দেনদরবার ব্যর্থ, দিল্লি অভিমুখে পদযাত্রায় কৃষকরা

দিল্লি অভিমুখে যাত্রা শুরু করা কৃষকদের একাংশ

দেনদরবার ব্যর্থ, দিল্লি অভিমুখে পদযাত্রায় কৃষকরা

অনলাইন ডেস্ক

কৃষিপণ্যের সর্বনিম্ন মূল্যসহ (এমএসপি) বেশ কয়েকটি দাবিতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে দেনদরবারে বসেছিলেন দেশটির কৃষক নেতারা। তবে সেই দেনদরবার ব্যর্থ হয়েছে। সরকার কৃষকদের কোনো দাবিই মেনে নেয়নি। এই অবস্থায় কৃষকেরা দিল্লি অভিমুখে রওনা দিয়েছে।

দাবি আদায়ে প্রয়োজনে দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা। আর কৃষকদের দিল্লি অভিমুখে যাত্রা ঠেকাতে এক প্রকার রণ প্রস্তুতিই নিয়েছে সরকার।

কৃষকেরা ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে জানিয়েছেন, এবার তাঁরা দাবি আদায়ে দীর্ঘ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়েই এসেছেন। সঙ্গে করে এনেছেন ৬ মাসের খাবার ও ট্রাক্টর চালানো জ্বালানি ডিজেল।

তবে সরকারের নির্দেশে পুলিশ এরই মধ্যে হরিয়ানা-দিল্লি সীমান্তে ব্যারিকেড, ব্লক ও স্পাইক ব্যারিকেড বসিয়েছে।

কৃষকদের দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—ঋণ মওকুফ, সব কৃষিপণ্যের আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সঙ্গে সব মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ও অন্যান্য চুক্তি বাতিল, বিদ্যুৎ বোর্ডের বেসরকারীকরণ স্থগিত, কৃষিতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ ও করপোরেটাইজেশন নিষিদ্ধ করা এবং কৃষকদের জন্য পেনশন চালু করা। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এসব দাবির বিষয়ে কোনো আশ্বাস দেয়নি।

পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর থেকে আসা কৃষক হরভজন সিং বলেন, ‘আমরা আমাদের সঙ্গে সুই থেকে শুরু করে হাতুড়ি—সবই এনেছি আমাদের ট্রাক্টর ট্রলিতে। এমনকি পাথর ভাঙার যন্ত্রও এনেছি। আমরা ৬ মাসের খাবার-জ্বালানি নিয়েই গ্রাম ছেড়ে এসেছি। আমাদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় ডিজেল তো আছেই, চাইলে আমরা হরিয়ানার কৃষক ভাইদেরও ডিজেল দিতে পারব।

হরভজনের মতো অনেকেই নিজ রাজ্য থেকে ডিজেল সঙ্গে করে এনেছেন। তবে অনেক কৃষকের অভিযোগ আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় তাদের আর ডিজেল কিনতে দেওয়া হচ্ছে না পাম্প থেকে। যাতে করে জ্বালানি ফুরিয়ে ট্রাক্টর-ট্রলি অচল হয়ে পড়ে এবং ‘দিল্লি চলো’ পদযাত্রা ভেস্তে যায়। তবে এবার কৃষকেরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। হরভজন সিং জানালেন, তিনি ২০২০ সালের কৃষক আন্দোলনেও অংশ নিয়েছিলেন। তবে এবার আর দাবি আদায় না করে ফিরবেন না।

এর আগে, গতকাল সোমবার রাতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল ও অর্জুন মুন্ডার সঙ্গে চণ্ডীগড়ে কৃষকদের আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে। এর পরপরই সংযুক্ত কিষান মোর্চার (অরাজনৈতিক) কৃষকেরা ‘দিল্লি চলো’র ঘোষণা দেয়।

সংযুক্ত কিষান মোর্চার (অরাজনৈতিক) জ্যেষ্ঠ নেতা কেভি বিজু দ্য হিন্দু বলেছেন, কেন্দ্র আমাদের দাবির ব্যাপারে আশ্বাস দিতে ব্যর্থ হয়েছে। মন্ত্রীরা আমাদের কৃষিপণ্যের সর্বনিম্ন মূল্য (এমএসপি) নিয়ে কোনো আশ্বাস দেননি। আলোচনা ভেস্তে গেছে। আমরা আমাদের প্রতিবাদ অব্যাহত রাখব। ’

সংযুক্ত কিষান মোর্চার (অরাজনৈতিক) অপর এক নেতা জগজিৎ সিং ডালেওয়াল দ্য হিন্দুকে বলেছেন, ‘কেন্দ্র অনড় অবস্থান নিয়েছে। প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়া ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনো উপায় নেই। ’ কিষান মজদুর সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক সারওয়ান সিং পান্ধের বলেন, ‘কেন্দ্র সময় কেনার চেষ্টা করছে। আমরা চাই কেন্দ্র আমাদের দুই বছর আগে যে আশ্বাস দিয়েছিল তা বাস্তবায়ন করুক। কিন্তু তারা এখন বলছে, তাদের আরও সময় লাগবে। ’

সারওয়ান সিং পান্ধের আরও বলেন, ‘আমরা মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনার সময় সব ধরনের প্রচেষ্টা করেছি যাতে কিছু সিদ্ধান্ত আমাদের পক্ষে আসে। তবে আমরা বৈঠকে তাদের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক আশা পাইনি। আমাদের যদি কিছু আশ্বাস দেওয়া হতো, তাহলে আমরা প্রতিবাদ করব কেন? আমরা আজ আমাদের দিল্লি চলো পদযাত্রা শুরু করব। ’

এদিকে হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ ও দিল্লিতে পুলিশ দিল্লি রাজ্য সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। কৃষকদের শহরে প্রবেশে বাধা দিতে সীমান্ত পয়েন্ট গাজীপুর, টিকরি এবং সিংগুতে ব্যারিকেড, পেরেক ও ব্লক রেখে রাস্তা প্রায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ও পেরেক বসানো হয়েছে। পুলিশ পুরো দিল্লিতে আগামী এক মাসের জন্য জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে।

দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্তে এক মাসের জন্য ফৌজদারি কার্যবিধির ওপর ১৪৪ ধারা জারি করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, কৃষকদের মিছিল নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনা ও ‘সামাজিক অস্থিরতার’ আশঙ্কায় জাতীয় রাজধানীতে জনসমাগম, মিছিল বা সমাবেশ ও ট্রাক্টর-ট্রলির প্রবেশের ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

news24bd.tv/aa