যেখানে দাঁড়িয়ে আছে ইউক্রেন ও রাশিয়া

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ চালায়।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ২ বছর পূর্তি

যেখানে দাঁড়িয়ে আছে ইউক্রেন ও রাশিয়া

অনলাইন ডেস্ক

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ চালায়। যুদ্ধের দুই বছর শেষ হতে চললেও যুদ্ধের কোনো শেষ নজরে আসছে না। এই যুদ্ধের ফলে লাখ লাখ ইউক্রেনীয় বাস্তুচ্যুত হয়েছে, ইউরোপের ভূরাজনৈতিক মানচিত্রে পরিবর্তন এসেছে এবং বিশ্বজুড়ে অর্থনীতিতে বিরুপ প্রভাব পড়েছে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠে- যুদ্ধটি কোন পর্যায়ে উপনীত হয়েছে এবং সামনে কি হতে যাচ্ছে?

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সাথে এক সাক্ষাৎকারে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের বিশেষ ফেলো নন্দন উনিকৃষ্ণান।

তার সাক্ষাৎকারের সংক্ষিপ্ত রূপ নিচে তুলে ধরা হলো।

যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সবাই ধারণা করেছিল রাশিয়া খুব দ্রুত ইউক্রেন দখল করে নেবে। যুদ্ধের দুই বছরে বুঝা গেছে ইউক্রেনকে দমানো অতটা সহজ নয়। ইউক্রেনের সৈন্যরা রাশিয়ার সামরিক বাহিনীকে সীমান্তে সীমাবদ্ধ রেখেছে এবং খুব ভালোভাবেই তাদের দেশকে রক্ষা করেছে।

তবে এই মুহূর্তে যুদ্ধ কোনদিকে যাবে তা রাশিয়ার ওপর নির্ভর করছে। একদিকে ইউক্রেন চরম অস্ত্র ও সৈন্য সঙ্কটে রয়েছে, অপরদিকে রাশিয়া যুদ্ধের সাথে খুব ভালোভাবে মানিয়ে নিয়েছে। সবচেয়ে বড় চমক ছিল পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে রাশিয়ার অর্থনীতির তীব্র প্রতিরোধ, যা পশ্চিমা বিশ্ব আশা করেনি।

এই যুদ্ধে অন্যতম আঙ্গিক হচ্ছে ড্রোনের ব্যবহার। ড্রোনের সাহায্যে ইউক্রেন রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালাতে পেরেছে, তবে ড্রোনের সার্থক ব্যবহারের দিক দিয়ে এগিয়ে আছে রাশিয়া।

ইউরোপের জন্য রাশিয়া এই যুদ্ধের ফলে অনেক বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে, এবং ইউরোপের নিরাপত্তা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করছে। আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন যেসকল দেশ ন্যাটোতে অর্থায়ন করবে না তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা দেবে না। এরকম পরিস্থিতিতে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার শক্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে ন্যাটোর শক্তি এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অনেকটাই বেড়েছে, এবং সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগদানের ফলে রাশিয়ার সাথে ইউরোপের সীমানাও অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে।

আরও পড়ুন: রাশিয়ার ৫০০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা

তবে ইউরোপের অর্থনীতিতে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে। ইউরোপীয় দেশগুলোর অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিচ্ছে এবং এর ফলে ইউরোপিয়ানদের মনে ইউক্রেনের সম্পর্কে বিরুপ ধারণা জন্ম নিচ্ছে। এই যুদ্ধের ফলে ইউরোপের সামরিকীকরণ ঘটছে, এবং প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে ইউরোপের দেশগুলোর বাজেটে বরাদ্দের পরিমাণও বৃদ্ধি করতে হচ্ছে।

রাশিয়ার গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে রাশিয়াতে পুতিনের সমর্থন অনেকাংশে বেড়েছে। আশা করা হচ্ছে মার্চে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে তিনি জিততে চলেছেন, এবং এর মধ্য দিয়ে রাশিয়ায় পুতিনের নিয়ন্ত্রণ পূর্নাঙ্গ রূপ পাবে। তবে পুতিন এবং ইউক্রেন যুদ্ধকে সমর্থন করলেও অধিকাংশ রাশিয়ান নাগরিকই চান যুদ্ধ যাতে তাড়াতাড়ি শেষ হয়।

এই বছর কোনো শান্তি আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এই মুহূর্তে ইউক্রেন ও রাশিয়ার নিজস্ব শান্তি পরিকল্পনা একে ওপরের চাইতে ভিন্ন। ইউক্রেন চায় ১৯৯১ সালের সীমানায় ফিরে যেতে, যা রাশিয়া মানবে না। ক্রিমিয়া, দোনেৎস্ক, লুহান্সক ও ঝাপোরিঝিয়ার মতো যে অঞ্চলগুলো রাশিয়া অধিগ্রহণ করেছে সেগুলো পুতিন ছেড়ে দেবেন না। আবার পুতিন চান শান্তি আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রকে অন্তর্ভুক্ত করতে, যা জেলেনস্কি চান না। সব মিলিয়ে, আপাতত ইউক্রেন ও রাশিয়ার মাঝে সমঝোতা অসম্ভব ব্যাপার বলেই মনে হচ্ছে।

news24bd.tv/ab

এই রকম আরও টপিক