আমার বিরুদ্ধে ফলাফলে ধস নামিয়ে দেয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন: অধ্যাপক নাদির জুনাইদ

অভিযুক্ত অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদ। ছবি: সংগৃহীত

আমার বিরুদ্ধে ফলাফলে ধস নামিয়ে দেয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন: অধ্যাপক নাদির জুনাইদ

অনলাইন ডেস্ক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে বিভাগের মাস্টার্স পরীক্ষায় কম নম্বর দেওয়া ও ভাইভায় অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করার অভিযোগ এনে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে একটি ব্যাচের কিছু শিক্ষার্থী। তাদের অভিযোগ ড. নাদির জুনাইদ ভাইভায় তাদেরকে অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করে বিব্রত করেন এবং ইচ্ছাকৃতভাবে পরীক্ষার ফলাফল ধস নামিয়ে দেন।  

এ বিষয়ে ড. নাদির জুনাইদের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, "আমি এই পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ছিলাম। আমি এমএসএস ২য় সেমিস্টারে কোনো কোর্স পড়াইনি।

কাজেই এই সেমিস্টারে কোনো কোর্সে এককভাবে কোনো নম্বর প্রদানের সুযোগ আমার ছিল না। আমি কমপ্রিহেনসিভ (ওরাল) অংশে পরীক্ষা কমিটির অন্য তিনজন সদস্যের সঙ্গে ভাইভা পরীক্ষা নিয়েছি। এই পরীক্ষায় আমরা চার জন আলাদাভাবে নম্বর দিয়েছি এবং চার জনের নম্বর গড় করে চূড়ান্ত নম্বর দেয়া হয়েছে। ফলে, যেহেতু কেবল এককভাবে আমার নম্বর নেয়া হয়নি তাই কোনো পরিক্ষার্থী কম নম্বর পেলে তার জন্য আমাকে এককভাবে দায়ী করার কোনো সুযোগ নেই।

একইভাবে, কমপ্রিহেনসিভ (লিখিত) অংশের খাতা আমি প্রথম পরীক্ষক হিসেবে দেখেছি। দ্বিতীয় পরীক্ষকও এই খাতা দেখেছেন এবং আমাদের দুইজনের দেয়া নম্বরের গড় চূড়ান্ত নম্বর হিসেবে ধরা হয়েছে। এই পরীক্ষার অল্প কয়েকটি খাতা তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে গিয়েছিল। ফলে, এখানেও কেউ কম নম্বর পেলে কেবল আমার জন্যই কম নম্বর পেয়েছে তা বলার সুযোগ নেই। এই পরীক্ষার যে থিসিস কমিটি ছিল সেখানে আমি ছিলাম না। ফলে, থিসিসের ভাইভায় আমি কোনো নম্বর দেইনি।

তাই, ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে আমি তাদের ফলাফলে ধস নামিয়ে দিয়েছি কিছু পরিক্ষার্থীর এমন বক্তব্য যৌক্তিক নয়। কারণ এই পরীক্ষায় এককভাবে কোনো নম্বর দেয়ার সুযোগ আমার ছিল না। অথচ, একাধিক মূল্যায়নকারীর প্রদত্ত নম্বরের গড় নম্বর চূড়ান্ত নম্বর হিসেবে নেয়ার পরও অভিযোগ প্রদানকারী পরিক্ষার্থীরা কেবল আমাকেই তাদের কম নম্বর পাওয়ার জন্য অভিযুক্ত করছে। এক্ষেত্রে কেবল একজনকে অভিযুক্ত করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। তাদের কম নম্বর পাওয়ার জন্য কেন তারা কেবল আমাকেই দায়ী করছে এবং কেবল আমি নম্বর কমিয়ে দিয়েছি এমন কথা বলে কিছু সংবাদপত্রে কেন রিপোর্ট করা হচ্ছে এই প্রশ্ন করা দরকার। "

তিনি আরও বলেন, "ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার দিনই সন্ধ্যায় একটি সংবাদপত্রে রিপোর্ট করা হয় যে সংশ্লিষ্ট ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে আমি এই পরীক্ষার কম্প্রিহেনসিভ কোর্সের পরীক্ষক ছিলাম। আমি যে এই পরীক্ষার এই কোর্সের পরীক্ষক ছিলাম এই তথ্য তো শিক্ষার্থীদের জানার কথা নয়। এই তথ্য তারা কী করে ফলাফল প্রকাশের দিনই একটি সংবাদপত্রকে দিলো? এই প্রশ্নও করা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছারের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, "পরীক্ষার খাতা দুইজন পরীক্ষক যাচাই করলেও এবং মৌখিক পরীক্ষা চার জন পরীক্ষক গ্রহণ করলেও একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধেই অভিযোগ করা হয়েছে। ” তিনি আরও বলেন, "আমরা সঠিক তদন্ত করে প্রকৃতঅর্থে কী হয়েছিল তা জেনে যথাযথ ব্যবস্থা নেবো এবং যাতে উভয়পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবো। "

ভাইভা পরীক্ষায় অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করেছেন এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে ড. নাদির জুনাইদ বলেন, যেহেতু গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা সামাজিক বিজ্ঞান শাখার একটি বিষয় তাই এই বিষয়ের শিক্ষার্থীদের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতার তাত্ত্বিক দিকের পাশাপাশি তাদের সাম্প্রতিক সময়, ঐতিহাসিক ঘটনা, আন্তর্জাতিক বিষয় প্রভৃতি দিক নিয়েও প্রশ্ন করা হলে তা কোনোভাবেই অপ্রাসঙ্গিক নয়। এমন প্রশ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের ভাইভায় করা স্বাভাবিক কারণ সে সম্পর্কে জ্ঞান সাধারণ জ্ঞানের পর্যায়ে পড়ে।

আরও পড়ুন: সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা নিয়ে ভুয়া তথ্য দিয়ে ধরা খেলেন মুশফিক আনসারী

অভিযোগ করা হয়েছে যে, আমি একজন শিক্ষার্থীকে কুকুরের কয়েকটি জাতের নাম জিজ্ঞেস করেছি। আমি একেবারেই মনে করতে পারছি না যে আমি এমন প্রশ্ন কাউকে করেছি নাকি অন্য কোনো সদস্য এমন প্রশ্ন করেছেন। আর যদি এই প্রশ্ন করা হয়েই থাকে তাহলে অবশ্যই অ্যাকাডেমিক কোনো বিষয়ের প্রেক্ষিতেই এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল। যেমন, নিকোলো ম্যাকিয়াভেলির তত্ত্ব ক্লাসে শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়েছে। সেই তত্ত্বের একটি বক্তব্য রূপকের সাহায্যে বোঝানোর জন্য শিপডগ ধারণাটি ব্যবহার করা হয়। কাজেই অমন প্রশ্ন ভাইভাতে করা হয়ে থাকলে অমন রূপকধর্মী শিপডগ ধারণা বোঝাতে কিংবা অন্য কোনো অ্যাকাডেমিক কনটেক্সট-এ সেই প্রশ্ন করা হয়েছিল। "

তিনি আরও বলেন, "আমি শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক জি সি দেবের ছবি, বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর এটিএম হায়দার বীর উত্তমের ছবি শিক্ষার্থীদের দেখিয়ে তাদের প্রশ্ন করেছি এই ব্যক্তিরা কারা? ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষরের সময় সেখানে উপস্থিত জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার ছবি দেখিয়েছি। এই ছবি সংবাদপত্রে বহুবার ছাপা হয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এমন ব্যক্তিদের পরিচয় সম্পর্কে প্রশ্ন অপ্রাসঙ্গিক নয়, এমন প্রশ্ন কঠিনও নয়। বরং এমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের চিনতে না পারাই ইতিহাস জানার প্রতি উদাসীনতা নির্দেশ করে। গণযোগাযোগ বিষয়ের শিক্ষার্থীদের জহির রায়হানের চলচ্চিত্র সম্পর্কে প্রশ্ন করা, 'মুজিব: দ্য মেকিং অফ আ নেশন" ছবির পরিচালকের নাম জিজ্ঞাসা করা কোনোভাবেই অপ্রাসঙ্গিক হতে পারে না। "

উল্লেখ্য, আগামী জুন মাস থেকে বিভাগের চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছেন অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদ। ঠিক তার কয়েকমাস পূর্বেই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে কোন দুরভিসন্ধি আছে কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক।  

অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদ একাডেমিক কৃতিত্বের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেয়েছিলেন তিনটি স্বর্ণপদক এবং অন্যান্য অ্যাওয়ার্ড। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন ২০০০ সালে। এর পর কমনওয়েলথ স্কলার হিসেবে কিংস কলেজ, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে ফিল্ম স্টাডিজে আরেকটি এমএ ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

news24bd.tv/DHL