একুশের প্রেম ও সংগ্রামের যে গল্প পড়ানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে

কার্ল ব্লুমের বইয়ের প্রচ্ছদ--কাউন্টার পাঞ্চ ফাইল ছবি।

একুশের প্রেম ও সংগ্রামের যে গল্প পড়ানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে

অনলাইন ডেস্ক

গল্পের নায়িকা একজন পুলিশ অফিসারের মেয়ে। আশরাফের সঙ্গে তার প্রেম। পুলিশ বাবা মেয়েটির ভাষা আন্দোলনে যাওয়া একদম পছন্দ করেন না। মেয়েটি বাবার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে মিছিলে-সভায় যায়।

পুলিশ বাবা আশরাফের সঙ্গে মেয়েটির বিয়ের দিন ঠিক করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি গায়েহলুদের দিন ঠিক করা হয়। সেই দিন মেয়েটি গায়েহলুদের সব আয়োজন ফেলে রেখে মিছিলে যায়। ও যখন ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগান দেয়, তখন দেখতে পায় ওর বাবা বন্দুক তাক করে জিপের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন।
গল্পটি এখানেই শেষ।
গল্পটির নাম,‘ফিরে দেখা’। লেখক কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। এ গল্পের অনুবাদ করেন নীলোফার হাফিজ খান নামের এক বাংলাদেশি-আমেরিকান নারী। এ গল্পটি পড়ানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের ৮টি ইউনিভার্সিটিতে। অনুবাদের ইংরেজি শিরোনাম ‘ইন রিট্রসপেক্ট’। কিভাবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে ঢুকল সে গল্পও মজার।   
নীলোফার যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে কার্ল ব্লুমের সঙ্গে। পরে তারা বিয়ে করেন। একটা সময় কার্ল ব্লুমের ইচ্ছে হয় বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার। চলে আসেন বাংলাদেশে স্ত্রী ও কন্যা আলিলাসহ।  কার্ল ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকার নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছিলেন। পড়াতেন সাহিত্য। সেসময়ই নীলোফারের সঙ্গে সামনাসামনি পরিচয় সেলিনা হোসেনের । দেশে আসার আগে অবশ্য মেইলে যোগাযোগ ছিল। সেসময় নীলোফার অনুবাদ করেন সেলিনা হোসেনের গল্প ‘ফিরে দেখা’।
পরে  কার্ল নিজ দেশে ফিরে যান। যোগ দেন যুক্তরাষ্রেি র সাউথইস্ট মিসৌরি স্টেট ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগে। কার্ল ব্লুম তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে যে কোর্সটি পড়ান তার শিরোনাম ‘দ্য ভ্যারাইটি অব লিটারেচার’। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের জন্য এটি একটি সার্ভে কোর্স। দুটি সেকশনে কোর্সটি পড়ানো হয়। এক এক সেকশনে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৪৩। ২০১৫ সালের জুলাই মাসের ১০ তারিখ থেকে এ গল্পটি পড়ানো হয়  । এরপর মিসৌরি, ম্যসচুয়েটস, নিউজার্সিসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়।
কার্ল ব্লুমের ২০০৬ সালে প্রকাশ হয়েছিল একটি উপন্যাস। নাম, থ্রি গার্লস—আ টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি টেল। উপন্যাসে কার্ল ব্লুমের নাম ফারুক আবদুল্লাহ। এই নাম বিবাহসূত্রে গ্রহণ করেছিলেন। উপন্যাসের তিনটি মেয়ের জীবনসংগ্রাম রূপায়িত হয়েছে পাশ্চাত্যের একজন লেখকের দৃষ্টিতে। কার্ল বাংলাদেশের তিনজন মেয়ের জীবনকে সংযুক্ত করেছেন বৈশ্বিক ঘটনার প্রেক্ষাপটে।
এ উপন্যাসে ঢাকার একটি তরুণী ৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে শহীদ হয়েছিল যার মেয়ে পরে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী হয় , নাম রেবেকা যে নিউইয়র্ক শহরের রাস্তায় রাস্তায় প্রতি রোববার একটা প্লেকার্ড নিয়ে ঘুরত, যাতে লেখা থাকত, ‘সবাইকে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার দাও। মাতৃভাষা চাড়া যে কোনো মানুষ বোবা। ’
কাউন্টার পাঞ্চকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কার্ল ব্লুম বলেন, বেশির ভাগ ছেলেমেয়ে গল্পটি পড়ে এবং শুনে বলেছে, তাদের জীবন বিপদাপন্ন হতে পারে এমন কোনো রাজনৈতিক প্রতিবাদে তারা যুক্ত হবে না। রাজনীতির জন্য তারা কখনোই বিবাহ অনুষ্ঠান মিস করবে না।
কার্ল বলেন, ওরা ভাষা আন্দোলন বোঝেনি। আর এটা কোনো ব্যাপারই না। (ইউ ওয়াজ নট আ বিগ ডিল)। কার্ল তার শিক্ষার্থীদের তখন জিজ্ঞেস করতেন, যুক্তরাষ্ট্রে যদি হঠাৎ করে আমাদের বলা হয় স্প্যানিশ বা ফরাসি ভাষায় কথা বলতে, তাহলে তোমরা কী বলবে? ওরা বলেছিল, দ্যাট ওয়াজ ক্রেজি।
গল্পের সমাপ্তি নিয়ে ওদের প্রশ্ন ছিল। তবে বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রী বলেছিল, এরকম পরিণতি দু:খজনক। গল্পে মেয়েটি সম্ভবত প্রেম ও সংগ্রাম দুইই চেয়েছিল।  

news24bd.tv/ডিডি