ভালোবাসা দিবসে প্রেম-ভালোবাসা সংক্রান্ত ৩৬ মামলার শুনানি

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস

ভালোবাসা দিবসে প্রেম-ভালোবাসা সংক্রান্ত ৩৬ মামলার শুনানি

নওগাঁ প্রতিনিধি 

তিন বছর আগে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া সুরাইয়া আখতার (ছদ্মনাম) নামের কিশোরী রাজিব কুমার (ছদ্মনাম) নামে যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। তাদের এই প্রেম কাহিনীর কথা অল্প সময়ের মধ্যেই জেনে যায় সুরাইয়ার পরিবার। সুরাইয়ার পরিবার এ সম্পর্ক মেনে না নেওয়ায় সুরাইয়া প্রেমিকের হাত ধরে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। ২০২১ সালের ২০ জুন সুরাইয়াকে স্থানীয় একটি মন্দিরে নিয়ে গিয়ে শাখা-সিঁদুর পরিয়ে দেয় রাজিব।

পরে সুরাইয়ার বাবা দায়ের করা অপহরণ মামলায় রাজিবকে গ্রেপ্তার করে পত্নীতলা থানা পুলিশ।  

সুরাইয়া ও রাজিব যুগলের মামলাটি বর্তমানে নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ ও নওগাঁ শিশু আদালত-২-এ বিচারাধীন রয়েছে। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে সুরাইয়া ও রাজিবের মতো অসময়ে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে মামলা বিড়ম্বনা পড়া এবং প্রেম-ভালোবাসা সংক্রান্ত ৩৬টি মামলার শুনানি হয় নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২ ও নওগাঁ শিশু আদালত-২।  

ভালোবাসার পবিত্রতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২ এবং শিশু আদালত-২-এর বিচারক মেহেদী হাসান তালুকদার ভালোবাসা দিবসে প্রেম-ভালোবাসা সংক্রান্ত মামলা শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন।

এসব মামলায় প্রত্যেকটিতেই রয়েছে সুরাইয়া ও রাজিবের মতো প্রেমিক যুগলের রমাঞ্চকর সব গল্প। এ দিন আদালতে মামলা বিড়ম্বনায় পড়ে শুনানির জন্য হাজিরা দিতে আসা যুগলদের লাভ ক্যান্ডি দিয়ে শুভেচ্ছা জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) মকবুল হোসেন।

বিচারক মেহেদী হাসান তালুকদার এ দিন বেলা ১১টায় এজলাসে বসেন। বিচার কার্যক্রম শুরুর আগে, অসময়ে প্রেমে জড়িয়ে মামলা বিড়ম্বনায় পড়া ৩৬ যুগলকে এজলাস কক্ষে ডেকে নেন। এ সময় এজলাস কক্ষে উপস্থিত হওয়া যুগলদের অসময়ের প্রেমে না জড়িয়ে নিজ নিজ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা, পিতামাতার আদেশ মেনে চলা, পড়াশোনা অব্যাহত রাখা, আত্মনির্ভরশীল হওয়া এবং সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিয়োজিত থাকতে উদ্বুদ্ধ করেন বিচারক মেহেদী হাসান তালুকদার। নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২-এর এজলাস কক্ষের সামনে কথা হয় নওগাঁর সাপাহার উপজেলা থেকে আসা ১৬ বছর বয়সী কিশোরী সাথীর (ছদ্মনাম) সঙ্গে। সে জানায়, স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় দশম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় প্রেমিকের কর্মস্থল ময়মনসিংহে গত বছরের ৯ জানুয়ারি পালিয়ে গিয়ে কোর্ট ম্যারেজ করে সে। সেখানে রাজমিস্ত্রী স্বামীর সঙ্গে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতো। ততদিনে তার বাবা স্বামী পরশের (ছদ্মনাম) অপহরণ মামলা করেন। ওই মামলায় পরশকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।  

এরপর আদালত ওই মামলায় পরশকে কারাগারে পাঠিয়ে সাথীকে তার পরিবারের জিম্মায় দেন। মামলা চলমান থাকায় সাথী ও পরশ এখন আলাদা রয়েছে। আজ আদালতে এসে লাভ ক্যান্ডি উপহার পেয়ে এবং বিচারকের কাছ থেকে অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য শুনে খুশি সাথী। সে বলে, এর আগেও কয়েকবার শুনানির দিন আদালতে এসেছিলাম। সেসব দিনে আদালতের পরিবেশ এরকম ছিল না। আজকে বিচারক মিষ্টি করে কথা বললেন। পরামর্শ দিলেন। ভালোবাসা দিবসে আদালতে এমন পরিবেশ দেখি আমি খুশি।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২ ও শিশু আদালত-২-এর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি (পিপি) মকবুল হোসেন বলেন, আজ ভিন্নমাত্রায় আদালত বসেছে। এই আদালতে চলমান অসময়ে প্রেমে জড়ানো ও বিয়ে করা যুগলদের বিরুদ্ধে অভিভাবকদের অপহরণ ও বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের মামলাগুলো আজ শুনানির জন্য রাখা হয়। বিচারক মহোদয় মামলা বিড়ম্বনায় পড়া যুগলদের পড়াশুনার পাশাপাশি ধর্মীয় মূল্যবোধে ও গুরুজনদের আদেশ-নিষেধ মেনে চলার উপদেশ দেন।  

ভালোবাসা দিবসে প্রেম-ভালোবাসা সংক্রান্ত একাধিক মামলার শুনানি হওয়ায় আমি আমার পক্ষ থেকে আজকে আগত সবাইকে লাভ ক্যান্ডি উপহার দিয়ে ভালোবাসার শুভেচ্ছা জানিয়েছি। এতে আমি নিজে তৃপ্ত হয়েছি। ভালোবাসা দিবসে আদালতের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ সম্পর্কে নওগাঁ জেলা অ্যাডভোকেট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, মামলাগুলো ভিন্ন ভিন্ন দিনে শুনানি করলে বিচারক মহোদয় সবাইকে একই উপদেশ দিতে পারতেন না। মামলাগুলো একইদিনে শুনানির উদ্যোগ নিয়ে ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

news24bd.tv/আইএএম