অন্যকে ঋণ দিয়ে সহযোগিতার সওয়াব

ঋণ

অন্যকে ঋণ দিয়ে সহযোগিতার সওয়াব

হেদায়াতুল্লাহ বিন হাবিব

মানুষ পরনির্ভরশীল জাতি। কোনো মানুষই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। ছোট-বড় বিভিন্ন প্রয়োজনে একে অপরের সহযোগিতা নিয়ে চলে। ধনী-গরিব কেউ বাদ যায় না এসব প্রয়োজন থেকে।

এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন হলো ঋণ। মানুষ কখনো সংকটে কিংবা প্রয়োজনে কারো থেকে ঋণ নেয়। ঋণদাতা নিঃস্বার্থভাবে তার সাহায্যে এগিয়ে আসে। এর মাধ্যমে তাদের পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব-সৌহার্দ্যের চিত্র ফুটে উঠে।

সুন্দর সম্পর্কের উন্নতি হয়। এ ছাড়া ঋণ দেওয়ার আরো অনেক ফজিলত আছে। হাদিসে একে সদকার সমতুল্য বা তার চেয়েও বেশি মর্যাদাপূর্ণ বলা হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক ঋণ সদকাস্বরূপ। ’ (বায়হাকি, শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩২৮৫) কিন্তু আমাদের সমাজে একটি সমস্যা ব্যাপক আকারে পরিলক্ষিত হয়। তাহলো ঋণ আদায়ে মানুষের গড়িমসি করা। সঠিক সময়ে তারা ঋণ পরিশোধ করে না। এটা অত্যন্ত গর্হিত ও অন্যায় কাজ। বিপদের সময় ঋণদাতার এমন উপকারের বদলায় তার উপকার তো দূরের কথা, অধিকারটাই দেওয়া হচ্ছে না।

হাদিসে এ ব্যাপারে কঠোর ধমকি ও শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে সচ্ছল ব্যক্তি ঋণ পরিশোধে গড়িমসি করে, তাকে অপমান ও শাস্তি উভয়টিই দেওয়া আমার জন্য হালাল। ’ (নাসায়ি : ৪৬৯০, আবু দাউদ : ৩৬২৮)

অনেক সময় দেখা যায়, ঋণী ব্যক্তির কাছে পর্যাপ্ত টাকা আছে। সে চাইলে সময়মতো তা পরিশোধও করতে পারে। কোনো বাধা নেই তার। তবু সে টালবাহানা করে। একটু দেরিতে দিতে পারলে যেন জিতে যায়। এতে যে তার কত বড় গুনাহ হচ্ছে সে খবর রাখে না। আজকাল এটা কিছু মানুষের স্বভাবে পরিণত হয়েছে। এটাকে কখনো ভালো গুণ বলা যায় না। এ ব্যাপারে আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘সচ্ছল ব্যক্তির (ঋণ পরিশোধে) টালবাহানা করা অন্যায়। ’ (বুখারি : ২৪০০)

কিছু মানুষ আছে, এরা মূলত ঋণের নামে মানুষের টাকা আত্মসাৎ করে। মানুষকে ধোঁকা দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে আর কখনোই এরা পাওনা টাকা ফিরিয়ে দেয় না। অথচ এই টাকা ভোগ করা তার জন্য সম্পূর্ণ হারাম। এটা বান্দার হক। স্বয়ং আল্লাহ তাআলাও তার এই গুনাহ ক্ষমা করবেন না। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি সম্পদ আত্মসাৎ করার উদ্দেশে কসম করবে, সে (কিয়ামতের দিন) আল্লাহর সঙ্গে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে আল্লাহ তার প্রতি রাগান্বিত থাকবেন। ’ (বুখারি : ২৬৭৩)

ঋণ মূলত একটি বোঝা

ঋণ নেওয়ার পর থেকেই ঋণী ব্যক্তির ওপর একটি মহা দায়িত্ব চেপে যায় ঋণ পরিশোধ করার। মহানবী (সা.) সর্বোত্তম পন্থায় ঋণ পরিশোধ করতেন। কখনো ঋণ নিলে তা পরিশোধের সময় কিছু বাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেন। জাবের (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার আমার কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। পরে যখন তা পরিশোধ করলেন, তখন আমার পাওনার চেয়েও বাড়িয়ে দিলেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৩৪৯)

এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে এই অতিরিক্ত দান হতে হবে সম্পূর্ণ ঋণগ্রহীতার ইচ্ছায়। ঋণদাতা এ ক্ষেত্রে কোনো জবরদস্তি বা শর্তারোপ করতে পারবে না। তবেই এটা জায়েজ হবে, অন্যথায় তা হবে সুদের অন্তর্ভুক্ত। আর সুদের শাস্তি ও ভয়াবহতা খুবই মারাত্মক।

লেখক : শিক্ষক, অনুবাদক

news24bd.tv/আইএএম

এই রকম আরও টপিক