ভাষার শুদ্ধ চর্চার গুরুত্ব

ভাষার শুদ্ধ চর্চার গুরুত্ব

অনলাইন ডেস্ক

সারা দুনিয়ায় একমাত্র ভাষা বাংলা, যে ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৫২ সালে রক্ত দিয়েছে বাঙালি। পরে ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কোর স্বীকৃতির মাধ্যমে তা সারা বিশ্বের মানুষের মাতৃভাষার দাবিকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করেছে। তাই বাঙালি হিসেবে এ ভাষার মর্যাদা রক্ষায় আমাদের দায়িত্বটা একটু বেশিই বৈকি।

অমূল্য সম্পদ ভাষার মধ্য দিয়েই মানুষ সহজে অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ও ভাবের আদান-প্রদান ঘটায়।

স্বাভাবিক নিয়মেই একজন শিশু অজান্তে তার মা-বাবা বা আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে ভাষা শিক্ষা শুরু করে। ধীরে-ধীরে মায়ের ভাষা শিশুর কাছে মায়ের মতো আপন হয়ে যায়। মা, মাতৃভূমির মতো মাতৃভাষাও একজন ব্যক্তির কাছে পবিত্র ও আপন। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ৩০ কোটিরও বেশি মানুষের মাতৃভাষা বাংলা।
বাঙালির মাতৃভাষা প্রেম সর্বজনবিদিত।

মাতৃভাষাকে রক্ষা করতে গিয়ে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারিতে বাংলার দামাল ছেলেরা বুকের রক্তে রঞ্জিত করেছিলেন ঢাকার রাজপথ। পৃথিবীর ইতিহাসে সৃষ্টি হয়েছিল মাতৃভাষার জন্য আত্মদানের অভূতপূর্ব নজির। মাতৃভাষার জন্য বাঙালির আত্মত্যাগকে সম্মান ও স্বীকৃতি দিয়ে ইউনেস্কো ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারিতে শহীদদের প্রতি সশ্রদ্ধ সম্মান ও ভালোবাসা প্রকাশের সঙ্গে-সঙ্গে মাতৃভাষার প্রতি সম্মান দেখাই।

সবসময়ের জন্য হওয়া বাঞ্ছনীয়। তবে এ সম্মান প্রদর্শন শুধু একদিনের জন্য নয় শুধু একদিন খালি পায়ে প্রভাত ফেরিতে অংশগ্রহণ করেই আমরা খাঁটি বাঙালি হয়ে উঠব, এটা মনে করলে আমাদের চিন্তার অবচেতনে আমরা মূর্খ হয়ে উঠি। যথার্থতা আসবে যখন বাংলাভাষী আমরা শুদ্ধভাবে মাতৃভাষা চর্চা করব। একই সঙ্গে নিজ মাতৃভাষা চর্চা করার সঙ্গে-সঙ্গে বাংলাদেশের না বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষাগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা রাখব এবং ভাষাগুলোর অস্তিত্ব বজায় রাখতে সহযোগিতা করব। কেননা ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর ভাষাগুলো দিনকে দিন হারিয়ে যাচ্ছে।

যেখানে শত-শত ভাষা নিজস্বতা হারিয়ে বিপন্নতার মুখোমুখি সেখানে বাংলা ভাষা সগৌরবেই টিকে আছে। তবে দুঃখজনক বিষয় হলো বাংলা ভাষা দিনকে দিন স্বকীয়তা ও সৌন্দর্য হারাচ্ছে। আর হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের আঞ্চলিক ভাষার সুমধুুর টান। ইংরেজীকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে অনেকক্ষেত্রে মাতৃভাষা বাংলাকে গৌণ করে দিচ্ছি। যদিও বাংলা ভাষাকে আজ জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের দাপ্তরিক ভাষা করার দাবি উত্থাপিত হয়েছে।

কিন্তু আমাদের এই সাধের ও প্রাণের ভাষা নিজ ভূমিতেই অবহেলার শিকার; তার নজির ছড়িয়ে আছে সর্বত্র। আমাদের বিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যপুস্তক খুললে শিশুদের জন্য ভুল বানান আর ভুল বাক্যের ছড়াছড়ি দেখতে পাই। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের অধিকাংশ শিক্ষকেরই নেই প্রমিত বাংলা উচ্চারণ দক্ষতা। ফলে আমাদের নতুন প্রজন্ম বিদ্যাপীঠ থেকে ভুল উচ্চারণ ও ভুল বানানে মাতৃভাষা শিখছে। অধিকন্তু হিন্দি সিরিয়ালের প্রভাব তো রয়েছেই। তাই বাংলা ভাষার শুদ্ধ উচ্চারণ, ব্যাকরণ নীতি ব্যবহার খুবই জরুরি।

সেইসঙ্গে বাংলা ভাষাকে কোনোরূপ বিকৃতি কিংবা অশুদ্ধভাবে- উপস্থাপন থেকে বিরত থাকতে হবে। বাংলিশ (বাংলা-ইংরেজি) শব্দচয়ন বন্ধ করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বার্তা আদান-প্রদানে বাংলিশের ছড়াছড়ি বর্তমানে লেখার শুদ্ধ বানানের গুরুত্ব যেন এক ঐচ্ছিক ও হালকা বিষয় হয়ে গেছে। যার যা খুশি, বা যে যা পারে, জানে, সে তাই লিখে অনেকবার সেভাবে উচ্চারণও করে। এ বিষয়ে কারো যেন বলার, চিন্তার বা সংশোধন করার কিছু নেই। এভাবে বলা- চলা যেন আধুনিক ‘ফ্যাশন’ হয়ে গেছে। ভাষা নিয়ে এ ধরনের খামখেয়ালিপনা অচিরেই বন্ধ করা দরকার।  

news24bd.tv/আইএএম