি।

জিও নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল-এন বা ইমরান খানের পিটিআই কারও সঙ্গেই তার আলোচনা হয়নি। তবে জোট গঠন ছাড়া যে তার দল সরকারে যেতে পারবে না সে কথাও স্বীকার করেন তিনি।

সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাবা আসিফ আলী জারদারি পিএমএল-এন প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরিফের সঙ্গে কোনো বৈঠক করেছেন কিনা জানতে চাইলে বিলওয়াল বলেন, এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে বলার মতো কোনো তথ্য নেই। সব আসনের ফল ঘোষণা হলেই কেবল আমরা অন্যদের সঙ্গে বসতে পারব।

পিটিআই সমর্থিত কোনো নির্বাচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী বা কোনো পিপিপি নেতা তার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি বলে জানান তিনি। তবে পিটিআই দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন, এমন কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ হওয়ার কথা স্বীকার করেন বিলওয়াল ভুট্টো জারদারি।

সরকার গঠনে যা বলছে পিটিআই
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি সরকার গঠনের জন্য পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফকে (পিটিআই) আমন্ত্রণ জানাবেন বলে দাবি করেছেন দলটির চেয়ারম্যান গহর আলী খান। কারণ হিসেবে বলছেন, জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়েছেন।

শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) গহর আলী বলেন, ‘আমরা কারও সঙ্গে ঝগড়া করতে চাই না। আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। সংবিধান ও আইন অনুযায়ী আমরা এগিয়ে যাব এবং সরকার গঠন করব। ’

আজ রাত ১২টার মধ্যে পূর্ণ ফলাফল ঘোষণা করা উচিত উল্লেখ করে গহর বলেন, ‘পিটিআইয়ের জন্য কোনো বাধা তৈরি করা ঠিক হবে না এবং যতটা দ্রুত সম্ভব ফল ঘোষণা করা উচিত। আইন অনুযায়ী চূড়ান্ত ফল ফরম–৪৫–এ পূরণ করে প্রকাশ করা হয়েছে। আমরা সব ফল পেয়েছি। ’

পিটিআই চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনে দল সমর্থিত বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তারা দলের প্রতি অনুগত আছেন এবং থাকবেন।

সব প্রক্রিয়া শেষে পিটিআই আগামী ১৫ দিনের মধ্যে অন্তর্দলীয় নির্বাচনে যাবে বলে জানান গহর। তিনি বলেন, জনগণ পিটিআইকে বিশাল ম্যান্ডেট দিয়েছে। পিটিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে করা সব মামলার অভিযোগ ভুয়া।

জোট প্রসঙ্গে পিটিআই চেয়ারম্যান বলেন, সংরক্ষিত আসন এবং কোন দলের সঙ্গে তাদের যোগ দেওয়া উচিত, সে বিষয়ে তারা খুব দ্রুত একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাবেন।

যেসব আসনে ফলাফল এখনও স্থগিত হয়ে আছে, সেসব জায়গায় তারা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ–বিক্ষোভ করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, দলের নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে, তবে সেটা হতে হবে শান্তিপূর্ণ।

পিটিআই চেয়ারম্যান সবশেষ জোটের ইঙ্গিত দিলেও এর আগে নির্বাচনের দিন তিনি জানান, ‘পিএমএল–এন ও পিপিপির সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি না। ’

নির্বাচন নিয়ে মুখ খুললেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান
পাকিস্তানে রাজনীতি ও সরকারের নিয়ন্ত্রণ সেনাবাহিনীর হাতে বলে মনে করা হয়। নির্বাচনের আগে বিশ্লেষকরা বলেছিলেন যে, সেনাবাহিনী নওয়াজ শরিফকে ক্ষমতায় বসানোর সব ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু নির্বাচনে ভোটাররা চমকে দিয়েছে।

এখনও কারা কীভাবে সরকার গঠন করবে সে বিষয়টি পরিষ্কার নয়। এমন অবস্থায় একটি বিবৃতি দিয়েছেন জেনারেল আসিম মুনির। তিনি বলেন, পাকিস্তানকে নির্বাচন-পরবর্তী ‘নৈরাজ্য ও মেরুকরণ’ থেকে সরে আসতে হবে। খবর আল আরাবিয়্যার

শনিবার এক সামরিক বিবৃতিতে আসিম মুনির বলেন, সাধারণ নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফলের সাথে সাথে পাকিস্তানকে নৈরাজ্য ও মেরুকরণের রাজনীতি বাদ দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

আসিম মুনির বলেন, জাতির নৈরাজ্য ও মেরুকরণের রাজনীতি থেকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য স্থিতিশীল হাত এবং একটি নিরাময় স্পর্শ প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় সকাল ৮ টায় শুরু হওয়া ভোট চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। সংঘাতপূর্ণ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের দিনে পাকিস্তানজুড়ে বন্ধ রাখা হয়েছিল মোবাইল পরিষেবা। মূলত নিরাপত্তার স্বার্থে এই উদ্যোগ নেয় দেশটির সরকার। তবে পরদিন পাকিস্তানে মুঠোফোন সেবা চালু রয়েছে। নির্বাচনের সহিংসতায় শিশু-পুলিশসহ ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।

পাকিস্তানের জাতীয় ও আঞ্চলিক নির্বাচনে সবমিলিয়ে ১৭ হাজার ৮১৬ জন প্রার্থী আছেন। এর মধ্যে জাতীয় নির্বাচনে পাঁচ হাজার ১২১ জন ও আঞ্চলিক নির্বাচনে ১২ হাজার ৬৯৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে ১১ হাজার ১৭৪ জন পুরুষ ও ৬০৭ জন নারী।

সূত্র: আল জাজিরা, জিও নিউজ, ডন।
News24bd.tv/aa