চতুর্থ সন্তানও মেয়ে জানতে পেরে গর্ভপাতের চেষ্টা, অতঃপর...

বাগবাড়ী এলাকার মারিয়া নার্সিং হোম - নিউজ টোয়েন্টিফোর

চতুর্থ সন্তানও মেয়ে জানতে পেরে গর্ভপাতের চেষ্টা, অতঃপর...

শেরপুর প্রতিনিধি

আগের তিন সন্তান মেয়ে হওয়ায় পুত্র সন্তানের আশায় স্ত্রীকে চতুর্থ সন্তান নেওয়ার চাপ দিচ্ছিলেন স্বামী আরিফুল ইসলাম মনসুর। বাধ্য হয়ে তার কথায় সায় দেন স্ত্রী রেহানা খাতুন। কিন্তু আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে জানা যায়, আবারও এই দম্পতির কোলজুড়ে আসতে চলেছে মেয়ে। তাই রেহানাকে মনসুর গর্ভপাত করাতে বলেন।

সেই উদ্দেশ্যেই রেহানাকে শেরপুর শহরের বাগবাড়ী এলাকার মারিয়া নার্সিং হোমে গর্ভপাত করাতে নিয়ে যান মনসুর। কিন্তু কোনো চিকিৎসক ছাড়াই ক্লিনিক মালিক ও তার স্ত্রী গর্ভপাত করাতে গেলে মারা যান রেহানা বেগম।

এমন ঘটনাই ঘটেছে শেরপুর সদর উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের তিলকান্দি গ্রামে। রেহানার স্বজনদের দাবি, গর্ভপাতের নামে রেহানাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

এ ঘটনায় আরিফুল ইসলাম মনসুরকে প্রধান আসামি করে চারজনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেছেন নিহত রেহানার বাবা জয়নাল আবেদীন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ক্লিনিক মালিক বিপ্লব আহমেদ (৫৪) ও তার স্ত্রী নার্স নাজনীন আহমেদকে (৪২) গ্রেপ্তার করেছে।

জানা গেছে, শেরপুর সদর উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের তিলকান্দি গ্রামের মো. জয়নাল আবেদীন তার মেয়ে রেহানা আক্তারকে বিয়ে দেন একই গ্রামের আশরাফ আলীর ছেলে আরিফুল ইসলাম মনসুরের সঙ্গে। বিয়ের পর ওই দম্পতির কোলজুড়ে আসে তিন মেয়ে সন্তান। এরপর থেকেই ছেলে সন্তানের জন্য স্ত্রী রেহানা আক্তারের ওপর নির্যাতন চালিয়ে আসছিল স্বামী মনসুর। পরবর্তীতে ছেলে সন্তানের আশায় এই দম্পতি আবার সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এক সময় গর্ভবতী হন রেহেনা।  
গর্ভধারণের সাড়ে ছয় মাস পর আল্ট্রাসোনোগ্রাম করে মনসুর জানতে পারেন আবারও কন্যা সন্তানের বাবা হতে যাচ্ছেন তিনি। আর এতেই বেঁকে বসেন তিনি। গর্ভপাত করাতে বাধ্য করেন স্ত্রীকে। তার চাপেই ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে শহরের মারিয়া নার্সিং হোমে নিয়ে ক্লিনিকের মালিক বিপ্লব আহমেদ ও তার স্ত্রী নার্স নাজনীন আহমেদ ও আসমানী নামের এক নারী মিলে রেহানার গর্ভপাত করায়। এসময় রেহানার মৃত্যু হয়। পরে স্বামী মনসুর দ্রুত রেহানার লাশ বাড়িতে নিয়ে দাফন করার চেষ্টা করেন। কিন্তু রেহানার পরিবারের লোকজন টের পেয়ে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোনো কাগজপত্র না থাকায় সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে ক্লিনিকটি বন্ধ করে দেয় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ক্লিনিকের লাইসেন্স পায় ক্লিনিকটি। সরেজমিনে হাসপাতালের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, অপরিচ্ছন্ন ও ঘিঞ্জি পরিবেশেই ক্লিনিকটি পরিচালিত হচ্ছে। অপারেশন থিয়েটারের পরিবেশও ভালো নয়। অপারেশ টেবিলের উপড়ের সার্জিকেল লাইটের জায়গায় নিম্নমানের এলইডি লাইট লাগিয়ে রাখা হয়েছে।

নিহত রেহানার বাবা মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, আমার মেয়েটাকে ছেলে সন্তানের জন্য অনেক নির্যাতন করেছে মনসুর। ছেলে সন্তান না হওয়ায় পরিকল্পিতভাবে সে আমার মেয়েরে হত্যা করেছে। আমি তার কঠিন বিচার চাই।

নিহতের ভাই মো. নাজমুল হক বলেন, মনসুর আমার বোনকে অনেক নির্যাতন করেছে। সে আবার বিয়ে করার জন্য আমার বোনকে হত্যা করেছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।

নিহতের আরেক স্বজন বলেন, এটা পরিকল্পিত ডাবল মার্ডার। ছয়মাসের গর্ভবতী মহিলাকে গর্ভপাত করাতে চিকিৎসকের প্রয়োজন। চিকিৎসক ছাড়া এমন কাজ করেই রেহানাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এর বিচার দাবি করছি।

চিকিৎসক ছাড়া এমন গর্ভপাত ঘটানো বিধিসম্মত নয় বলে জানিয়েছেন শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মো. খায়রুল কবির সুমন। তিনি জানান, ময়নাতদন্তের পরই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে।

এ ব্যাপারে শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হক বলেন, এ ঘটনায় নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। নিহতের স্বজনদের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একইসঙ্গে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

ক্লিনিকের বিষয়ে জানতে চাইলে শেরপুরের সিভিল সার্জন ড. অনুপম ভট্টাচার্য্য বলেন, লাইসেন্স না থাকায় ক্লিনিকটি আমরা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। পরে তারা লাইসেন্স পেয়েছে। আমরা যখন ভিজিটে যাই তখন চিকিৎসক, নার্স, যন্ত্রপাতি সবই ঠিক থাকে। পরে যদি কেউ পরিবর্তন করে তাহলে তো আমাদের জানার উপায় নেই।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে আমরা গিয়ে ক্লিনিকটি তালাবদ্ধ পেয়েছি। ওই ক্লিনিকের বিষয়ে যদি কেউ অভিযোগ করে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

news24bd.tv/SHS   

এই রকম আরও টপিক