রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি বিষয়ক বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দুই বছর পূর্তি আজ।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ২ বছর পূর্তি

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি বিষয়ক বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি

অনলাইন ডেস্ক

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দুই বছর পূর্তি আজ। যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধ থেমে আছে, সমঝোতার ডাকে সবাই সরব হচ্ছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ভূখন্ড ছেড়ে দিয়ে পুতিনের সাথে সমঝোতা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, অপরদিকে ভ্লাদিমির পুতিনকে বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সহযোগিতার পরিমাণও কমে এসেছে।

এমন পরিস্থিতিতে যুদ্ধ কোনদিকে যাচ্ছে, সামনে কি হবে এবং কিভাবে এই যুদ্ধের সমাপ্তি হবে সে বিষয়ে মতামত দিয়েছেন কয়েকজন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক। তাদের বিশ্লেষণের সংক্ষিপ্ত রূপ নিয়েই আজকের আয়োজন।  

ইতালিতে অবস্থিত ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের সিনিয়র ফেলো নোনা মিখেলিজ ও রিকার্ডো আলকারোর মতে, সমঝোতা পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে ফেলবে। সবাই বলছে সমঝোতার ফলে যুদ্ধ বন্ধ হবে, মানুষের মৃত্যুর মিছিল থামবে, ইউক্রেনের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে।

কিন্তু আমরা তা মনে করি না। রাশিয়া কোনো শান্তি চুক্তি করবে না, ইউক্রেন রাশিয়া কর্তৃক অধিকৃত অঞ্চলগুলোকে রাশিয়ার ভূখন্ড বলে মেনে নেবে না, পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার ওপর থেকে তাদের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে না, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সৈন্যদেরকেও সরিয়ে নেয়া হবে না। তাহলে সমঝোতা হয়ে লাভ কি হবে?

পোল্যান্ডের ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের পূর্ব ইউরোপ বিভাগের প্রধান ড্যানিয়েল সেলিগোস্কির মতে, পশ্চিমা বিশ্ব কঠিন সিদ্ধান্ত থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ন্যাটোর সাহায্য ছাড়া ইউক্রেনের পক্ষে রাশিয়াকে প্রতিরোধ করা সম্ভব ছিল না, কিন্তু তাই বলে সামরিক সহায়তার গতি কমিয়ে দেওয়া সমস্যাকে আরও জটিল করছে। ন্যাটোর সহায়তা পেয়ে ইউক্রেনের শক্তি অনেক বৃদ্ধি পেলেও সাথে সাথে রাশিয়ার ক্ষুধাও বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং ইউক্রেন যতো আক্রমণ চালাবে রাশিয়াও ততো নতুন নতুন ভূখন্ড অধিগ্রহণ করে চলবে।

আরও পড়ুন: যেখানে দাঁড়িয়ে আছে ইউক্রেন ও রাশিয়া

ব্রাসেলসে অবস্থিত সেন্টার ফর ইউরোপিয়ান পলিসি স্টাডিজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো স্টিভেন ব্লকম্যানসের মতে, মার্কিন কংগ্রেসে বাইডেন কর্তৃক ঘোষিত ইউক্রেন সহায়তা বিল আটকে থাকার সময়ে ইইউ কর্তৃক আগামী চার বছরের জন্য প্রতি বছর ইউক্রেনকে ১৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা ইউক্রেনের জন্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে টিকে থাকার আশা জাগিয়ে রেখেছে। আইএমএফের এক হিসাব অনুযায়ী রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ইউক্রেনের বছরে ৩৭ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। সম্প্রতি জি-৭ এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো রাশিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৩০০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে, এবং এই সম্পদের একটি অংশ ইউক্রেনকে সহায়তা হিসেবে দেওয়া যেতে পারে।

তুরস্কে অবস্থিত গ্লোবাল রিলেশন্স ফোরামের প্রেসিডেন্ট সেলিম ইয়েনেলের মতে, যুদ্ধ শেষ করার একমাত্র উপায় হচ্ছে পুতিনকে পরাজিত করা। যুদ্ধ ধাপে ধাপে এগোচ্ছে, এবং ইউক্রেনে পুতিন কর্তৃক চরম পরাজয় বরণ করার পরেও যুদ্ধ এখনও চলমান রয়েছে। ২০২৩ সালে ইউক্রেনের জন্য রাশিয়াকে হটানোর সুযোগ তৈরি হয়েছিল, কিন্তু এখন বুঝা যাচ্ছে যে বেশি টিকে থাকতে হবে সেই এই যুদ্ধে জয়লাভ করবে। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব কি ইউক্রেনকে সহায়তা করা চালিয়ে যাবে কিনা।

যেকোনো এক পক্ষ নিশ্চিহ্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলতে থাকবে। রাশিয়ার পরাজয়ের ফলে যে যুদ্ধ একেবারে শেষ হয়ে যাবে এমনও নয় বিষয়টা। ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসা ইউক্রেন ও ইউরোপ উভয়ের জন্যই তাৎপর্যপূর্ণ হবে। সময় হয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কর্তৃক যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে একটি নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার। যেহেতু ইউরোপের প্রতিরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিশ্চিত নয়, তাই ইউরোপের উচিত নিজেরাই নিজেদেরকে রক্ষা করার ব্যবস্থা করা।

news24bd.tv/ab

এই রকম আরও টপিক