শিশুসন্তানকে নিয়েই ইটভাটায় বাবা-মা, প্রায় হাজার শিশু শিক্ষাবঞ্চিত

ইটভাটায় শিশুরা

শিশুসন্তানকে নিয়েই ইটভাটায় বাবা-মা, প্রায় হাজার শিশু শিক্ষাবঞ্চিত

রতন মাহমুদ, শরীয়তপুর

শরীয়তপুরে ইট ভাটায় কর্মরত শ্রমিকদের প্রায় এক হাজার শিশু শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। এই শিশুদের মধ্যে অনেকেই ভাটায় শ্রমিকের কাজ করছে। সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশুদের শিক্ষার ব্যাপারে উদাসীন প্রশাসন। এদের বিদ্যালয়মুখী করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে না।

 

শরীয়তপুর জেলার ছয়টি উপজেলায় ৪০টি ইট ভাটায় ইট তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, সিলেট, বরিশাল, পটুয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকরা এসব ইট ভাটায় কাজ করতে আসেন।  

ভাটাগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, কয়েক হাজার নারী পুরুষ কাজ করছে। স্বামী-স্ত্রীসহ অনেকে তাদের সন্তানদের সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন।

ছয় থেকে সাত মাস তারা এখানে কাজ করেন।
আর এই সময়টিতে তাদের সঙ্গে থাকা শিশুরা কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। এ বিষয়ে প্রশাসন বা ইটভাটা মালিকদের কেউই কোনো মাথা ঘামাচ্ছেন না।

শরীয়তপুরে জাজিরায় অবস্থিত মেসার্স ঢাকা ব্রিক-এ গিয়ে দেখা যায়, সেখানে প্রায় একশ' শিশু রয়েছে। এদের মধ্যে ৭০-৮০ জন শিশু রয়েছে স্কুলে যাওয়ার মতো বয়স হয়েছে। কিন্তু এদের কেউই স্কুল বা মাদ্রাসা কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যায় না।

এসব শিশুদের অনেকেই তাদের মা বাবার সাথে ইট তৈরির কাজে সহায়তা করছে। শুধু এই ইট ভাটায়ই নয়, জেলার প্রায় ৩০টি ভাটায় একই চিত্র দেখা যায়।

ইট ভাটা শ্রমিক শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘আমরা ৫৬টি পরিবার এই ভাটায় আসছি কাজ করতে। প্রত্যেক পরিবারেই ২-৩ জন করে বাচ্চা কাচ্চা আছে। এখানে একশ’র ওপরে বাচ্চা আছে। এরা আমাদের সঙ্গে থাকে। এরা কেউ স্কুল বা মাদ্রাসায় যায় না।

ভাটার নারী শ্রমিক মনসুরা বেগম বলেন, আমার বাচ্চাকে দেশের বাড়ি ( বরিশাল) মাদ্রাসায় ভর্তি করেছিলাম। এখানে ছয় মাসের জন্য আমরা কাজ করতে আসছি। আমার বাচ্চা সঙ্গে করে নিয়ে আসছি। ছয় মাসের জন্য এখানে কোনো স্কুল বা মাদ্রাসায় ভর্তি নেয় না। এখন কী করুম। আমরা গরিব মানুষ। আমার বাচ্চা এখন আমার সাথে কাজ করে।  

শরীয়তপুর ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফা খান বলেন, শিক্ষাবঞ্চিত এই শিশুদের ব্যাপারে আমাদের দ্বায়বদ্ধতা আছে। আমি প্রত্যেকটি ভাটায় চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দেবো। কোনো শিশু যাতে শিক্ষা থেকে ছিটকে না যায়, তার জন্য ব্যাবস্থা নিতে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন বলেন, ইট ভাটার শ্রমিকরা অস্থায়ীভাবে কাজ করতে আসে। তাই তাদের সঙ্গে আশা শিশুদের শিক্ষার আওতায় আনা মুশকিল হয়ে পড়ে। তারপরেও এই বিষয়ে আমরা একটি সার্ভে করে কথা বলে ব্যাবস্থা গ্রহণ করবো।
news24bd.tv/আইএএম

এই রকম আরও টপিক