টাঙ্গাইলে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে সড়ক সংস্কার কাজ বন্ধের অভিযোগ

টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের সড়ক সংস্কারের চলমান একটি কাজ করতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মেহেদী হাসান টগর নামের এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে।

টাঙ্গাইলে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে সড়ক সংস্কার কাজ বন্ধের অভিযোগ

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের সড়ক সংস্কারের চলমান একটি কাজ করতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মেহেদী হাসান টগর নামের এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত মেহেদী হাসান টগর টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা পৌর যুবলীগের সভাপতি। সংস্কার কাজটি বন্ধ থাকায় যেমন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান, তেমনি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ওই সড়কে চলাচলরত সাধারণ মানুষ।

দায়িত্বরত অফিস কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয়রা চলমান কাজের মান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকলেও অভিযুক্ত যুবলীগ নেতার দাবি কাজের মান খুবই নিম্ন।

কাজটি দ্রুত শেষ করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনসহ পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী স্থানীয়রা।

জানা যায়, সম্প্রতি প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের খানপাড়া হতে গোপালপুর খাদ্য গুদাম পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার সড়ক রিপেয়ারিং ও কার্পেটিং দ্বারা সংস্কারের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগ। কাজটি পান হাসান টেকনো প্রাইভেট লিঃ ও আমিনুল হক প্রাইভেট লিঃ (জেভি)।

কাজের তদারকিকারী সাইট অফিস কর্তৃপক্ষ জানায়, নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজটি পেয়েছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হাসান টেকনো প্রাইভেট লিঃ ও আমিনুল হক প্রাইভেট লিঃ (জেভি)।

গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর রাস্তার রিপেয়ারিং শুরু হয়। রিপেয়ারিং শেষে চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় কার্পেটিং এর কাজ। বর্তমানে কাজের প্রায় তিন ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। কাজটিতে কর্মরত শ্রমিক সংখ্যা ২৫জন।

গত ২১ ফেব্রুয়ারি গোপালপুর পৌর যুবলীগের সভাপতি কাজ করতে বাধা ও মারধর করাসহ কাজের গাড়ী ভাংচুরের হুমকি দেন। ২২ তারিখ বৃষ্টির কারণে কাজ শুরু করতে না পারলেও ২৩ তারিখ আবার কাজ শুরু করা হয়। ওইদিন ৬/৭টি মোটরসাইকেল নিয়ে এসে ওই যুবলীগ সভাপতি আবার কাজটি বন্ধ করে দেন। এর ফলে ২৪.২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি কাজ বন্ধ থাকে।

চলমান কাজের শ্রমিক জাহাঙ্গীর আলমসহ কয়েকজন বলেন, ওই সভাপতি কাজ বন্ধ না রাখলে আমাদের মারধর করবেন বলে হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমি যেখানে যাই সেখানে কেউ হতাহত হয়নি এমনটা হয়নি। এবারই প্রথম, তাই সাবধান হয়ে যা।

কাজের তদারকিকারী সাইট ম্যানেজার মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, কাজটি নিম্নমানের হচ্ছে এমন অভিযোগ পেয়েছেন বলে জানান গোপালপুর পৌর যুবলীগের সভাপতি টগর ভাই। এ কারণে কাজটি বন্ধ করে দেন তিনি। এছাড়াও তিনি আমাকে বলেন, তোদের ঠিকাদারকে বলবি আমার সাথে কথা বলে কাজ শুরু করতে না হলে সমস্যা আছে। ভয়ে আমরা কাজ বন্ধ রেখেছি। কাজটি বন্ধ থাকায় কোম্পানীর অনেক টাকা ক্ষতি হচ্ছে। বসিয়ে বসিয়ে রোলারসহ কয়েটি গাড়ীর ভাড়া, শ্রমিকের বেতন দিতে হচ্ছে কোম্পানীকে।

তিনি আরও বলেন, কাজটি দেখভাল করছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের একজন প্রকৌশলী। তার উপস্থিতিতে কোনভাবেই নিম্নমানের কাজ করা সম্ভব নয়। এরপরও জোরপূর্বক কাজ বন্ধ করা হয়েছে। নেতাদের ভয়ে কাজ থেকে অনেক শ্রমিক চলেও গেছে।

মির্জাপুর বাজার এলাকার জুলহাস, ফিরোজ, করিমসহ একাধিক গ্রামবাসী জানায়, দীর্ঘদিন ধরে ভাঙাচোরা রাস্তায় চলাচল করতে হয়েছে আমাদের। তখন কোনো নেতা দেখি নাই। এখন কাজটি শুরু হওয়ায় এটি দেখভালের জন্য অনেক নেতা বের হয়েছে। অফিসের কর্মকর্তার উপস্থিতিতে সুন্দরভাবে কাজটি হচ্ছে। কাজটি ভালো না মন্দ হচ্ছে সেটি বলতে পারবেন ওই কর্মকর্তা। নেতা কাজের ভালো মন্দ কি বুঝবে।

মন্দ কাজের জন্য নাকি অন্য কোন ধান্দায় কাজটি বন্ধ করা হয়েছে এমন প্রশ্ন তুলেছেন তারা। তবে দ্রুত কাজটি চালু করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
হাসান টেকনো প্রাইভেট লিঃ ও আমিনুল হক প্রাইভেট লিঃ (জেভি)’র ঠিকাদার প্রতিনিধি সোহেল রানা জনি বলেন, নিম্নমানের কাজ করার কোন সুযোগ নেই। এছাড়া কাজের তদারকি করছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের একজন প্রকৌশলী।

তিনি বলেন, কাজটি জোরপূর্বক বন্ধ করার পরপরই আমি গোপালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করি। তিনি থানা থেকে একজন এসআইকে পাঠিয়ে দেওয়ার পর আবার কাজটি চালু করা হয়। এরপরও ওই নেতা আবার এসে আমার শ্রমিকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে কাজটি বন্ধ করে দিয়েছেন।

তিনি আর বলেন, কাজের বিষয়ে অফিস কর্তৃপক্ষের কোন অভিযোগ নেই। এছাড়া ওই নেতাও কাজের মান নিয়ে অফিস কর্তৃপক্ষকেও কোন অভিযোগ করেননি।

টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ সহকারী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, নিম্নমানের কাজ করার কোন সুযোগ নেই। প্রাক্কলন অনুযায়ীই কাজটি হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই ওই নেতা কাজটি বন্ধ করেছেন। কাজ বন্ধের জন্যও তিনি লিখিত অভিযোগ করেননি। আগামীকাল ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে কাজটি আবার চালু করা হবে। এরপরও ওই নেতা যদি বাধা প্রয়োগ করেন, তাহলে পরবর্তী ব্যবস্থা নিবেন উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন: পাবনায় বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলে শিক্ষা সামগ্রী ও স্কুল ড্রেস বিতরণ

অভিযুক্ত গোপালপুর উপজেলা পৌর যুবলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান টগর বলেন, কাজটি নিম্নমানের হচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ দেওয়ায় কাজটি বন্ধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে অফিস কর্তৃপক্ষকে কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়নি বলে জানান তিনি।

মেহেদী হাসান টগর গোপালপুর পৌর যুবলীগের সভাপতি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন টাঙ্গাইল জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সায়েম তালুকদার বিপ্লব। তিনি বলেন, আমাদের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে যদি সরকারের কোন উন্নয়নমূলক কাজে বাঁধা দেয়ার অভিযোগ ওঠে, তাহলে বিষয়টি তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গোপালপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমদাদুল ইসলাম তৈয়ব বলেন, কাজটি বন্ধ করার অভিযোগ পেয়েই থানা থেকে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান থেকে লিখিত কোন অভিযোগ না দেওয়ায় পরবর্তীতে কোন ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।

টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহ. আলিউল হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

news24bd.tv/ab