দুই বোনের মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে রাজশাহীতে আইইডিসিআর

রাজশাহীতে শিশু মৃত্যুর ঘটনা খতিয়ে দেখছে ঢাকা থেকে আগত আইইডিসিআরের প্রতিনিধি দল।

দুই বোনের মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে রাজশাহীতে আইইডিসিআর

অনলাইন ডেস্ক

রাজশাহীতে দুই শিশুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা খতিয়ে দেখতে ঢাকা থেকে আগত জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট- আইইডিসিআরের ৩ সদস্যের দল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অবস্থান করছে। কথা বলছেন শিশু দুটির বাবা মায়ের সঙ্গে।

সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে তিন সদস্যের তদন্ত টিম রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩০ নম্বর নিপাহ আইসোলেশান ওয়ার্ডে ভর্তি শিশুর পিতা মিজানুর রহমান ও মাতা পলি খাতুনের সঙ্গে কথা বলছেন। শিশু দুটির ও তাদের বাবা মায়ের রোগের কেস হিস্ট্রির বিষয়ে শুনছেন।

এছাড়া মৃত দুই শিশুর নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এ সময় হাসপাতালের পরিচালক ও চিকিৎসকরা আইডিসিয়ারের টিমের সঙ্গে মৃত শিশুর বাবা-মায়ের সঙ্গে হাসপাতালের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে কথা বলেন।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ বলেন, মৃত দুই শিশু ও তারা বাবা মা কী রোগে আক্রান্ত তার সঠিক কারণ বের করতে আইইডিসিইআর অধিকতর তদন্তের জন্য এখানে এসেছে। মৃত্যুর সঠিক কারণ বের করতে তারা কাজ করছে।

ঢাকায় পাঠানো আগের নমুনা পুনরায় পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে।  

এছাড়া মৃত শিশুর পাকস্থলীর খাবারের নমুনা হাসপাতালে সংরক্ষণ করে রাখা আছে। পাকস্থলী ঢাকায় পাঠিয়ে বিষক্রিয়া ছিল কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা হবে।

আরও পড়ুন: রাজশাহীতে অজানা ভাইরাসে আক্রান্তদের দেহে নিপাহ শনাক্ত হয়নি

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম শামীম আহাম্মদ বলেছিলেন, নমুনা পরীক্ষা কিছু না পাওয়ার পর তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের (প্রশাসন) শরণাপন্ন হন। একটা বিশেষজ্ঞ দলকে রাজশাহী পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছিলেন।

দুই দিনের ব্যবধানে অজানা ভাইরাসে  মারা যাওয়া ওই দুই শিশুর মধ্যে একজনের নাম মুনতাহা মারিশা ও মুফতাউল মাশিয়া। আগামী ২ মার্চ মুনতাহা মারিশার বয়স হতো দুই বছর। আর আগামী ৩০ মে পাঁচ বছর পূর্ণ হতো মুফতাউল মাশিয়ার। তাদের বাবার নাম মনজুর রহমান (৩৫)। তিনি রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক। বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামে। তবে স্ত্রী পলি খাতুন (৩০) ও তাদের দুই শিশুকন্যা নিয়ে চারঘাটের সারদায় ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারেই থাকতেন।

জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ চত্বরে থাকা গাছের বরই কুড়িয়ে এনে দুই শিশুকে খেতে দিয়েছিলেন তাদের গৃহকর্মী। না ধুয়েই সেই বরই খেয়েছিল এই দম্পতির দুই শিশু সন্তান। এরপর তারা অসুস্থ হয়ে পড়ে।  

পরদিন বেলা ১১টার দিকে হঠাৎ ছোট মেয়ে মারিশার শরীরে ভীষণ জ্বর আসে। এ সময় তারা বার বার পানি পান করছিল। দুপুর থেকে বমি শুরু হয়। তখন মেয়েকে নিয়ে তারা একটি মাইক্রোবাসে করে রাজশাহীর সিএমএইচ হাসপাতালে আসছিলেন। মাইক্রোবাসেও মারিশা বুকের দুধ পান করে। তবে শহরের অদূরে কাটাখালী এলাকায় মায়ের বুকেই মৃত্যু হয় মারিশার।

আরও পড়ুন: রাজশাহীতে অজানা ভাইরাসে দুই বোনের মৃত্যু, আইসোলেশনে বাবা-মা

শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে মাশিয়ার শরীরেও জ্বর আসে। একই সঙ্গে শুরু হয় বমি। অবস্থা বেগতিক দেখে দুর্গাপুরের গ্রামের বাড়ি থেকে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখান থেকে পরে তাকে রাজশাহী সিএমএইচে নেওয়া হয়। এরপর রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাশিয়ার পুরো শরীরেও ছোপ ছোপ কালশিটে দাগ উঠতে শুরু করে। তা দেখে সিএমএইচের চিকিৎসকরা মাশিয়াকে রামেক হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। রাত ৯টার দিকে তাকে রামেক হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করেন। কিন্তু আইসিইউতে পর্যবেক্ষণ থাকা মাশিয়াও পরদিন শনিবার বিকেলে মারা যায়।

শনিবার বিকেলে নিকট স্বজনদের মাধ্যমে মাশিয়ার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়। সন্ধ্যার পরে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে মরদেহ দাফন করা হয়। সেখানে গত বুধবার রাতে ছোট মেয়ে মারিশাকেও দাফন করা হয়েছে।

রামেক হাসপাতালের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে থাকা মনজুর রহমান ও তার স্ত্রী পলি খাতুনের অবস্থা এখন পর্যন্ত স্থিতিশীল। তবে তাদের পাশাপাশি শয্যায় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। শিশুদের বাবা-মাকে আর হাসপাতাল থেকে যেতে দেননি চিকিৎসকরা। বর্তমানে এই দম্পতি রামেক হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন।

news24bd.tv/DHL