পুতিনের সমালোচক নাভালনির আকস্মিক মৃত্যু

২০২১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি মস্কোর একটি আদালতে মামলার শুনানি চলাকালে কাঁচে ঘেরা একটি কক্ষে দাঁড়িয়ে অ্যালেক্সি নাভালনি

পুতিনের সমালোচক নাভালনির আকস্মিক মৃত্যু

অনলাইন ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচক হিসেবে পরিচিত দেশটির বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনিনের মৃত্যু হয়েছে। নাভালনি মধ্য রাশিয়ার কারাগারে হাঁটার সময় অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এই তথ্য জানিয়েছেন রাশিয়া ‍টুডে।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে ইয়ামালো-নেনেতস স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ফেডারেল পেনাল সার্ভিস জানিয়েছে, অর্থ আত্মসাৎসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগে সংশোধনাগারে সাজা ভোগ করা ৪৭ বছর বয়সী নাভালনি হাঁটার পর 'অসুস্থ বোধ করেন', প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, নাভালনি অসুস্থ হয়ে পড়লে দেরি না করে চিকিৎসক ও অ্যাম্বুলেন্স ডাকা হয়েছিল। কিন্তু তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।  প্যারামেডিকরা তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।  স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তার মৃত্যুর সঠিক কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত চলছে।

ক্রেমলিন জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে নাভালনির মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছে।  

প্রসঙ্গত, এর আগে গত বছর নিখোঁজ অ্যালেক্সেই নাভালনির খোঁজ পাওয়া যায় সাইবেরিয়ার একটি পেনাল কলোনি বা কারাগারে।

গত ২৫শে ডিসেম্বর নাভালনির মুখপাত্র কিরা ইয়ারমিশ বলেছিলেন, “আমরা অ্যালেক্সেই নাভালনিকে পেয়েছি। বর্তমানে রাশিয়ার উত্তরাঞ্চলে রয়েছেন তিনি। ”

এর আগে গত ছয়ই ডিসেম্বরের পর থেকে নিজের দলের সাথে কোন যোগাযোগ ছিল না নাভালনির। সেদিন তাকে আগের একটি কারাগার থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল।

নাভালনিকে রাশিয়ায় ভ্লাদিমির পুতিনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নেতা মনে করা হয়। তিনি ২০২১ সাল থেকে কারাগারে আটক রয়েছেন।

ইয়ারমিশ বলেছেন, নাভালনিকে রাশিয়ার উত্তরাঞ্চলের স্বায়ত্তশাসিত জেলা ইয়ামালো-নেনেটস এর খার্পে অবস্থিতি আইকে-৩ নামে একটি পেনাল কলোনিতে স্থানান্তর করা হয়েছে।

পেনাল কলোনি হচ্ছে এক ধরণের বসতি যেখানে কারাবাসীদের নির্বাসনে দেয়া হয় এবং তাদেরকে একটি দুর্গম জায়গা বা দ্বীপে রাখার মাধ্যমে বাকি জনগোষ্ঠী থেকে আলাদা করা হয়।

কে এই অ্যালেক্সেই নাভালনি?
প্রেসিডেন্ট পুতিনের কড়া সমালোচক হিসেবে পরিচিত আলেক্সেই নাভালনি। সরকারের দুর্নীতি প্রকাশ করে দেবার মধ্যে দিয়ে রাজনীতিতে তার নাম উঠে আসে। তিনি পুতিনের ইউনাইটেড রাশিয়া দলকে উল্লেখ করেছিলেন "অসৎ ও চোরেদের দল" বলে। এজন্য বেশ কয়েকবার তাকে জেলে যেতে হয়েছে।

পুতিনের ইউনাইটেড রাশিয়া সংসদীয় নির্বাচনে ভোট কারচুপি করেছে বলে প্রতিবাদ করার পর তাকে ২০১১ সালে ১৫ দিনের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়।

নাভালনিকে ২০১৩র জুলাইয়ে তছরূপের অভিযোগে অল্পদিনের জন্য জেলে পাঠানো হয়, তবে তিনি বলেন, এই দণ্ডাদেশ ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

তিনি ২০১৮র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু প্রতারণার দায়ে তিনি আগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এই কারণ দেখিয়ে তাকে প্রার্থিতা দেয়া হয়নি। নাভালনির মতে, এটাও ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

এরপর ২০১৯ জুলাইতে নাভালনিকে আবার কারাগারে পাঠানো হয় অনুমোদন না থাকার পরও প্রতিবাদ বিক্ষোভ সংগঠনের জন্য। সেসময় তিনি কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েন।

চিকিৎসকরা বলেন তার "কোন কিছুর স্পর্শ থেকে চামড়ার প্রদাহ" হয়েছে। কিন্তু নাভালনি বলেন, তার কোনদিন কোন কিছু থেকে অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া আগে হয়নি।

তার নিজের চিকিৎসক বলেন তিনি "কোন বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে'' এসেছিলেন। নাভালনিও বলেছিলেন তার ধারণা তাকে বিষ দেয়া হয়েছে।

নাভালনির ওপর ২০১৭ সালে অ্যান্টিসেপটিক রং দিয়ে হামলা চালানো হলে তার ডান চোখ রাসায়নিকে গুরুতরভাবে পুড়ে যায়।

২০২২ সালে তার দুর্নীতি বিরোধী ফাউন্ডেশনকে সরকারিভাবে "বিদেশি গুপ্তচর সংস্থা" বলে ঘোষণা করা হয়। ফলে এই সংস্থার কর্মকাণ্ডের ওপর সরকার কঠোর নজরদারি শুরু করে।

news24bd.tv/aa