নারীরা যেভাবে রমজান মাসের প্রস্তুতি নেবে

নারীরা যেভাবে রমজান মাসের প্রস্তুতি নেবে

 শরিফ আহমাদ

শাবান একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস। এ মাসের চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গে মুমিন হৃদয়ে আনন্দের জোয়ার আসে। রমজানের সাজ সাজ রব পড়ে যায়। দেশের আনাচকানাচে রমজানের পূর্ণ প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়।

মুসলিম নারীদের রমজান-প্রস্তুতি চোখে পড়ার মতো। তাদের নানা উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসিত।

শাবান মাসে দোয়ার আমল

নারী-পুরুষ সবাইকে মূলত দোয়ার মাধ্যমে আমলি বসন্তে প্রবেশ করতে হয়। দোয়াটি রজব থেকে শুরু করে পুরো শাবান মাস পাঠ করতে হয়।

শাবান মাসের রহমত ও বরকত লুফে নিতে হয়।  উসমান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, শাবান আমার মাস আর রমজান আল্লাহর মাস। (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩৮১৩)
গুরুত্বপূর্ণ দোয়াটি আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রজব মাস শুরু হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) এই দোয়া পাঠ করতেন—‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান ওয়াবাল্লিগনা রমাদান।

’ হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করুন এবং আমাদের রমজান মাস পর্যন্ত হায়াত বৃদ্ধি করে দিন। (বায়হাকি, হাদিস : ৩৫৩৪; আল মুজামুল আওসাত, হাদিস : ৩৯৩৯)

রোজার মাধ্যমে প্রস্তুতি

শাবান মাসে বেশি পরিমাণে নফল রোজা রাখতে হয়। রোজার অনুশীলন করতে হয়। অনুশীলন থাকলে প্রত্যেকটি কাজ সহজ ও সফল হয়। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) শাবান মাসের চেয়ে বেশি নফল রোজা কোনো মাসে পালন করতেন না।

তিনি প্রায় পুরো শাবান মাসে রোজা পালন করতেন এবং বলতেন, তোমাদের সাধ্যমতো নফল আমল করো। কারণ তোমরা (নফল আমল করতে করতে) ক্লান্ত হয়ে না পড়া পর্যন্ত আল্লাহপাক (সওয়াব দান) বন্ধ করেন না। (বুখারি, হাদিস : ১৮৪৬)

শাবান মাসে নারীদের কাজা রোজা আদায়ের মাধ্যমে রমজানের পূর্ণ প্রস্তুতি সম্পন্ন করা যায়। আয়েশা (রা.) বলেন, বিগত বছরের রমজানের রোজা আমার ওপর আবশ্যক থাকলে, নতুন বছরের রোজা আগমনের আগে শাবান মাসে আমি সে রোজাগুলোর কাজা আদায় করে ফেলতাম। (বুখারি, হাদিস : ১৯৫০)

সাংসারিক কাজ গুছানো

রমজান আসার আগেই নারীদের সাংসারিক কাজ গুছিয়ে নিতে হয়। তাহলে রমজানে নারীদের ওপর বাড়তি চাপ কমে যায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের সঙ্গে ইফতারসামগ্রীর ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিতে হয়। নিজের সুস্বাস্থ্য এবং বিশ্রামের প্রতিও নজর রাখতে হয়। আমর ইবনে মায়মুন (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, পাঁচ জিনিসের আগে পাঁচ জিনিসকে মূল্যায়ন করো। যৌবনকে মূল্যায়ন করো বার্ধক্যের আগে, সুস্থতা মূল্যায়ন করো অসুস্থতা আসার আগে, সচ্ছলতা মূল্যায়ন করো দারিদ্র্য আসার আগে, অবসর মূল্যায়ন করো ব্যস্ততা আসার আগে এবং জীবনকে মূল্যায়ন করো মৃত্যু আসার আগে। (শুয়াবুল ঈমান, হাদিস : ১০২৪৮; মুস্তাদরাক হাকেম, হাদিস : ৭৮৪৬)

ইবাদতের পরিবেশ ও রুটিন

শাবান মাসে নারীদের ইবাদতের পরিবেশ তৈরি করে নিতে হয়। উত্তম পরিবেশ আকাশ থেকে নেমে আসে না। নিজেদের মেহনত ও বুদ্ধিতে তৈরি করতে হয়। দ্বিনি পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গে ইবাদতের রুটিন তৈরি করতে হয়। রুটিন ছাড়া কাজে সফল হওয়া বেশ কঠিন। এ জন্য সব নারীকে রোজা, তারাবি, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজগার, তালিম-তারবিয়াত ও বিশ্রামের জন্য রুটিন তৈরি করে রাখতে হয়। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, সব কাজ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক ব্যক্তি তা-ই পাবে যা সে নিয়ত করবে। (বুখারি, হাদিস : ১)

নিয়তের শক্তি ও ঈমানি শক্তির সমন্বয়ে রমজানে বন্দি হওয়া শয়তানের অপকৌশলের বিরুদ্ধে বিজয়ী হওয়া যায়। আমলের রুটিন বাস্তবায়িত হয়। মহান আল্লাহর মদদ চলে আসে। কোরআনে এসেছে, ‘যারা আমার উদ্দেশ্যে প্রচেষ্টা চালায়, আমি তাদের অবশ্যই আমার পথে উপনীত করব। নিশ্চয়ই আল্লাহ সত্কর্মশীলদের সঙ্গে আছেন। ’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ৬)