হাজার মানুষের জন্য একটি শয্যা: সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ফাইল ছবি

হাজার মানুষের জন্য একটি শয্যা: সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রী

জয়দেব দাশ

দেশের প্রতি ৯৯০ জন মানুষের জন্য সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে মাত্র একটি শয্যা রয়েছে বলে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। দেশে প্রতি ৫০ জন লোকের বিপরীতে সরকারি হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ০.০২১১ জন বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

আজ বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনে ময়মনসিংহ-৭ আসনের স্বতন্ত্র এমপি এ বি এম আনিছুজ্জামানের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালে পর্যায়ক্রমে বেড সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। ২০২২ সালের হেলথ বুলেটিনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি শয্যা সংখ্যা ৭১ হাজার ৬৬০টি এবং বেসরকারি শয্যা সংখ্যা ৯৯ হাজার ৯৭৫টিসহ মোট ১ লাখ ৭১৬৭৫টি শয্যা রয়েছে। উক্ত মোট শয্যা সংখ্যা অনুযায়ী প্রতি ৯৯০ জন লোকের বিপরীতে ১টি শয্যা রয়েছে।

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নাসের শাহরিয়ার জাহেদীর প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশের সরকারি হাসপাতালে স্নাতক ডাক্তার ২৯ হাজার ৫৬১জন।

স্নাতক নার্সের সংখ্যা ৬৬৫০ জন যার মধ্যে বিএসসি ইন নার্সিং ৩৯০৪, বিএসসি ইন পাবলিক হেলথ নার্সিং (পোস্ট বেসিক) ১৫৯৭ জন এবং বিএসসি ইন নার্সিং (পোস্ট বেসিক) ১১৪৯ জন। স্নাতক ফার্মাসিষ্ট পাঁচজন।

স্বতন্ত্র এমপি মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরীর আরেক প্রশ্নের জবাবে সামন্ত লাল সেন বলেন, দেশীয় মোট চাহিদার ৯৮ শতাংশই স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদের অন্য প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সারাদেশের ১৪ হাজার ২৯২টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ১৪ হাজার ২৭৫টি কমিউনিটি ক্লিনিকে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মাহবুব উর রহমানের আরেক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, দেশের ৪২৯টি কার্যকরী উপজেলা হাসপাতালের মধ্যে ৩৮৩টিতে এক্স-রে মেশিন রয়েছে। যার মধ্যে ৫৩ অচল বলে জানান মন্ত্রী।

সরকার দলীয় এমপি এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের আওতায় স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আনুষ্ঠানিক খাতের সরকারি চাকরিজীবী ও পোশাকশিল্পে শ্রমিকদের জন্য সামাজিক স্বাস্থ্য বিমা চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে অনানুষ্ঠানিক খাতের জনগোষ্ঠিকেও এ বিমার আওতায় আনা হবে।

সরকার দলীয় এমপি এম আবদুল লতিফের এক প্রশ্নের জবাবে সামন্ত লাল সেন জানান, দেশের জাতীয় পর্যায়ে ফ্যাটি লিভার নিয়ে কোন গবেষণা হয়নি। তাই দেশের প্রায় চার কোটি মানুষ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত কি-না, এ বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা প্রয়োজন। লিভার ক্যান্সারের অন্যতম কারণ হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস। ফ্যাটি লিভারের কারণে লিভার ক্যান্সার হতে পারে, তবে এর সঠিক কারণ সম্পর্কিত কোনো গবেষণা তথ্য নেই। স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে এ ব্যাপারে আগামীতে আরও গবেষণা করা হবে। ক্যান্সারের প্রতি জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।

সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ গোলাম ফারুকের (লক্ষ্নীপুর) প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশের ৩৪টি জেলায় ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। নারায়ণগঞ্জে মেডিকেল কলেজ স্থাপনের নীতিগত অনুমোদন রয়েছে। সরকারের আর্থিক সক্ষমতা ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় মেডিকেল কলেজ স্থাপন চলমান প্রক্রিয়া। কোনো জেলার মোট জনসংখ্যা, ভৌগোলিক অবস্থান, প্রয়োজনীয়তা, জনগুরুত্ব ইত্যাদি বিষয় বিবেচনাপূর্বক পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি জেলায় মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা হবে।

সরকার দলীয় এমপি মুহিবুর রহমান মানিকের (সুনামগঞ্জ-৫) প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি আমেরিকা ও ইউরোপের কিছু দেশ, ভারত, সিংঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, চীনসহ বিশ্বের ৭১টি দেশে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট (SARS-CoV-2 Variant JN.1) ছড়িয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন দেশে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতি ১০০টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ৭.৩২ জন।

তিনি আরও জানান, গত ২০ ডিসেম্বর সর্বপ্রথম বাংলাদেশে এই সংক্রমণ সনাক্ত হয়। আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সংক্রমণ প্রতিরোধে সার্ভেল্যান্স কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়েছে।

সরকার দলীয় এমপি তৌহিদুজ্জামানের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেন, করোনারী স্টেন্ট (রিং) এবং ম্যাকানিক্যাল ভাল্ব হাইটেক পণ্য, করোনারী স্ট্যান্টের প্ল্যান্ট তৈরি করতে বড় ধরনের বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আপাতত এ ধরনের প্রকল্প করার পরিকল্পনা সরকারের নেই। প্রকল্প অনুমোদনের আবেদনও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে জমা হয়নি।

বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় ও স্বল্পমূল্যে দেশের জনসাধারনের হৃদরোগের চিকিৎসা নিশ্চিতকরণে সরকার সচেষ্ট রয়েছে বলে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশের সকল গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালে ক্যাথ ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদানের চিন্তা করে সরকার স্টেন্ট আমদানির ওপর সবধরনের ভ্যাট, ট্যাক্স বাদ দিয়েছে।

news24bd.tv/SHS