জন্মের পরেই সন্তানকে অন্যের হাতে তুলে দিলেন বাবা-মা

সন্তানদের সঙ্গে বাবা-মা

জন্মের পরেই সন্তানকে অন্যের হাতে তুলে দিলেন বাবা-মা

হুমায়ুন কবির সূর্য, কুড়িগ্রাম

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে অভাবের তাড়নায় জন্মের মাত্র ৫ ঘণ্টার মধ্যে কন‍্যা সন্তানকে অন্যের হাতে তুলে দেন বাবা। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বঙ্গসোনাহাট ইউনিয়নের বানুরকুটি গ্রামে।

ওই গ্রামের মৃত্যু মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে শফিকুল ইসলামের (৩২) স্ত্রী মরিয়ম বেগম (২৮) শনিবার ভোর পাঁচটার দিকে নিজ বাড়িতে একটি কন‍্যা সন্তানের জন্ম দেন। ওই সন্তানকে ভরণ-পোষণ দিতে না পারার শঙ্কায় জন্মের মাত্র ৫ ঘণ্টা পর সকাল ১০টার দিকে তুলে দেন প্রতিবেশী এক মামাতো বোনের হাতে।

এটি ওই দম্পতির পঞ্চম সন্তান। তবে লোকমূখে ছড়িয়েছে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে অন্যের হাতে সন্তানকে তুলে দিয়েছেন বাবা শফিকুল ইসলাম।

অপরদিকে চার বছর আগে ওই দম্পতি আরেক কন্যা সন্তানকে অজানা লোকের কাছে তুলে দেন।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, শফিকুল ইসলাম একজন বন্দর শ্রমিক।

তিনি সোনাহাট বন্দরে শ্রমিকের কাজ করেন। তার তিন শতক জমি রয়েছে। তবে থাকার কোনো ঘর নাই। ছোট ভাইয়ের ঘরে থাকেন পরিবার নিয়ে। প্রায় ১৩ বছর আগে নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লভের খাষ ইউনিয়নের খাষমহল গ্রামের মরিয়ম বেগমকে বিয়ে করেন তিনি। অভাবের সংসারে ইতিমধ্যে জন্মগ্রহণ করেছে ৪টি সন্তান। প্রথম সন্তান মফিজুল ইসলামের বয়স ৯ বছর, দ্বিতীয় সন্তান জান্নাতের বয়স ৭ বছর। এরপর তৃতীয় সন্তান ৪ বছর আগে জন্ম নিলেও নাম রাখা হয়নি। একদিন বয়সে প্রতিবেশী আকলিমার মাধ্যমে রামখানা ইউনিয়নের অজান দম্পতির কাছে দত্তক দিয়েছেন।

চতুর্থ সন্তান মোস্তফার বয়স ৩ বছর। এরপর পঞ্চম সন্তান মুক্তি জন্ম নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দিয়ে দেন প্রতিবেশী মামাতো বোন নিঃসন্তান  লাকী বেগম ও আলমগীর দম্পতির কাছে।

লাকী ও আলমগীর দম্পতির বাড়ি ভূরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে। তবে এই দম্পতি ঢাকায় পোশাক শ্রমিক হিসেবে কাজ করে বলে নিশ্চিত করেছেন লাকী বেগমের বাবা আকবর আলী।

স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, শফিকুলের নিজস্ব ঘর-বাড়ি নেই। ছোট ভাইয়ের বাড়িতে থাকে। স্থলবন্দরে পাথর ভাঙা শ্রমিকের কাজ করে খুব কষ্ট করে সংসার চালায়। এই লোকের বর্তমানে তিনটি বাচ্চা আছে। এ নিয়ে তিনি দুটি মেয়ে বাচ্চা দত্তক দিয়েছেন।

শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি সোনাহাট স্থলবন্দরে পাথর ভাঙ্গা শ্রমিকের কাজ করি। আমার থাকার কোনো ঘর নেই। ছোট ভাইয়ের বাড়িতে থাকি। শ্রমের সামান‍্য আয় দিয়ে অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসা, তিন সন্তানের ভরণ-পোষণ ও সংসারের খরচ চালানো আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবসময় অভাবের মধ্যে থাকতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে বুকের ধনকে অ‍ন্যের হাতে তুলে দিয়েছি। এর আগেও আরেক মেয়েকেও অন্যের কাছে দিয়েছি। সেটার খোঁজখবর জানি না। বলতে পারেন অভাবের কারণেই এই পথে হাটা। এছাড়াও ২০ হাজার টাকায় সন্তানকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার কথা সত্য নয় বলে দাবি করে বলেন, এতগুলো সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। অন্যের কাছে ভালো পরিবেশে আদর-যত্নে মানুষ হবে এই ভেবে তাদের দিয়েছি। টাকা নেওয়ার প্রশ্নই আসে না।

শফিকুলের স্ত্রী মরিয়ম বেগম জানান, অভাব অনটনের জন্য মেয়েকে অন্যের কাছে দিয়েছি। সন্তানকে বিক্রি বা টাকার বিনিময়ে দিইনি।

শিশুকে দত্তক নেওয়া আলমগীর হোসেন জানান, আমরা নিঃসন্তান হওয়ায় শিশুটিকে দত্তক নিয়েছি। টাকা-পয়সা দিয়ে কিনে নেওয়ার বিষয়টি সত্য নয়।

ইউপি সদস‍্য মনোয়ার হোসেন জানান, পূর্বে একটি সন্তান দত্তক দেওয়ার কথা জেনেছি। আজকের তথ‍্য আমার জানা নেই। তবে লোকটা খুব অভাবি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম ফেরদৌস জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ-খবর নেবেন বলে তিনি জানান।

news24bd.tv/তৌহিদ

এই রকম আরও টপিক