‘টাকার বিনিময়ে গৃহকর্মী হত্যাকাণ্ডের বিচার বানচালের চেষ্টা চলছে’

‘টাকার বিনিময়ে গৃহকর্মী হত্যাকাণ্ডের বিচার বানচালের চেষ্টা চলছে’

‘টাকার বিনিময়ে গৃহকর্মী হত্যাকাণ্ডের বিচার বানচালের চেষ্টা চলছে’

অনলাইন ডেস্ক

ডেইলি স্টার পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের ফ্ল্যাট থেকে পড়ে কিশোরী গৃহকর্মী প্রীতি ওরাংয়ের মৃত্যুর ঘটনায় হওয়া মামলা বড় অংকের টাকার বিনিময়ে বানচালের চেষ্টা চলছে অভিযোগ উঠেছে। প্রীতির লাশ তার বাবা-মায়ের হাতে দেওয়ার সময় দুই লাখ টাকা দিয়ে মীমাংসার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের নিয়ে কাজ করা ছাত্র, যুব ও নারী সংগঠনগুলো।  

বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে সংগঠনগুলোর বক্তারা এই অভিযোগ করেন।

সমাবেশে আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃতা বলেন, 'প্রীতি ওরাংয়ের হত্যাকারী ডেইলি স্টার পত্রিকা নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকার গ্রেপ্তার হয়েছেন।

আমরা জেনেছি আদালত তাদের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। এই অবস্থায় তলে তলে বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে এই মামলা বানচালের চেষ্টা চলছে। এই মামলা বানচাল হলে এবং বিচার সুনিশ্চিত না হলে আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেবে। '

আদিবাসী পাহাড়ি ছাত্র সংগঠনের ঢাকা মহানগরের সভাপতি জগদীশ চাকমা বলেন, 'দুই লাখ টাকার বিনিময়ে প্রীতি ওরাংয়ের মামলা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

টাকার বিনিময়ে হত্যাকারীদের ছেড়ে দিলে দেশের সর্বস্তরের পাহাড়িরা মাঠে নামবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রশ্নবিদ্ধ হবে। প্রীতির লাশ তার বাবা-মায়ের হাতে দেওয়ার সময় দুই লাখ টাকা দিয়ে মীমাংসার চেষ্টা করা হয়েছে। এটা অত্যন্ত হাস্যকর ও ঘৃণিত কাজ। এই ঘটনায় দেশের সুশীল সমাজে নীরবতা আমাদেরকে আহত করেছে। '

সমাবেশে বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সমন্বয়ক ফাল্গুনী ত্রিপুরা বলেন, 'প্রীতি ওরাং পারিবারিকভাবে কতটা অভাবী হলে শহরে একটি বাসায় কাজের মেয়ে হিসেবে কাজ করে! আর এই সুযোগ নিয়েই তাকে যৌন নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে। প্রীতি ওরাংয়ের হত্যার বিচার না হলে দেশের নারী সমাজ বসে থাকবে না। আজ ফাগুনের দিনে আমাদের যেখানে আনন্দ করার কথা, সেখানে প্রীতি ওরাংকে হত্যা করে আমাদের আনন্দ কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমরা যখন দেখেছি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার বানচালের চেষ্টা চলছে, তখন বাধ্য হয়ে শাহবাগে প্রতিবাদ করতে এসেছি। '

আদিবাসী পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চুং ইয়াং বলেন, 'প্রীতির হত্যাকারীরা অনেক প্রভাবশালী, দেশের সুশীল সমাজও প্রীতি ওরাংয়ের বিচার বিষয়ে নীরব ভূমিকা রাখছে। মাত্র ১৫ বছরের একজন কিশোরী নিজের পরিবারের পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে গৃহকর্মীর কাজে যোগ দিয়ে কোনো  অপরাধ করেনি।  তাকে যারা হত্যা করেছে, তারা গোটা জাতিকেই হত্যা করেছে। ' 

সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় পরিষদের সভাপতি দীপক শীল বলেন, 'আমরা জেনেছি টাকার বিনিময়ে প্রীতি ওরাংয়ের পরিবারকে মামলা তুলে নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। এ ধরনের চেষ্টা করা হলে দেশের ছাত্র সমাজ বসে থাকবে না। বিচারের দাবিতে সারা দেশে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দিতে বাধ্য হবো। '

সমাবেশে অন্যান্য বক্তারা বলেন, 'প্রীতি ওরাংয়ের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দেশের বুদ্ধিজীবীরা নিষ্ক্রিয় কেন? আপনারাও সোচ্চার হোন। হত্যাকাণ্ডের  শিকার এই মেয়েটি আপনাদের নিকট আত্মীয় হলে বসে থাকতে পারতেন না। প্রীতি ওরাং বিত্তবানের সন্তান নয় বলে বিচার হবে না, এটা হতে পারে না। সে বাংলাদেশের নাগরিক, এটাই তার সবচেয়ে বড় পরিচয়। '

এর আগে গত ৬ ফেব্রুয়ারি সকালে মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের ৮ তলার ফ্ল্যাট থেকে নিচতলার গ্যারেজে পড়ে মারা যায় প্রীতি। রক্তাক্ত অবস্থায় প্রীতিকে উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যান বাসার কেয়ারটেকার। এ ঘটনায় নিহত প্রীতির বাবা লুকেশ ওরাং বাদী হয়ে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেন। এর আগে একই ফ্ল্যাট থেকে গত বছর আগস্ট মাসে ফেরদৌসী (৭) নামের আরেক শিশু গৃহকর্মী পড়ে গিয়ে রক্তাক্ত জখম হয়।

news24bd.tv/aa