লোক দেখানো ইবাদতের পরিণতি

প্রতীকী ছবি

লোক দেখানো ইবাদতের পরিণতি

 মাইমুনা আক্তার

মানুষের যেসব অভ্যাস তাকে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করে তার মধ্যে একটি হলো শো অফ, বিশেষ করে ভার্চুয়াল জগতে মানুষ নিজেকে শো অফ করতে বেশি পছন্দ করে। যেহেতু সেখানে খুবই সহজেই অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। একসঙ্গে বহু মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়। মানুষের মাঝে ধন-সম্পদ নিয়ে শো অফ করার প্রবণতা বৃদ্ধি কিয়ামতের অন্যতম আলামত।

হাদিস শরিফে কিয়ামতের আলামত সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে, আর যখন বস্ত্রহীন, জুতাহীন (ব্যক্তি) জনগণের নেতা হবে, এটাও তার একটি নিদর্শন। আর মেষ শাবক ও ছাগলের রাখালরা যখন সুউচ্চ দালানকোঠা নিয়ে পরস্পর গর্ব করবে, এটাও তার একটি নিদর্শন। (মুসলিম, হাদিস : ৫)

ইসলামের দৃষ্টিতে অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য লৌকিকতার আশ্রয় নেওয়া নিন্দনীয়। ইবাদতের ক্ষেত্রে তার আশ্রয় নেওয়াকে তো এক প্রকারের শিরক বলেও আখ্যায়িত করা হয়।

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, মাহমুদ ইবনে লাবিদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি তোমাদের ওপর যা ভয় করি তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হচ্ছে শিরকে আসগর (ছোট শিরক)। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসুল শিরকে আসগর কী? তিনি বললেন, রিয়া (লোক-দেখানো আমল), আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তাদেরকে (রিয়াকারীদের) বলবেন, যখন মানুষকে তাদের আমলের বিনিময় দেওয়া হবে : তোমরা তাদের কাছে যাও যাদেরকে তোমরা দুনিয়াতে দেখাতে, দেখ তাদের কাছে কোনো প্রতিদান পাও কি না। (মুসনাদে আহমদ)
নিজেকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সম্ভ্রান্ত ও ধনী দেখাতে গিয়ে মানুষ এমন কিছু কাজ করে, যা তার জীবনে অভাব-অনটন নামিয়ে আনে। তাকে আল্লাহর জিকির থেকে বিরত করে মরীচিকার পেছনে ছুটতে উদ্বুদ্ধ করে।

অথচ মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের খরচের ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মধ্যপন্থা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি একেবারে ব্যয়কুণ্ঠ হয়ো না, আর একেবারে মুক্তহস্তও হয়ো না, তাহলে তুমি তিরস্কৃত, নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে। ’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৯)

যারা অনলাইনে কিংবা অফলাইনে শো অফ করতে অভ্যস্ত, তারা সাধারণত একসময় অভাবে পড়ে যায়। কারণ তারা নিজেকে এমন পর্যায়ের লোক বলে প্রদর্শন করতে চায়, বাস্তবে তারা যে পর্যায়ের নয়।

ফলে একসময় তারা কষ্টে পড়ে যায়। যাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তারা নিজের সাধ্যের বাইরে গিয়ে শো অফ করে, তাদের কাছেও একসময় বাস্তব চিত্রটা পরিষ্কার হয়ে যায়। ফলে শো অফকারী মানুষের কাছে আস্থা হারায়। একসময় তারা নিজেকেও নিজে হারিয়ে ফেলে। হতাশায় পড়ে যায়।

অনেক সময় শো অফ আবার অহংকার থেকে হয়, যা মানুষকে আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয় করে তোলে। ইবনে ওমর (রা.) বলেন, নবী‎ (সা.) বলেছেন, এক ব্যক্তি গর্ব ও অহংকারের সঙ্গে লুঙ্গি টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পথ চলছিল। এ অবস্থায় তাকে জমিনে ধসিয়ে দেওয়া হলো এবং কিয়ামত পর্যন্ত সে এমন অবস্থায় নিচের দিকেই যেতে থাকবে। (বুখারি, হাদিস : ৩৪৮৫)

তবে এর মানে এই নয় যে সুন্দর ও পরিপাটি হয়ে চলাফেরা করা যাবে না, কারণ মহান আল্লাহ সৌন্দর্যকে ভালোবাসেন। তবে কোনো অবস্থায়ই অপচয় করা যাবে না। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে আদম সন্তান, প্রত্যেক নামাজের সময় তোমরা সুন্দর পোশাক গ্রহণ করো। আর পানাহার করো; কিন্তু অপচয় কোরো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না। ’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩১)

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে চলার তাওফিক দান করুন।


 

এই রকম আরও টপিক