এক যুগ পেরিয়ে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড, রহস্য এখনও অজানা

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি। ছবি: সংগৃহীত

এক যুগ পেরিয়ে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড, রহস্য এখনও অজানা

অনলাইন ডেস্ক

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের এক যুগ পূর্ণ হচ্ছে আজ। এত বছরেও বহুল আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের কারণ জানাতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এখনও জমা পড়েনি তদন্ত প্রতিবেদন। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন এই সাংবাদিক দম্পতি।

মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় তদন্ত শেষ করার আশ্বাস দিয়েছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন। তবে ১১ বছর পেরিয়ে একাধিক সংস্থার হাত বদলেও দাখিল হয়নি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে ইতোমধ্যে আদালত থেকে ১০৫ বার সময় নেওয়া হয়েছে। কবে নাগাদ মামলার প্রতিবেদন দাখিল করা সম্ভব হবে, তাও বলতে পারছেন না তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

র‍্যাবের হাতে তদন্তভার যাওয়ার পর ৫ বছর আগে তারা একটি অগ্রগতি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। তাতে উঠে আসে, ঘটনাস্থলে দুজন অজ্ঞাত পুরুষের ডিএনএর নমুনা পাওয়া গেছে। তবে এখন পর্যন্ত সেই দুজনকে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি।

সর্বশেষ গত ২৩ জানুয়ারি মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তারিখ ধার্য ছিল। কিন্তু ওই দিনও তদন্ত সংস্থা র‌্যাব প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেননি। এ জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালত আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন।

র‌্যাবের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাব থেকে ফরেনসিক রিপোর্ট না পাওয়াকেই তদন্তে বিলম্বের কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলাটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা। অনেক বছর হয়ে গেলো, এখনও প্রতিবেদন দিতে পারলো না তদন্ত সংস্থা। এটা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। এ জন্য এই মামলার দ্রুত একটা সুরাহা হওয়া উচিত। আদালতে প্রতিবেদন আসা মাত্র রাষ্ট্রপক্ষ দ্রুত বিচার শেষ করার চেষ্টা করবে।

আরও পড়ুন: 'সাগর-রুনি হত্যা: প্রকৃত আসামিকে ধরতে পারছে না বলেই তদন্তে সময় লাগছে'

এক যুগেও খুনি ধরা না পড়ায় চরম হতাশ সাংবাদিক সাগরের মা সালেহা মনির। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, যত দিন সাগর-রুনির প্রকৃত খুনিরা ধরা পড়বে না, তত দিন ওদের কবর দেখতে যাব না। কিন্তু আমি সেই প্রতিজ্ঞা বোধ হয় রাখতে পারব না। ’ তিনি বলেন, ‘আমার বয়স (৭৩ বছর চলছে) হয়েছে। প্রায়ই অসুস্থ থাকি। কখন কী হয় জানি না। তাই ভেবেছি, শিগগির সাগর-রুনির কবর জিয়ারত করতে যাব। ’

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি তাদের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

ওই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি রুনির ভাই নওশের আলী রোমান বাদী হয়ে শেরে বাংলা নগর থানায় মামলা করেন। প্রথমে মামলাটির তদন্ত করেন শেরেবাংলা নগর থানার একজন কর্মকর্তা। ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্ত ভার পড়ে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলমের ওপর। দুই মাস পর হাইকোর্টের আদেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‌্যাব)। সেই থেকে এক যুগেও সংস্থাটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি।

সম্প্রতি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জাতীয় সংসদে বলেছেন, সাগর-রুনি হত্যা মামলা তদন্তে সময়ে বেঁধে দেওয়া সম্ভব না। মামলাটি কঠিন। তবে যারা তদন্ত করে তারা যতক্ষণ পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন না করতে পারেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তদন্ত শেষ করা সমীচীন হয় না। তদন্ত করতে খুব গভীরে যেতে হয় না, যদি সহজে অভিযোগকারী ও অপরাধীদের ধরা যায়, তাহলে সেটা তাড়াতাড়ি করা যায়। অবশ্যই তদন্ত সংস্থা সঠিকভাবে কাজ করে এ মামলার সুরাহা করবে। যারা অপরাধী তাদের অবশ্যই ধরা হবে। তবে আমি এ মামলায় সময় বেঁধে দিতে চাই না। আমি আইনজীবী, জানি এটার সময় বেঁধে দেওয়া সম্ভব না।

এর আগে ১ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, প্রকৃত দোষী চিহ্নিত করতে তদন্তে সময় লাগতে পারে। এ জন্য যতদিন সময় লাগবে, দিতে হবে। পুলিশকে জোর করে তদন্ত শেষ করিয়ে চার্জশিট দেওয়ানো ঠিক হবে না। সময় দিতে হবে, ৫০ বছর লাগলেও দিতে হবে।

news24bd.tv/DHL