হিট থেরাপি নেওয়া প্রসঙ্গে ইসলামের বিধান কী

হিট থেরাপি নেওয়া প্রসঙ্গে ইসলামের বিধান কী

উম্মে আহমাদ ফারজানা

হিট থেরাপি বা গরম সেঁক দিয়ে শরীরের ব্যথা-বেদনার চিকিৎসা করার রীতি বেশ পুরনো। অনেক সময় গরম সেঁক মাংসপেশি ও বিভিন্ন স্থানের ব্যথা দূর করে। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মহানবী (সা.) কারো কারো ক্ষেত্রে গরম সেঁক দিয়ে চিকিৎসা করানোর অনুমতি দিয়েছেন। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে বিকল্প চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো :

গরম সেঁক দিয়ে চিকিৎসা করানোর অনুমতি 

এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা করানোর অনুমতি বিষয়ে কয়েকটি হাদিস পাওয়া যায়। যেমন—

১. জাবির (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উবাই ইবনু কাব (রা.)-এর কাছে একজন ডাক্তার পাঠালেন। সে তার একটি ধমনি কর্তন করে দিল, পরে লোহা গরম করে (রক্ত বন্ধ করার জন্য) তাতে সেঁক দিয়ে দিল। (মুসলিম, হাদিস : ৫৬৩৮)

২. আবু সুফিয়ান (রহ.) বলেন, আমি জাবের (রা.)-কে বলতে শুনেছি যে খন্দক যুদ্ধে উবাই (রা.)-এর হাত (কিংবা পা)-এর মূল ধমনিতে তীর লাগল, তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে লোহা গরম করে দাগ দিলেন।

(মুসলিম, হাদিস : ৫৬৪০)

৩. আনাস বিন মালিক (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) আসআদ বিন জুরারাহকে কাঁটা বিদ্ধ হওয়ার কারণে উত্তপ্ত লোহার মাধ্যমে দগ্ধ করেছিলেন। (তিরমিজি, হাদিস : ২০৫০)

উল্লিখিত হাদিস থেকে জানা যায় যে মহানবী (সা.) কারো কারো ক্ষেত্রে গরম সেঁক দিয়ে চিকিৎসা করানোর অনুমতি দিয়েছেন।

গরম সেঁক দিয়ে চিকিৎসা না করানোর পরামর্শ

বেশ কয়েকজন সাহাবিকে রাসুলুল্লাহ (সা.) গরম সেঁক দিয়ে চিকিৎসা না করানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

১. আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রোগমুক্তি আছে তিনটি জিনিসে।

শিঙা লাগানোতে, মধু পানে এবং আগুন দিয়ে দাগ দেওয়াতে। আমার উম্মতকে আগুন দিয়ে দাগ দিতে নিষেধ করছি। (বুখারি, হাদিস : ৫৬৮১)

২. জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, আমি নবী করিম (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তোমাদের ওষুধের কোনোটির মধ্যে যদি কল্যাণ থাকে তাহলে তা আছে শিঙাদানের মধ্যে কিংবা মধু পানের মধ্যে কিংবা আগুন দিয়ে ঝলসানোর মধ্যে—রোগ অনুসারে। আমি আগুন দিয়ে দাগা দেওয়া পছন্দ করি না। (বুখারি, হাদিস : ৫৬৮৩)

৩. বিনা হিসাবে যারা জান্নাতে যাবে, তাদের পরিচয় দিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তারা হলো সেসব মানুষ, যারা মন্ত্র পাঠ করে না, পাখির মাধ্যমে ভালো-মন্দ নির্ণয় করে না এবং আগুনের সাহায্যে দাগায় না, বরং তারা তাদের রবের ওপর ভরসা রাখে। (বুখারি, হাদিস : ৫৭০৫)

উভয় ধরনের হাদিসের মধ্যে সমন্বয় সাধন

ইমাম নববী (রহ.) ‘শরহে মুসলিম’ গ্রন্থে লিখেছেন, আলোচ্য হাদিসে আগুনে সেঁক দেওয়ার মাধ্যমে চিকিৎসা গ্রহণের বৈধতার বিধান দেওয়া হয়েছে। যেসব ক্ষেত্রে আগুনের সেঁকই একমাত্র সমাধান হিসেবে সাব্যস্ত, শুধুমাত্র সে ক্ষেত্রেই এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। সাদ (রা.)-এর রক্ত পড়া বন্ধ না হওয়ার কারণে আগুনের সেঁক দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তবে যে ব্যক্তির আগুনে সেঁক দেওয়ার কারণে অন্য সমস্যা সৃষ্টির আশঙ্কা আছে, ওই ব্যক্তি উপরোক্ত পদ্ধতি গ্রহণে বিরত থাকবেন।

ইবনুল কাইয়ুম (রহ.) ‘আত-তিববুন নববী’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘কায়’ বা দাগা দেওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে, আবার অনুমতিও দেওয়া হয়েছে। সাদ (রা.)-কে অনুমতি দেওয়াটা প্রমাণ করে, এ কাজটি জায়েজ। আর তা সৎ ব্যক্তির জন্য, যে ব্যক্তি আরোগ্য লাভের জন্য চিকিৎসাস্বরূপ অন্য কোনো ওষুধ ব্যবহার করতে সক্ষম নয়। কিন্তু এ কাজ করা নিষেধ ওই ব্যক্তির জন্য, যে আরোগ্য লাভের জন্য অন্য ওষধ ব্যবহার করতে সক্ষম। কারণ এতে আগুনের মাধ্যমে কষ্ট দেওয়া হয়। (আত-তিববুন নববী, পৃষ্ঠা ১১৫-১১৬)

 

 

সম্পর্কিত খবর