বাংলাদেশ: বিশ্বের বিস্ময়!

দেশে সাফল্যের ধারা অব্যাহত--ফাইল ছবি

অগ্নিঝরা মার্চ

বাংলাদেশ: বিশ্বের বিস্ময়!

দেবদুলাল মুন্না

১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে তার ধানমন্ডির বাসায় এসেছিলেন এডওয়ার্ড কেনেডি। সে সময়  বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করার পর কেনেডি বলেন, 'তার (বঙ্গবন্ধুর) ধ্যান-জ্ঞান ছিল বাংলাদেশ ও বিশ্বশান্তি এবং তিনি ছিলেন যুদ্ধবিরোধী ও বর্ণবাদবিরোধী, যার সঙ্গে আমার আদর্শের মিল ছিল। ' (সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস, ১৩ ডিসেম্বর) 

রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত 'নিউজউইক' ম্যাগাজিন ১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুকে 'পয়েট অব পলিটিক্স' বলে অভিহিত করেছিল। একই বছর ব্রিটেনের আরেক শীর্ষ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানে বলা হয় 'শেখ মুজিব ছিলেন এক বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব।

তিনি একদিন বিস্ময়কর বাংলাদেশ গড়বেনই’।

বঙ্গবন্ধু অগ্নিঝরা মার্চে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। দেশ স্বাধীন হয় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছাড়া বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সবাইকে প্রাণ দিতে হয়।

২০০৪ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে এক সাক্ষাৎকারে মাহাথির মোহাম্মদ বলেন 'আফ্রিকার কোটি কোটি কৃষ্ণ মানবের মুক্তিদূত নেলসন ম্যান্ডেলার সমকক্ষ তোমাদের নেতা (বঙ্গবন্ধু)। তার অবর্তমানে বাংলাদেশ অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে এবং এতিমের মতো অবহেলা ও অবজ্ঞার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়। জন্মের পরপরই বাংলাদেশ অভিভাবকহীন ও নেতৃত্বহারা হয়ে পড়ায় এই দেশটির যে বিশাল সম্ভাবনা ছিল, তা রুদ্ধ হয়ে পড়ে। তোমাদের জাতির ভাগ্যে এত বড় ট্রাজেডি দেখে খুব আফসোস হয়। ' (সূত্র: বাসস)

কিন্তু বঙ্গবন্ধুর বিস্ময়ের বাংলাদেশের স্বপ্নের জয়যাত্রা থেমে থাকেনি। বাংলাদেশ এগিয়ে যায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।  

আজ সেই মাস যে মাসের ২৬ তারিখ দেশের স্বাধীনতার ৫৩ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। ২০২৩ সালে উন্নয়নের পথে সমগ্র বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে একটি মডেল হিসেবে উল্লেখ করেছেন জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসনবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলিয়েটা ভালস নয়েস। ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশি নেতৃত্ব ও উদারতার ভূয়সী প্রশংসা করেন এই মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। জুলিয়েটা বলেন, ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা কয়েক লাখ রোহিঙ্গার জন্য বাংলাদেশ দরজা খুলে দেয়। দেশের মানুষও তাদের সাহায্যের হাত ও হৃদয় উন্মুক্ত করে দেয়।  

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু একধাপ এগিয়ে বলেন, যে বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের সময় শরণার্থী হতে হয়েছিল তারাই এখন শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে মানবিকতার পরিচয় দিচ্ছে। সূত্র: কাউন্টার পাঞ্চ

৭১ সালে আমাদের ৮০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে ছিল আর এখন দারিদ্র্যের হার ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয় ও ব্যয় জরিপ ২০২২-এ এই তথ্য উঠে এসেছে। এর মানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে যে দারিদ্রকে জাদুঘরে পাঠাবেন বলেন সে কথা বাস্তবেই হতে যাচ্ছে। এখন আর বাংলাদেশকে কারও কিসিঞ্জারের সেই ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলার সুযোগ নেই। গত বছরের ৩০ নভেম্বর হেনরি কিসিঞ্জার মারা যান। তার কিছুদিন আগে তিনি সিএনএনকে বলেন, তিনি বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল বলেছিলেন। তিনি বাংলাদেশের উন্নয়নে আশাবাদী।  

এখন বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় (ভারতের পরে) দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অধিকারী।
২০১৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের ডন ও দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন পত্রিকায় 'কেন পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে' শিরোনামের এক নিবন্ধে মুনীশ আহমার লিখেছেন, ১৯৭১ সালে 'শূন্য' থেকে ২০১৮ সালে এসে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে সাড়ে তিন হাজার কোটি ডলারে।  

অন্যদিকে একই বছর পাকিস্তানের রপ্তানি আয় ছিল আড়াই হাজার কোটি ডলারেরও কম। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের উদ্ধৃতি দিয়ে পাকিস্তানি ওই খ্যাতনামা পদার্থবিদ বলেছেন, বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ পাকিস্তানের চেয়ে চার গুণ বেশি। বাংলাদেশের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণও পাকিস্তানের অর্ধেকের চেয়ে কম। দুই দেশের এসব পার্থক্যের কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, জনগণের উন্নয়ন পাকিস্তান সরকারের কাছে কখনো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেনি। নীতিনির্ধারকরা সামরিক দিক থেকে ভারতকে টেক্কা দেয়াই সবচেয়ে বড় দায়িত্ব মনে করেছেন। সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে অনেক বেশি উদার। পারভেজের মতে, পাকিস্তানের জন্য যা শিক্ষণীয় তা হলো, ট্যাংক বা ক্ষেপণাস্ত্রের দিক থেকে ভারতের সঙ্গে পাল্লা দেয়া অসম্ভব। ছাদের ওপর থেকে 'পাকিস্তান জিন্দাবাদ' স্লোগান দিয়ে তলে তলে যুক্তরাষ্ট্র, চীন কিংবা সৌদির নির্দেশনা মেনে চলে পাকিস্তান কিছুই করতে পারেনি। পাকিস্তানকে অবশ্যই 'যুদ্ধের অর্থনীতি' বর্জন করে 'শান্তির অর্থনীতির' পথে হাঁটতে হবে।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের 'ইনক্লুসিভ ইকোনমিক ইনডেক্স' অনুযায়ী ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ যেসব খাতে বিশ্ববাজারে আজ বিস্ময় 

খাদ্যশস্য : এদেশের একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন। বিগত ৫৩ বছরে এক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। স্বাধীনতা উত্তর কালে যেখানে বাংলাদেশের খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ ছিল মাত্র এক কোটি ১০ লাখ মেট্রিক টন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা চার কোটি ৫৩ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। ১৩টি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে রয়েছে।

নারী শিক্ষা: নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে দেশের অগ্রগতি বিস্ময়কর। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭০-৭১ সালে দেশে মোট শিক্ষার্থীর ২৮ দশমিক চার শতাংশ ছিল মেয়ে।  গত বছরের তথ্য বলছে, প্রাথমিকের শিক্ষকদের মধ্যে ৬৪ দশমিক ২০ শতাংশই নারী। মাধ্যমিক স্তরে ১৯৯৮ সালের পর থেকে সংখ্যার দিক থেকে এগিয়ে আছে নারীরা। গত বছরই এই স্তরে নারী শিক্ষার্থী ছিল ৫৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ শিক্ষার্থী।

চিকিৎসা : ১৯৭১ সালে আমাদের মাত্র ছয়টি মেডিকেল কলেজ ছিল। এখন সেখানে ৩৬টি সরকারি ও ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া, আধুনিক মানদণ্ডে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি ও উচ্চতর মেডিকেল গবেষণার জন্য ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ইনস্টিটিউট অব পোস্টগ্রাজুয়েট মেডিকেল রিসার্চ (আইপিজিএমআর)-কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা হয়েছে। একই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে আরও চারটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুরু হয়েছে।

রেমিট্যান্স : রেমিট্যান্স গ্রহণকারী দেশের তালিকাতেও বাংলাদেশ আছে শীর্ষ দশে। বর্তমানে প্রায় সোয়া কোটি প্রবাসী বাংলাদেশির প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। গত অর্থবছরে দেশে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ২ হাজার কোটি ডলার। একই অর্থবছরে ভারত ৭ হাজার ৮০০ কোটি ডলার নিয়ে প্রথম এবং ৬ হাজার ৭০০ কোটি ডলার পেয়ে চীন দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।

রাজনীতি: দেশ শাসনের প্রশ্নে এ দেশের মানুষ বরাবর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আস্থা রাখতে চেয়েছে। এ কারণে সামরিক শাসন বা অন্য কোনো ধরনের একনায়কতান্ত্রিক ব্যবস্থা এখানে স্থায়ী ভিত্তি গড়তে পারেনি। ওয়ান ইলেভেনের সরকারও এখানে টিকতে পারেনি। সামরিক ক্যু ও শাসন একসময় থাকলেও ৯০ সালের পর সংসদীয় ব্যবস্থায় আস্থা রাখছেন মানুষ।  

পোশাক শিল্প: বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয়। রপ্তানি আয়ের ৮২ ভাগ আসে এই খাত থেকে। সংকটের মধ্যেও গত বছরের ডিসেম্বরে রপ্তানি আয়ে যে রেকর্ড হয়েছে তার অবদান পোশাক খাতের। বিশ্বে বাংলাদেশকে পরিচিত করার ক্ষেত্রে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে তৈরি পোশাক (গার্মেন্ট) শিল্প। পৃথিবীতে এখন এমন কোনো দেশ নেই যেখানে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ লেখা পোশাক পাওয়া যায় না। পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। গত ২০১৯–২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ ২ হাজার ৭৫০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা বিশ্বের মোট পোশাক রপ্তানির ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। পোশাক রপ্তানিতে প্রথম হচ্ছে চীন। তারা রপ্তানি করে ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ। ৬ দশমিক ২ শতাংশ নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে ভিয়েতনাম।

ওষুধ শিল্প: পোশাকের পাশাপাশি বাংলাদেশের ওষুধ এখন ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার ৮০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। কোভিডকালীন সময়ে এদেশে মারা যাওয়ার সংখ্যা কম। দেশীয় ওষুধশিল্প কারখানাগুলো দেশের মোট চাহিদার শতকরা ৯৭ ভাগ ওষুধ জোগান দিচ্ছে। বাংলাদেশের তৈরি ওষুধ জীবন বাঁচাচ্ছে বিশ্বের আনাচে-কানাচের মানুষকে।

জনশক্তি রপ্তানি: জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দেশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশি তরুণ-যুবারাই তৈরি করছে বিভিন্ন দেশের গর্বের কাঠামো, ঘুরিয়ে দিচ্ছে তাদের অর্থনীতির চাকা।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন: বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবদান আজ স্বীকৃত।  এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান অগ্রগণ্য। যুদ্ধবিগ্রহের বিশ্বকে ব্লু হেলমেট মাথায় দিয়ে বুক আগলিয়ে রক্ষা করছে বাংলাদেশের দুর্বার সেনারাই। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে প্রথম।

তথ্যপ্রযুক্তি:  বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) খাতে ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা ছয় লাখ, যা শতকরা হারে বিশ্বের প্রায় ২৭ শতাংশ। এই বদৌলতে বাংলাদেশ এ খাতে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ১৯৭১ সালে জন্মলগ্নে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ছিল মাত্র ৬ থেকে ৭ শতাংশ। দেশের জাতীয় আয়ে বর্তমানে শিল্প খাতের অবদান ৩৭ শতাংশ। এছাড়া জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), বাংলাদেশ ব্যাংক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ১৩টি খাতে বিশ্বের শীর্ষ দশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান জানা গেছে।

ধান উৎপাদনে চতুর্থ: স্বাধীনতার পর যখন মোট জনসংখ্যা ছিল সাড়ে ৭ কোটি, তখন দেশে খাদ্যসংকট ছিল। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে এমন হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু আজ ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের হিসাবে, নুন্যতম ৫ কোটি ২৬ লাখ টন ধান উৎপন্ন হচ্ছে গত চার বছর থেকে, যা বিশ্বে চতুর্থ। চীন ১৪ কোটি ৮৫ লাখ টন উৎপাদন করে প্রথম, আর ভারত ১১ কোটি ৬৪ লাখ টন উৎপাদন করে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।

বাংলার ইলিশ: বিশ্বে উৎপাদিত মোট ইলিশের ৮৬ শতাংশই বাংলাদেশে হচ্ছে, যা পরিমাণে ৫ লাখ ৩৩ হাজার টন। তাই ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ প্রথম। চার বছর আগেও বিশ্বে মোট ইলিশ উৎপাদনের ৬৫ শতাংশ বাংলাদেশে উৎপাদিত হতো। অথচ এখন এর পরিমাণ অনেক বেশি। ইলিশ উৎপাদনে ভারত দ্বিতীয়, মিয়ানমার তৃতীয়।  

সবজিতে তৃতীয়: সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয়। বছরে উৎপাদন হয় ১ কোটি ৬০ লাখ টন। এ ক্ষেত্রে শীর্ষ অবস্থান চীনের, দ্বিতীয় স্থান ভারতের।  

আলুতে ষষ্ঠ: আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ষষ্ঠ।  এফএওর হিসাব অনুযায়ী, গত অর্থবছরে আলু উৎপাদিত হয়েছে ১ কোটি ২ লাখ টন। ৯ কোটি ১৪ লাখ টন নিয়ে বিশ্বে প্রথম এখন চীন, আর ৪ কোটি ৯৭ লাখ টন নিয়ে দ্বিতীয় হচ্ছে ভারত।

কাঁঠালে দ্বিতীয়: বিশ্বে বছরে ৩৭ লাখ টন কাঁঠাল উৎপাদিত হয়। এ ফল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে। বার্ষিক উৎপাদনের পরিমাণ ১০ লাখ টন। প্রথম অবস্থানে রয়েছে ভারত। তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড।

আমে অষ্টম: বাংলাদেশ এখন বিশ্বে আম উৎপাদনে অষ্টম। বছরে উৎপাদন হয় ২৪ লাখ টন। ১০ বছর আগে ১২ লাখ ৫৫ হাজার টন নিয়ে অবস্থান ছিল দশম। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সপ্তম স্থানেও উঠেছিল। আম উৎপাদনে সবার ওপরে ভারত। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চীন।

পেয়ারায় অষ্টম: ১০ লাখ ৪৭ হাজার টন পেয়ারা উৎপাদন করে বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম স্থানে। ১ কোটি ৭৬ লাখ টন নিয়ে ভারত প্রথম এবং ৪৪ লাখ টন উৎপাদন করে চীন দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।  

পাট রপ্তানিতে প্রথম: পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে প্রথম বাংলাদেশ। পাট দিয়ে ২৮৫ ধরনের পণ্য তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। তবে পাট উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয়। উৎপাদন ক্ষেত্রে  প্রথম স্থানে ভারত। তৃতীয় অবস্থানে আছে চীন।

ছাগলের দুধে দ্বিতীয়: এফএওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছাগলের সংখ্যা, মাংস ও দুধ উৎপাদনের দিক থেকে বৈশ্বিক সূচকে ধারাবাহিকভাবে ভালো করছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে বাংলাদেশ ছাগলের দুধ উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয়। আর ছাগলের সংখ্যা ও মাংস উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ। ছাগল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ দুই দেশ হচ্ছে ভারত ও চীন।

মাছে তৃতীয়: এফএও বলেছে, ২০২২ সাল নাগাদ বিশ্বের যে চারটি দেশ মাছ চাষে বিপুল সাফল্য অর্জন করবে, তার মধ্যে প্রথম বাংলাদেশ। এরপর থাইল্যান্ড, ভারত ও চীন। গত ১০ বছরে মাছের উৎপাদন ৫৩ শতাংশ বেড়েছে। আর মাছ রপ্তানি বেড়েছে ২০ শতাংশের বেশি। মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়।
 
আউটসোর্সিংয়ে দ্বিতীয়: ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের চুক্তি করে সেই কাজ শেষ করে অনলাইনের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়াই হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) খাতে ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা ছয় লাখ, যা শতকরা হারে বিশ্বের প্রায় ২৭ শতাংশ। বদৌলতে বাংলাদেশ এ খাতে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যায় প্রথম হচ্ছে ভারত।

চা উৎপাদনে দশম: বাংলাদেশ বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ চা উৎপাদনকারী দেশ। চা উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে দশম। ব্রিটিশ আমলে বাংলাদেশে চা শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। ১৮৩৯ সালে তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আসাম ও সিলেটের পার্বত্য অঞ্চলে চা বাণিজ্য শুরু করে। বৃহত্তর চট্টগ্রামে ১৮৪০ সালে চা চাষ শুরু হয়। বেশ কয়েক বছর গবেষণা করার পর ১৮৫৭ সালে সিলেটের মালনীছড়ায় চা এস্টেট থেকে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৬৭টি বাণিজ্যিক চা এস্টেট রয়েছে। এখানকার এই শিল্প বিশ্বের তিন শতাংশ চা উৎপাদন করে থাকে। বাংলাদেশে চা উৎপাদনের সঙ্গে প্রায় ৭৫ শতাংশ নারী শ্রমিক যুক্ত।

সন্ত্রাস দমন: ২০২৩ সালে ‘বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সাফল্য এবং অঞ্চল ও এর বাইরে নিরাপত্তার জন্য এর প্রভাব’ শীর্ষক একটি ওয়েবিনারে বলা হয়, জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ সফল। যুক্তরাজ্যভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন বলেন, বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে বাংলাদেশের পাকিস্তানিকরণ হয়েছিল যা সমালোচনামূলকভাবে দেখা দরকার। তিনি বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ প্রসারে ২০১৫ সালে একজন পাকিস্তানি কূটনীতিকের জড়িত থাকার কথাও উল্লেখ করেন। নর্থ ক্যারোলিনা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক এ বি এম নাসিরের পর্যালোচনায় কীভাবে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে তা উঠে আসে। তিনি ব্যাখ্যা করেন, কীভাবে বিএনপি-জামায়াত শাসন আমলে বাংলাদেশের জনগণ এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিতে পরিণত হয়েছিল। তিনি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের জন্য বাংলাদেশ-মার্কিন নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও গভীর করার পরামর্শ দেন। ব্রাসেলসের দক্ষিণ এশিয়া ডেমোক্রেটিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক পাওলো কাসাকা জাতীয় আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ সন্ত্রাসবিরোধী ডোমেনে একটি রোল মডেল হয়ে উঠেছে যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে ব্যাপক প্রশংসিত। এছাড়া মেট্রোরেল, পদ্মাসেতু, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটসহ বিভিন্ন উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে।

news24bd.tv/ডিডি