ভালোবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত নীলকান্ত-গীতা দম্পতি

নীলকান্ত-গীতা দম্পতি

ভালোবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত নীলকান্ত-গীতা দম্পতি

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

শারীরিক গঠনে উচ্চতা কম হওয়ায় প্রতিবেশঅ, আত্মীয়-স্বজন এমনকি পরিবারের কাছে হতে হয় নানা কটাক্ষের শিকার। পড়াশোনা করে বড় হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হলেও সম্ভব হয়নি। তবে পড়াশোনা বা চাকরি করে সফল না হলেও ভালোবেসে সফল হয়েছেন তারা দুজন। একজন যেন আরেকজনের পরিপূরক।

হাজারো অভাবে ছেড়ে যাননি একে অন্যের হাত। নীলকান্ত-গীতা দম্পত্তির ভালোবাসার এমন জুটি এখন এলাকায় ভালোবাসার এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

ভালোবেসে একসাথে দীর্ঘ সময় থাকলেও ঠুনকো কারণ কিংবা মতের অমিল ঘটলেও একজন আরেক জনকে ছেড়ে চলে যায়। বর্তমানে সামান্য কারণে বিচ্ছেদ হয় স্বামী স্ত্রীর মাঝে।

ভালোবাসার সংসারে এখন আর তেমন মজবুত নয়। তবে হাজারো মতের অমিল, মানুষের কটাক্ষ, সমাজের হেয় চোখে তাকানোসহ কোনোকিছুই ফাটল ধরাত পারেনি নীলকান্ত-গীতা দম্পতির সুখের সংসারে। সব কিছু উপেক্ষা করে ভালোবেসে একসাথে অতিক্রম করছেন দুই যুগেরও বেশি।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন ইউনিয়নের জোতপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নীলকান্ত ও গীতা রানি। কয়েক মাসের প্রেমের পর ১৯৯৮ সালে পারিবারিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন তারা। সাংসারিক জীবনে এক মেয়ে সন্তানের অভিভাবক তারা। দুজনের উচ্চতা প্রায় ৩ ফুট তরে। এত কম উচ্চতা ও খর্বাকৃতি হওয়ায় দুজনকেই শুনতে হয়েছে সমাজের মানুষের নানান কটু কথা। কিন্তু সেসব কথাকে পাত্তা না দিয়ে একে অপরকে ভালোবেসে একসাথে পার করে দিয়েছেন দুই যুগেরও বেশি সময়।

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক কমল রায় বলেন, তারা শুধু দেখতে খাটো। এটিই তাদের একটা অপূর্ণতা। সবার জীবনেই একটা না একটা সমস্যা থাকে। তাদের জীবনে এ রকমটাই ছিল। তবে তাদের যে মিল মহব্বত এটা অনেক বেশি। আমরা তাদের মাঝে কখনো বড় কোনো সমস্যা দেখিনি। তারা সবসময় হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করে। তাদের মত স্বামী-স্ত্রী প্রতিটা সংসারে হওয়া উচিত।

গীতা রানী বলেন, সংসার মানে সমস্যা, ঝগড়া ও নানা ঝুট ঝামেলা। অনেক সময়ে এসব বাড়লেও কখনো চিন্তাও করিনি তাকে ছেড়ে যাব। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একসাথে থাকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আমরা।

নীলকান্ত বলেন, সৃষ্টিকর্তা আমাকে এভাবেই পৃথিবীতে বাঁচাতে চেয়েছেন। তিনি আমাকে ভালো রেখেছেন। মানুষের কটু কথা শুনেও আমি পড়াশোনা চালিয়ে গেছি। তবে সমস্যার কারণে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা হয়নি। তারপরে কাজ করে সংসার চালাই। এক মেয়ে আমার। তাকে পড়াশোনা করিয়ে বিয়ে দিয়েছি। বাবার দেওয়া ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছু নেই। শুধু যে ঘরটিতে আমি থাকি সেটি আমার। বাবা-মায়ের ঘরটা মায়ের নামে। কিছুদিন আগে বাবা মারা গেছেন। মা আমার নামে জমিটা দিতে চান। তবে সেটি আমার নামে করে নেওয়ার মতো কোনো খরচ আমার নেই। কয়েক মাস আগে এক দোকানে থাকতাম। সেটা বাদ দিয়ে এখন দিনমজুরি করি। ঘরটাও আমার প্রায় ভাঙা। টাকার অভাবে সংস্কার করতে পারছি না। তারপরেও আমার স্ত্রী সঙ্গ দিয়ে আসছেন। কখনো তিনি আমাকে হতাশ করেননি। সবসময় আমাকে সার্পোট দিয়ে থাকেন। এটি আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি। আর ঘর সংস্কারের জন্য আমাকে আপনারা সহযোগিতা করতে পারেন।

সদর উপজেলার নারগুন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেরেকুল ইসলাম বলেন, তারা দুজনে একই উচ্চতার। তাদের মধ্যে ভালোবাসার মধুর সম্পর্ক খুব কাছ থেকে দেখেছি। তারা সুন্দর করে জীবনযাপন করছেন। তারা ভালাবাসার কথা এখন সবার মুখে মুখরিত হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সবসময় তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করা হয়।

news24bd.tv/আইএএম