বেইলি রোডের আগুনে ৪৩ জনের মৃত্যু: স্বাস্থ্যমন্ত্রী 

বেইলি রোডের আগুনে ৪৩ জনের মৃত্যু: স্বাস্থ্যমন্ত্রী 

অনলাইন ডেস্ক

রাজধানীর বেইলি রোডে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের বহুতল ভবনে লাগা আগুনে নিহতের সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। আগুনে এখন পর্যন্ত ৪৩ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে ৩৩ জনের মরদেহ এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে রয়েছে ১০ জনের মরদেহ।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন নিহতের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনা ঘটে।

ড. সামন্ত লাল বলেন, আমি সংবাদ পেয়ে দ্রুত চলে এসেছি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে দ্রুত আসতে বলেছেন। এখানে এসে ভয়াবহ অবস্থা দেখলাম।

বার্ন ইনস্টিটিউটে এখন পর্যন্ত ১০ জন মারা গেছেন। অপর দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৩ জন মারা গেছে।

মন্ত্রী আরও বলেন, যারা এখন পর্যন্ত বেঁচে আছেন, তাদের বেশির ভাগের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। যারা বেঁচে আছেন তাদের বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছেন। বাইরে কেউ আছে কি না সেই তথ্য এখনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

বহুতল ভবনের একটি ফ্লোরে থাকা কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্ট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে ধারণা করছে ফায়ার সার্ভিস। আগুন মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় সেখানে। রেস্টুরেন্টে আসা শতাধিক মানুষ আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে থাকে। বাঁচাও বাঁচাও চিৎকারে সেখানে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ভবনে আটকে পড়ে যায় খেতে আসা মানুষরা।

আগুনের সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে ফায়ার সার্ভিস। ১৩টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেয়। তবে উৎসুক জনতার ভীরে ফায়ার সার্ভিসকে কাজ করতে বেগ পেতে হয়েছে। এতে নারীসহ অন্ত ৪৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ওই ভবন থেকে ৭০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে পুলিশ, র‍্যাব। মোতায়েন করা হয়েছে ৩ প্লাটুন বিজিবি ও আনসার।

এ ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার এরশাদ হোসেন জানান, বেইলি রোডের কেএফসি ভবনের পাশে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের ভবনে আগুন লাগার খবর আসে রাত ৯টা ৫০ মিনিটে। খবর পেয়ে প্রথমে চার ইউনিট, পরে আরও চারটি ইউনিট পাঠানো হয়। এরপর আরও চারটি ইউনিট কাজ শুরু করে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে মোট ১৩টি ইউনিট।

রাত পৌনে ১১টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এর মধ্যেই একের পর এক আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করতে থাকে ফায়ার সার্ভিস। বিভিন্ন ফ্লোরে খাবার খেতে আসা মানুষদের অনেকেই ছাদে গিয়ে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা করেন।

ফায়ার সার্ভিস মই দিয়ে তাদের উদ্ধারের চেষ্টা করে। ভেতরে আটকে থাকা অনেকেই ধোঁয়ার কারণে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। রাত ১২টা পর্যন্ত ওই ভবন থেকে ৭০ জনকে জীবিত উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।

ওই ভবনের ছাদ থেকে উদ্ধার হওয়া এক ব্যক্তি জানান, ছাদে অনেক মানুষ আটকা আছে।

এদিকে, আগুনের খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে ভবনটির সামনে ভিড় করতে শুরু করেন ভেতরে আটকে পড়াদের স্বজনরা। অনেকেই স্বজনদের খোঁজ না পেয়ে কান্না করতে থাকেন। হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে সেখানে। অনেককেই দেখা যায় নিখোঁজ স্বজনদের ছবি নিয়ে ছোটাছুটি করছেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফাঁড়ি ইনচার্জ ইন্সপেক্টর বাচ্চু মিয়া বলেন, শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে অজ্ঞান অবস্থায় ১৯ জনকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ১০ জনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ৩৩ জনকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।

news24bd.tv/তৌহিদ