পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করে বহিষ্কার ১৮ পরীক্ষার্থী ও ১২ শিক্ষক

শেরপুরে স্মার্টফোনে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও উত্তর আদান-প্রদানের ঘটনায় ১৫ জন ও নকলের দায়ে আরও ৩ জনসহ মোট ১৮ পরীক্ষার্থীকে বহিস্কার করা হয়েছে।

পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করে বহিষ্কার ১৮ পরীক্ষার্থী ও ১২ শিক্ষক

শেরপুর প্রতিনিধি

শেরপুরে স্মার্টফোনে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও উত্তর আদান-প্রদানের ঘটনায় ১৫ জন ও নকলের দায়ে আরও ৩ জনসহ মোট ১৮ পরীক্ষার্থীকে বহিস্কার করা হয়েছে। একইসাথে দায়িত্বে অবহেলা ও মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে ১২ শিক্ষককে পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বহিষ্কৃত পরীক্ষার্থীদের সবাই দাখিল পরীক্ষার্থী ছিল। অন্যদিকে, অব্যাহতিপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পাঁচজন মাদরাসা এবং অপর সাতজন স্কুলের শিক্ষক।

বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নালিতাবাড়ী উপজেলার তারাগঞ্জ ফাজিল মাদরাসার দাখিল পরীক্ষা কেন্দ্র, আব্দুল হাকিম স্মৃতি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র এবং শ্রীবরদী উপজেলার শ্রীবরদী আকবরিয়া পাবলিক পাইলট ইনস্টিটিউট কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে পৃথকভাবে তাদের বহিস্কারের আদেশ দেওয়া হয়।

জানা গেছে, চলমান দাখিল পরীক্ষায় বৃহস্পতিবার গণিত বিষয়ে পরীক্ষা চলছিল। এ সময় নালিতাবাড়ী উপজেলার তারাগঞ্জ ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে জনৈক পরীক্ষার্থী স্মার্টফোনে ইন্টারনেটে যুক্ত হয়ে প্রশ্নপত্রের ছবি উঠিয়ে বাইরে পাঠিয়ে উত্তর সংগ্রহ করে খাতায় লিখছিল। ওই কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ট্যাগ অফিসার) ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মওদুদ আহমেদ হল পরিদর্শনে গেলে বিষয়টি তার নজরে আসে।

পরে ওই পরীক্ষার্থীর মোবাইল হাতে নেওয়ার পর একই মোবাইল থেকে আরও একটি মোবাইলে ওয়াফাই যুক্ত দেখে অন্য পরীক্ষার্থীদের সার্চ শুরু করেন। এ সময় একে একে মোট ১৫ জন পরীক্ষার্থীকে পরস্পর একইভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও উত্তর সংগ্রহ করার প্রমাণ মেলে। এসব স্মার্টফোন পরীক্ষার্থীরা পায়ের উরুতে রাবার দিয়ে বেঁধে ইন্টারনেটে সংযুক্ত হয়ে অসদুপায় অবলম্বন করছিল বলে জানান মওদুদ আহমেদ।

এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইলিশায় রিছিল এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফরোজা আফসানা উপস্থিত ছিলেন। একই সময়ে নকলের দায়ে আরও তিন দাখিল পরীক্ষার্থীসহ মোট ১৮ জন পরীক্ষার্থীকে বহিস্কার করা হয়। পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় দায়িত্বরত মোট পাঁচজন শিক্ষককে।

মোবাইল ফোনে অসদুপায় অবলম্বনকারী ১৫ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৪ জনই শুধুমাত্র এক বিষয়ে পরীক্ষা দিচ্ছিল বলে জানিয়েছে কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও অসদুপায়ে ব্যবহৃত ১৫টি স্মার্টফোন জব্দ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে রাখা হয়।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশনকে স্বাগত জানালো ভারতীয় হাইকমিশন

অন্যদিকে, নালিতাবাড়ীর আব্দুল হাকিম স্মৃতি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ইংরেজী দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা চলাকালে পরিদর্শনে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইলিশায় রিছিল। এ সময় গত বছর অকৃতকার্য হওয়া পরীক্ষার্থীদের রোল নম্বর উল্লেখ করে সিট নির্ধারণ না করায় দুই শিক্ষককে বহিস্কার করা হয়।

তারাগঞ্জ ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্র সচিব মাওলানা শামছুদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তারাগঞ্জ ফাজিল মাদরাসার এক পরীক্ষার্থীসহ মোট ১৮ জন পরীক্ষার্থী বহিস্কার এবং পাঁচজন শিক্ষককে পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ কেন্দ্রে এ বছর ৫৩৫ জন পরীক্ষার্থী দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল।

এছাড়া, শ্রীবরদী উপজেলার শ্রীবরদী আকবরিয়া পাবলিক পাইলট ইনস্টিটিউট কেন্দ্রের ভেতর মোবাইল ব্যবহার করায় পাঁচ শিক্ষককে বহিস্কার করা হয়। ওই কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব সাইফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, অব্যাহতিপ্রাপ্ত শিক্ষকরা হলেন, খড়িয়া কাজিরচর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজুয়ান কবির, সুলতান মাহমুদ, ভেলুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আতাহার আলী, ঝিনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আসাদ উজ্জজামান ও মো. মনিরুজ্জামান।

ওই কেন্দ্রের ট্যাগ অফিসার মাসুমা মমতাজ বলেন, ‌পরীক্ষার শুরুর কিছুক্ষণ পর শিক্ষকদের সার্চ করলে মোবাইল পাওয়া যায়। পরে বিষয়টি ইউএনও স্যারকে অবগত করি। পরে তাদের এসএসসি পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফৌজিয়া নাজনীন বলেন, নির্দেশনা অমান্য করে পরীক্ষাকেন্দ্রে মোবাইল ব্যবহার করায় সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে দায়িত্বরত পাঁচজন শিক্ষককে দুই বছরের জন্য পরীক্ষার সব কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। নকলমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পরীক্ষা নিতে আমরা সর্বদা তৎপর রয়েছি।

news24bd.tv/ab