ভোরে বৃদ্ধ দম্পতিকে টেনে-হিঁচড়ে বাসা থেকে নামিয়ে দিলেন চেয়ারম্যান

ভাড়া বাসা থেকে নামিয়ে দেওয়ার পর বাইরেই থাকতে হচ্ছে এই দম্পতিকে - নিউজ টোয়েন্টিফোর

ভোরে বৃদ্ধ দম্পতিকে টেনে-হিঁচড়ে বাসা থেকে নামিয়ে দিলেন চেয়ারম্যান

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

ঠাকুরগাঁওয়ে জায়গা-জমির নিয়ে বিরোধের জেরে এক বৃদ্ধ দম্পতিকে ভোরবেলায় বাড়ি থেকে বের করে ওই রুমের দরজায় তালা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে এক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান লিটন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব পালন করছেন।

বৃদ্ধ দম্পতি আব্দুল হালিম ও জ্যোৎস্না বেগম জানান, গত ১০ দিন আগে পৌর শহরে ওয়ার্ড-১ দক্ষিণ সালন্দর শান্তিনগর এলাকায় স্থানীয় এক স্কুল শিক্ষিকার বাসা ভাড়া নেন তারা। গত শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৬টায় অভিযুক্ত চেয়ারম্যান ও তার লোকজন তাদের ঘুম থেকে ডেকে টেনে-হিঁচড়ে ঘরের বাইরে বের করে দেন এবং বাড়ির মূল ফটকে তালা দিয়ে হুমকি দেন।

 

এই দম্পতি আক্ষেপ করে বলছিলেন, আমরা ভাড়াটে হিসেবে উঠেছিলাম। জায়গা জমি নিয়ে বাড়ির মালিক ও চেয়ারম্যানের মধ্যে কী সমস্যা আছে, সেটা তাদের বিষয়। কিন্তু আমাদের সঙ্গে এমন অন্যায় কেন করা হলো? আমরা এর বিচারের দাবি জানাই।

আব্দুল হালিম বলেন, তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে ট্রাক চালান।

এমন পরিস্থিতিতে স্ত্রী-সন্তানদের বাইরে রেখে কাজে যেতে হয়। আমাদের হাড়ি-পাতিল, আসবাবপত্র, কাপড়-চোপড়সহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সবই বাড়ির ভেতর। কিন্তু সেখানে এখন অপরিচিত ব্যক্তিরা অবস্থান করছে।

বাড়ি ভাড়া দেয়া স্কুল শিক্ষিকা কলি ইসলাম বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। এটি পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত এলাকা। এখানে স্থানীয় কাউন্সিলর রয়েছে। ঘটনার দিন আমার স্বামী কাউন্সিলরকে জানিয়েছে। এখনো সমাধান আসেনি। একজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কোন আইনে অন্যের বাড়িতে অনুপ্রবেশ করে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটাতে পারে? পুলিশকে জানিয়েছি, পুলিশ ঘটনাস্থান পরিদর্শন করে গেছেন।

তিনি আরও বলেন, বাড়িতে দেওয়া তালাতে হাত দিলে হাত কেটে নিবে, চেয়ারম্যান এমন হুমকিও আমাদের দিয়েছে। আমরা এখন প্রত্যেকে আতঙ্কিত ও অনিরাপদ। ভাড়াটেরা আমার বাড়িতেও যেতে চায়না। এখন তাদের মধ্যে অনেক রাগ আক্ষেপ রয়েছে আমাদের সবার ওপর।

এ বিষয়ে স্থানীয় আরেক গৃহবধূ আমিনা বেগম বলেন, তালা দেয়ার পর থেকে তারা আর ঘরে ঢুকতে পারেনি। আমার স্বামী দিনমজুর, সে কলি আপার বাড়িতে বেড়া বানানোর কাজ করছিলেন। আমাদেরও ভয় দেখিয়েছে চেয়ারম্যান।

স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর জমিরুল ইসলাম ঘটনা শুনে প্রথমে স্থান শনাক্ত করতে পারছিলেন না। এই প্রতিবেদক ঘটনাটা জানালে স্কুল শিক্ষিকার স্বামী জুয়েল ইসলাম তাকে একবার ফোন করেছিলেন এটি নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া ভাড়াটে আব্দুল হালিমের কাছেও তিনি ঘটনাটি শুনেছেন বলে জানিয়েছেন।

অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান লিটন মুঠোফোনে এ বিষয়ে জানান, স্থানীয়দের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে। আমি দুদিন সেখানে গিয়েছি। অন্যান্য গণমাধ্যমকর্মীরাও গিয়েছিলো। এ সময় তিনি তালা দেয়া ও হুমকি দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। স্থানীয় কাউন্সিলরকে জানিয়েছিলেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সরাসরি সাক্ষাৎকার নিতে এ প্রতিবেদককে সরাসরি দেখা করতে বলেন।

পুলিশের এস আই নির্মোল রায় জানান, ৯৯৯-এ কলোহের কল পেয়ে সেখানে যাওয়া হয়েছে। থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

news24bd.tv/SHS

এই রকম আরও টপিক