বাঁচার আকুতি জানানো সেই ফিলিস্তিনি শিশুর মরদেহ মিললো ১২ দিন পর

ছাড়ে ছয় বছরের হিন্দ রাজাব - বিবিসি

বাঁচার আকুতি জানানো সেই ফিলিস্তিনি শিশুর মরদেহ মিললো ১২ দিন পর

অনলাইন ডেস্ক

চাচা-চাচি আর তিন চাচাতো ভাই বোনের সঙ্গে গতমাসের শেষের দিকে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে গাঁজা সিটি ছাড়ে ছয় বছরের হিন্দ রাজাব। গন্তব্যস্থল ছিল পার্শ্ববর্তী তাল-আল-হাওয়া। তবে সেখানেই যাওয়ার পথেই হিন্দদের বহনকারী গাড়ি পড়ে ইসরায়েলের ট্যাংকের মুখে পড়ে। পরের ঘটনা, গাড়িটিতে আগুন লাগে, যদিও এর মধ্যেই বেঁচে ছিলেন ছোট্ট হিন্দ।

একমাত্র বেঁচে থাকা ব্যক্তি হিসেবে হিন্দ গাড়িতে বসেই ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (পিআরসিএস) জরুরি নম্বরে ফোন দিয়ে জানায় বাঁচার আকুতি। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে তাকে উদ্ধার করতে ঘটনাস্থলে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যায় পিআরসিএসের দুই প্যারামেডিক। এরপর থেকে মিলছিল না তাদের হদিসও।

সেই ঘটনার ১২ দিন পর গতকাল শনিবার মিলেছে দুই পক্ষেরই খোঁজ।

ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে হিন্দ ও তার পাঁচ স্বজন এবং রেড ক্রিসেন্টের দুই ক্রু'র মরদেহ পাওয়া গেছে। ইসরায়েলের বোমা হামলায় অ্যাম্বুলেন্সের দুই ক্রু ইউসুফ আল-জেইনো এবং আহমেদ আল-মাধউন নিহত হন বলে জানিয়েছে পিআরসিএস।

শনিবার ফিলিস্তিনি রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির প্যারামেডিকস সে এলাকায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়। এতদিন সেখানে চলা ব্যাপক যুদ্ধের কারণে তারা এলাকাটিতে ঢুকতে পারছিল না। প্যারাডেমিকসরা সেখানে পৌঁছানোর পর হিন্দ যে কালো রঙের কিয়া গাড়িতে ছিল, সেটি দেখতে পান। এটির উইন্ডস্ক্রিন ও ড্যাসবোর্ড টুকরা টুকরা হয়ে পড়ে ছিল। গাড়ির চারপাশে ছিল গুলির চিহ্ন।  

একজন প্যারামেডিক সাংবাদিকদের বলেন, গাড়ির ভেতর থাকা ছয়টি লাশের একটি হিন্দ। এই গাড়িটির কয়েক মিটার দূরে ছিল আরেকটি পুড়ে যাওয়া গাড়ি। এটি উল্টে পড়ে ছিল। হিন্দকে আনতে যে অ্যাম্বুলেন্সটি পাঠানো হয়েছিল, এটি সেটি। পিআরসিএসের দাবি, গত ২৯ জানুয়ারি হিন্দকে বাঁচাতে অ্যাম্বুলেন্সটি সেখানে পৌঁছানোর পর ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে এতে হামলা চালায়।

অথচ অ্যাম্বুলেন্সটিকে সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করা হয় বলে বিবিসিকে জানায় পিআরসিএস। তারপরও তারা শিশুটিকে উদ্ধার করতে যাওয়া রেডক্রস ক্রুদের ইচ্ছা করে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে।

পিআরসিএসের মুখপাত্র নিবাল ফারসাখ বিবিসিকে চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে বলেছিলেন, ‘আমরা সমন্বয় করতে পেরেছি, সবুজ সংকেত পেয়েছি। ক্রুরা সেখানে পৌঁছানোর পর জানিয়েছিল, তারা হিন্দ যে গাড়িতে ছিল, সেটি দেখতে পেয়েছে এমনকি, তাকেও দেখতে পেয়েছে। সর্বশেষ যা শুনছিলাম তা ছিল গুলির শব্দ। ’

পিআরসিএস কল অপারেটরদের সঙ্গে হিন্দের কথোপকথনের রেকর্ড প্রকাশ করেছে। এখন হিন্দের সঙ্গে আসলে কী ঘটেছে, তা তদন্ত করার জোর দাবি উঠেছে।

এদিকে, বিবিসি সেদিন সেই এলাকায় যেসব অভিযান চালিয়েছে সেগুলোর এবং হিন্দকে উদ্ধারে যাওয়া অ্যাম্বুলেন্সটির বিষয়ে ইসরায়েল সেনাবাহিনীর কাছে দুবার বিস্তারিত জানতে চেয়েছে। জবাবে তারা বলেছে, বিষয়টি দেখছে। এরপর শনিবার তাদের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির তোলা অভিযোগ সম্পর্কেও জানতে চাওয়া হয়।

যুদ্ধের নিয়ম অনুযায়ী, চিকিৎসাকর্মীদের অবশ্যই সুরক্ষিত রাখতে হবে এবং কোনোভাবে সংঘাতের লক্ষ্যবস্তু বানানো যবে না। পাশাপাশি আহত ব্যক্তিদের যতটা সম্ভব কম সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দিতে হবে। আর ইসরায়েলের অভিযোগ, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস তাদের অস্ত্র ও যোদ্ধাদের বহনে অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করে।

news24bd.tv/SHS