চালক নেশা করলে স্টার্ট নেবে না গাড়ি, ঘুমালে বাজলে অ্যালার্ম

কুড়িগ্রামে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীর উদ্ভাবন

কুড়িগ্রামে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীর উদ্ভাবন

চালক নেশা করলে স্টার্ট নেবে না গাড়ি, ঘুমালে বাজলে অ্যালার্ম

হুমায়ুন কবির সূর্য্য, কুড়িগ্রাম

নেশাগ্রস্থ অবস্থায় গাড়ি চালালে বা চলন্ত অবস্থায় চালক ঘুমিয়ে পড়লে সতর্কবার্তা পৌঁছে যাবে সহযাত্রী ও গাড়ির মালিকের কাছে। এমনকি চালক নেশাগ্রস্থ থাকলে স্টার্টও নেবে না গাড়ি! ‘‘ড্রাইভার এন্টি স্লিপ এন্ড অ্যালকোহল এ্যালার্ম ডিটেক্ট’’ নামে এমনই একটি বিষ্ময়কর প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন কুড়িগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ৩য় পর্বের শিক্ষার্থী ছানোয়ার হোসেন।

দীর্ঘ এক বছর ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সফলতা পান তিনি। এই প্রযুক্তিটি প্রথমে কুড়িগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত স্কিল কম্পিটিশনে এবং পরে রংপুরে বিভাগীয় স্কিল কম্পিটিশনে প্রথম স্থান অধিকার করে।

ছানোয়ারের এই সাফল্যে খুশি সহপাঠীরা, উচ্ছ্বসিত শিক্ষকগণ।
 
জানা যায়, যে কোন গাড়ির ড্যাস বোর্ডের সাথে কনসুলিং করে সম্পৃক্ত করা যাবে আইবিলিং ও অ্যালকোহল সেন্সর। চালকের সম্মুখে রাখা এই আইবিলিং সেন্সর ১৮০ ডিগ্রি এ্যাঙ্গেলে চালককে ডিটেক্ট করবে। এছাড়াও গাড়ির সেলফের সাথে সংযুক্ত করা হবে ম্যাগনেটিক রিলে, যা ঘ্রান সংবেদনশীল।
চালক কোন নেশা জাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করলেই সার্কিট অন হবে না। ফলে গাড়ি স্টার্ট নেবে না। এই সেন্সরের সাথে সর্বোচ্চ তিনটি মোবাইলে ডাটা সেট করা থাকবে। গাড়ির চালক চলন্ত অবস্থায় নেশা গ্রহণ করলে বা ঘুমিয়ে পড়লে তিন সেকেন্ডের মধ্যে সতর্কতা এলার্ম মোবাইলে বেঁজে উঠবে। ফলে গাড়ির মালিক, ম্যানেজার বা সুপারভাইজার চালককে সতর্ক করতে পারবেন। এই এলার্ম সিস্টেম দূরপাল্লার গাড়ির ভিতরেও সংযোগ করা যাবে।

প্রযুক্তি উদ্ভাবনকারী ইলেকট্রনিক্স বিভাগের শিক্ষার্থী ছানোয়ার হোসেনের বাড়ি বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার দহিলা বড়হাট পাড়ায়। বাবা আব্দুল আজিজ একজন দূরপাল্লার গাড়ির চালক। তার বড় দুই ভাইও একই পেশায় জড়িত। মা ছানোয়ারা বেগম মারা গেছেন।
 
বিষয়টির ইতিবাচক দিক বিবেচনা করে কুড়িগ্রাম জেলা বাস ও মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সহিদুজ্জামান রাছেল বলেন, এই প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সড়কে মৃত্যুর হারও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। সরকারি বা বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ছানোয়ার আগামীতে এই প্রযুক্তির উন্নয়নসহ আরও নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে পারবে।

শিক্ষার্থী ছানোয়ার হোসেন জানান, পরিবারে বাবা ও দু’ভাই গাড়ির চালকের চাকরি করায় বিষয়টি তার মাথায় আসে। কীভাবে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা যায় তা নিয়ে ভাবতে ভাবতে শিক্ষকদের সহযোগিতায় তিনি এ প্রযুক্তিটি সম্পন্ন করেন।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট’র ইলেকট্রনিকস টেকনোলোজি বিভাগের জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর ও ছানোয়ারের গাইড টিচার সুমন কুমার সাহা জানান,  এই ইনস্টিটিউটে অনেক প্রতিভাবান শিক্ষার্থী রয়েছে। তারা ভাল কিছু উদ্ভাবন করতে চায়। কিন্তু একটি প্রজেক্ট তৈরি করতে যে ব্যয় হয় তাদের পক্ষে সেটা সংকুলান করা সম্ভব হয় না। এ ব্যাপারে সরকার বা অন্য কোন সংস্থা শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ালে আরও ভাল কিছু উদ্ভাবন করা সম্ভব বলে।

স্কিল কম্পিটিশনে ছানোয়ারের প্রযুক্টিটি দেখে উৎসাহিত জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন জানান, গাড়ির মালিকগণ এই প্রযুক্তি ব্যবহার করলে দুর্ঘটনা অনেক কমবে। ড্রাইভাররা সতর্ক থাকবে। জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

সম্পর্কিত খবর