মুহাম্মদ (সা.)-এর অনন্য বৈশিষ্ট্য

ফাইল ছবি

মুহাম্মদ (সা.)-এর অনন্য বৈশিষ্ট্য

অনলাইন ডেস্ক

প্রিয় নবীজি (সা.)-কে আল্লাহ তাআলা এমন কিছু বৈশিষ্ট্য দিয়েছেন, যা অন্য কোনো নবীকে দেননি। নিম্নে আমরা বিশ্বনবী (সা.)-এর কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ।

১. নবীদের কাছ থেকে ওয়াদা গ্রহণ 
আল্লাহ তাআলা সব নবী থেকে ওয়াদা নিয়েছেন যে বিশ্বনবী (সা.) যদি আগমন করেন তাহলে তাঁরা তাঁকে সত্যায়ন করবেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং (তাদেরকে সেই সময়ের কথা স্মরণ করাও) যখন আল্লাহ নবীদের থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন, আমি যদি তোমাদের কিতাব ও হিকমত দান করি, তারপর তোমাদের কাছে কোনো রাসুল আগমন করে, যে তোমাদের কাছে যে কিতাব আছে তার সমর্থন করে, তবে তোমরা অবশ্যই তার প্রতি ঈমান আনবে এবং অবশ্যই তার সাহায্য করবে।

আল্লাহ (সেই নবীদের) বলেছিলেন, তোমরা কি এ কথা স্বীকার করছ এবং আমার পক্ষ থেকে প্রদত্ত এই দায়িত্ব গ্রহণ করছ? তারা বলেছিল, আমরা স্বীকার করছি। আল্লাহ বলেন, তবে তোমরা (একে অন্যের স্বীকারোক্তি সম্পর্কে) সাক্ষী থাকো এবং আমিও তোমাদের সঙ্গে সাক্ষী থাকলাম। ’(সুরা : আলে-ইমরান, আয়াত : ৮১)।

২. বাইতুল মাকদিসে ইমামতি
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ...তারপর (মিরাজের সময় বাইতুল মাকদিসে) নামাজের সময় হলো, আমি তাঁদের (নবীদের) ইমামতি করলাম...।

(সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩২৭)

৩. আগে-পরের সব গুনাহ মাফ
স্পষ্ট ঘোষণার মাধ্যেমে প্রিয় নবীজির আগে-পরের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘(হে রাসুল!) নিশ্চয়ই আমি তোমাকে প্রকাশ্য বিজয় দান করেছি, যাতে আল্লাহ তোমার অতীত ও ভবিষ্যতের সব ত্রুটি ক্ষমা করেন, তোমার প্রতি তাঁর নিয়ামত পূর্ণ করেন এবং তোমাকে সরল পথে পরিচালিত করেন। ’ (সুরা : আল-ফাতহ, আয়াত : ১ ও ২)

অন্য কোনো নবীর ব্যাপারে এভাবে স্পষ্ট কোনো বর্ণনা নেই যে তাঁদের আগের এবং পরের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়েছে। তবে নবীরা মাসুম এ কথা সত্য ও শিরোধার্য।

৪. পুরো জগতের নবী
আমাদের নবীজি (সা.)-কে পুরো বিশ্বের জন্য নবী বানিয়ে প্রেরণ করেছেন এবং তিনি ছিলেন জিন, মানুষসহ সবার নবী। আর অন্য নবীদের পাঠিয়েছেন এলাকাভিত্তিক। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং (হে নবী!) আমি তোমাকে সব মানুষের জন্য একজন সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে পাঠিয়েছি, কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ বুঝছে না। ’ (সুরা : সাবা, আয়াত : ২৮)

৫. তিনি সর্বশেষ নবী ও রাসুল
ইরশাদ হয়েছে, ‘(হে মুমিনরা!) মুহাম্মদ (সা.) তোমাদের কোনো পুরুষের পিতা নয়, কিন্তু সে আল্লাহর রাসুল এবং নবীদের মধ্যে সর্বশেষ। আল্লাহ সর্ববিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞাত। ’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৪০)

৬. রাসুলের জীবন নিয়ে আল্লাহর শপথ
আল্লাহ তাআলা কোরআনে কারিমে রাসুলের হায়াত নিয়ে শপথ করেছেন। এটি আমাদের নবীর সঙ্গে সীমাবদ্ধ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘(হে নবী!) তোমার জীবনের শপথ! প্রকৃতপক্ষে ওই সব লোক নিজেদের মত্ততায় বুঁদ হয়ে গিয়েছিল। ’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ৭২)

৭. কোরআনে রাসুল বলে সম্বোধন 
কোরআনে আল্লাহ তাআলা নবীজিকে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বলে সম্বোধন করেছেন, অথচ অন্য নবীদের ক্ষেত্রে সরাসরি নাম বলে সম্বোধন করেছেন; এটি প্রিয় নবী (সা.)-এর সম্মান ও মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে রাসুল! তোমার প্রতি তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা কিছু নাজিল করা হয়েছে, তা প্রচার করো। যদি (তা) না করো, তবে (তার অর্থ হবে) তুমি আল্লাহর বার্তা পৌঁছালে না। আল্লাহ তোমাকে মানুষের (ষড়যন্ত্র) থেকে রক্ষা করবেন। আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে হিদায়াত দান করেন না। ’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৬৭)

আর যেখানে নবীজি (সা.)-এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে রাসুলকে সম্বোধন করে কোনো কিছু বলা হয়নি বা আদেশ করা হয়নি। বরং রাসুলের নাম হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ অন্য নবীদের নাম উল্লেখ করে আদেশ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘(আমি তাকে বললাম), হে ইবরাহিম! এ বিষয়টা যেতে দাও। নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালকের হুকুম এসে পড়েছে এবং তাদের ওপর এমন শাস্তি আসবেই, যা কেউ প্রতিহত করতে পারবে না। ’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ৭৬)

৮. সংক্ষিপ্ত ও বিশদ অর্থবহ বাণীর বাহক 
নবীজি (সা.)-এর অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে রাসুলকে অল্প কথায় অধিক অর্থসম্পন্ন কথা বোঝানোর বিশেষ যোগ্যতা দান করা হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমাকে ছয়টি জিনিস দ্বারা অন্য নবীদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে। আমাকে ব্যাপক তথ্যপূর্ণ ও অর্থবহ বাণী দান করা হয়েছে...। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১০৫০)

৯. ধনভাণ্ডারের চাবি
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, একবার আমি নিদ্রায় ছিলাম, এমতাবস্থায় পৃথিবীর ধনভাণ্ডারগুলোর চাবি আমার হাতে অর্পণ করা হয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৭৬৯)

১০. সুরা ফাতিহা ও সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, জিবরাইল (আ.) নবী (সা.)-এর কাছে উপবিষ্ট ছিলেন, ইত্যবসরে ওপরের দিকে তিনি একটি আওয়াজ শুনতে পেয়ে নিজের মাথা তুললেন এবং বললেন, এটি আসমানের একটি দরজা, যা আজই খুলে দেওয়া হলো; আজকের দিন ব্যতীত কখনো তা খোলা হয়নি। তখন সে দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা অবতরণ করলেন। তিনি বলেন, ইনি একজন ফেরেশতা, যিনি পৃথিবীতে অবতরণ করলেন, আজ ছাড়া অন্য কখনো তিনি অবতরণ করেননি। এরপর উক্ত ফেরেশতা সালাম করে বললেন, দুটি নুরের সুসংবাদ গ্রহণ করুন, যা আপনাকে দেওয়া হয়েছে এবং যা আপনার আগে আর কোনো নবীকে দেওয়া হয়নি। তা হলো সুরা ফাতিহা ও সুরা বাকারার শেষাংশ। এ দুটির যেকোনো হরফ আপনি পাঠ করবেন, তা আপনাকে দিয়েই দেওয়া হবে (এতে যে দোয়ার বিষয়বস্তু আছে তা কবুল করা হবে)। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৭৫০)

১১. মহানবীর পাঁচ অনন্য বৈশিষ্ট্য
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমাকে এমন পাঁচটি বিষয় প্রদান করা হয়েছে, যা আমার আগে কোনো নবীকে দেওয়া হয়নি। ১. আমাকে এমন প্রভাব দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে, যা এক মাসের দূরত্ব পর্যন্ত অনুভূত হয়। ২. সব জমিন আমার জন্য নামাজ আদায়ের স্থান ও পবিত্রতা অর্জনের উপায় করা হয়েছে। কাজেই আমার উম্মতের যে কেউ যেখানে নামাজের ওয়াক্ত হয় (সেখানেই) যেন নামাজ আদায় করে নেয়। ৩. আমার জন্য গনিমত হালাল করা হয়েছে। ৪. অন্যান্য নবী নিজেদের বিশেষ গোত্রের প্রতি প্রেরিত হতেন আর আমাকে সব মানবের প্রতি পাঠানো হয়েছে। ৫. আমাকে (ব্যাপক) শাফাআতের অধিকার প্রদান করা হয়েছে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪২৫)

১২. রাসুলের কাছে উম্মতের দরুদ উপস্থাপন
আউস ইবনে আউস (রা.) সূত্রে নবী (সা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমাদের সব দিনের মধ্যে পরমোত্কৃষ্ট দিন হলো জুমার দিন, সেদিন আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছিল, সেদিনই তাঁর ওফাত হয়, সেদিনই দ্বিতীয়বার শিঙায় ফুঁ দেওয়া হবে এবং সেদিনই কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে।

অতএব, তোমরা আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পড়ো। কেননা, তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়। তারা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! কিভাবে আমাদের দরুদ আপনার কাছে পেশ করা হবে। যেহেতু আপনি (একসময়) ওফাত পেয়ে যাবেন- অর্থাৎ তাঁরা বললেন, আপনার দেহ মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা জমিনের জন্য নবীদের দেহ গ্রাস করা হারাম করে দিয়েছেন। (সুনানে নাসায়ি) হাদিস : ১৩৭৪)

১৩. রাসুলের রওজা জান্নাতের টুকরা
আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে নবী (সা.) বলেছেন, আমার ঘর ও আমার মিম্বারের মধ্যবর্তী স্থানটি হলো জান্নাতের বাগানসমূহের একটি বাগান। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ৩৯১৬) 

এই রকম আরও টপিক