নাটোরে অবৈধ ড্রেজিংয়ে বিপর্যয়ের মুখে পরিবেশ

নাটোরের লালপুরে পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে লাখ লাখ ফুট বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী একটি চক্র।

নাটোরে অবৈধ ড্রেজিংয়ে বিপর্যয়ের মুখে পরিবেশ

নাটোর প্রতিনিধি

নাটোরের লালপুরে পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে লাখ লাখ ফুট বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী একটি চক্র। কোনোরকম সরকারি ইজারা ছাড়াই প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি করে দীর্ঘদিন ধরে চলছে বালু তোলার মহোৎসব। কিন্তু নীরব ভূমিকায় রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

নাটোরের লালপুরে প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে পদ্মায় জেগে ওঠা চর থেকে বালু-মাটি  হরিলুট।

 বালু-মাটি উত্তোলন বন্ধের দাবিতে একাধিক বার মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেও প্রতিকার পাচ্ছেনা পদ্মা নদীর তীরবর্তী মানুষেরা। এছাড়া ভয়ভীতি ছড়াতে স্থানীয়দের লক্ষ করে গুলি ছোঁড়াসহ তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে বলে বালু ও মাটি উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। আর প্রকাশ্যে বালু ও মাটি ভরাট উত্তোলন করা হলেও প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা।

অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তারা অবৈধভাবে কাজটি করে যাচ্ছেন।

এতে পানির প্রবাহে গতি পরিবর্তন হওয়ায় নদীর পাড় ভেঙে এলাকার ফসলি জমিসহ বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। তবে বালু উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় লুটেরাদের নাম তো দূরের কথা ভয়ে কেউ কিছু বলতে সাহস পাচ্ছেন না।

উৎকোচের বিনিময়ে প্রশাসনসহ প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে রাতের অন্ধকারে ও দিনের আলোয় এসকেভেটর বা ভেকু দিয়ে অবৈধভাবে চরজাজিরা ও চর লক্ষীপুর থেকে মাটি  ও বালু উত্তোলনের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে মাটি ও বালুখেকোরা । এতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর অপরিকল্পিতভাবে মাটি ও বালু উত্তোলনের কারণে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ঈশ্বরদী ইপিজেড, পাকশি হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, লালপুর প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক জোন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, থানা ভবন, হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি, বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও তীররক্ষা বাঁধ নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে জানায় সচেতন মহল।

চরের অসহায় মানুষগুলো বারংবার  প্রতিকার চেয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলসহ প্রশাসনিক দপ্তরে বার বার অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না।

গ্রামের একাধিক গ্রামবাসী বালু উত্তোলনের কারণে দুর্দশার কথা জানিয়ে বলেন, এই অবৈধ বালু উত্তোলন আমাদের সর্বস্বান্ত করে ছাড়বে। আমাদের গ্রাম-নদী গ্রাস করে নিচ্ছে।

চর জাজিরা গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা মতিন মিয়া বলেন, আমার তিন কানি জমি ছিল। এর মধ্যে দুই কানি জমির মাটি ভেঙে নদীতে চলে গেছে। যেভাবে নদী থেকে বালি ও মাটি তোলা হচ্ছে তাতে বাকিটুকুও নদীতে চলে যাবে । আমি ছাড়াও অন্যান্য মানুষের ফসলি জমিও চলে গেছে। সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করে তাহলে আমাদের জীবনটা বাঁচবে।

আরও পড়ুন: রাজশাহীতে ট্রেনের সাথে নসিমনের সংঘর্ষে ২ জন নিহত

গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা কাজীম মিয়া বলেন, নদীটা অনেক দূরে ছিল। আমরা নদীর অনেক দূরে গিয়ে গবাদি পশু গোসল করাতাম। ড্রেজারে বালু তোলার ফলে ধীরে ধীরে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রায় আধা মাইল পর্যন্ত চলে এসেছে। এখন হুমকির মুখে আমাদের কয়েকটি গ্রাম।

ভুক্তভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা নায়েব উদ্দিন বলেন,আমার তিন বিঘা বাদামের জমি তছনছ করে দিয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর আবেদন করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছি না।

এ বিষয়ে ঈশ্বরদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতাকর্মী বলেন, সিন্ডিকেট তৈরি করে পদ্মা নদীর নিমতলী এলাকায় অবৈধভাবে বালু ও মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। এ অবৈধ বালু ও মাটি উত্তোলনের প্রতিবাদে আমরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছি এবং উপজেলা প্রশাসন বরাবর আবেদন দিয়েছি। তারপরও প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। এতে এলাকার মানুষ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

এ বিষয়ে লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আখতার বলেন, যারা বালু ও মাটি উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

news24bd.tv/ab

এই রকম আরও টপিক