নিমতলী থেকে বেইলি রোড: পুরো আগুনের ওপর যেন বসে আছে রাজধানী

বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ড-ফাইল ছবি।

নিমতলী থেকে বেইলি রোড: পুরো আগুনের ওপর যেন বসে আছে রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিমতলী, চুড়িহাট্টা, বনানীর পর বেইলি রোডেও ভয়াবহ আগুন। রাজধানীতে গত ১৪ বছরে এনিয়ে চারটি স্থানে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে অনেক মানুষ।

বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত ‘কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্ট’ ভবনে লাগা আগুনে এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।

এর আগে রাজধানীতে বড় তিনটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

২০১০ সালের ৩ জুন রাতে পুরান ঢাকার নিমতলীতে রাসায়নিকের গুদাম থেকে ছড়ানো আগুনে ১২৪ জনের মৃত্যু হয়।

২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় রাসায়নিক গুদামে আগুনে প্রাণ হারান ৭১ জন।

২০১৯ সালের ২৮ মার্চ রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুনে ২৭ জনের মুত্যু হয়।  এছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

দোকানপাট –ঘরবাড়ি পুড়েছে। এক বঙ্গবাজারেই দুবার আগুন লেগেছে।

নিচে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তুলে ধরা হলো:

নিমতলী

২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীতে রাসায়নিকের গুদামে আগুন লাগে। পুরান ঢাকার নিমতলীর ৪৩ নবাব কাটারার পাঁচতলা ভবনের নিচতলায় আগুন লেগে তা মুহূর্তেই আশপাশের ভবনগুলোয় ছড়িয়ে পড়ে ১২৪ জন মানুষ প্রাণ হারান। ১৩ বছর আগের ভয়াবহ সেই আগুনে পুড়ে যাওয়া ভবনগুলোর ক্ষতচিহ্নগুলো এখন আর নেই, সেগুলো সংস্কার করা হয়েছে।

তাজরীন ফ্যাশন

২০১২ সালে ২৪ নভেম্বর ঢাকা মহানগরীর উপকণ্ঠ আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় অবস্থিত তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেড কারখানায়  অগ্নিকাণ্ডে ১১৭ জন পোষাকশ্রমিক নিহত হয় ও ২০০ জনের অধিক আহত হয়।

সিদ্দিকবাজারে আগুন
২০১৯ সালে ২২ ফেব্রুয়ারি  পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজারে আগুন লাগে। ৭১টি দোকানপাট পুড়ে যায়। তবে কেউ মারা যায়নি।

কমলাপুর বস্তি
২০২০সালের ১৯ জুন রাজধানীর কমলাপুর এলাকার বস্তিতে আগুনে পুড়ে গেছে অন্তত ৩০টি ঘর। রাত ২টার দিকে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। কেউ মারা যায়নি।

মহাখালীর সাত তলা বস্তি

২০২৩ সালের ২৭ মার্চ রাজধানীর মহাখালীর সাত তলা বস্তিতে আগুন লাগে। তাৎক্ষণিকভাবে আগুনে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

চুড়িহাট্রা

২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সেখানকার ওয়াহেদ ম্যানশন থেকে আশপাশে আগুন ছড়িয়ে ৭১ জনের প্রাণহানি ঘটেছিল। দুই বছর আগের এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষগুলোর এখনো দিন কাটে সেই রাতের বিভীষিকা মাথায় নিয়ে।

ঘটনার দুইবছর পার হলেও পুলিশ তদন্ত শেষ করতে পারেনি। চার্জশিট দিতে পারেনি। এদিকে, জামিনে বের হয়ে ওয়াহেদ ম্যানশনের দুই মালিক সংস্কার কাজ করছেন সেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া ভবনের। তবে এখনো বিচার ও ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ নিহতের স্বজনরা।

বনানীর এফ আর টাওয়ার  

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বনানীর বহুতল বাণ্যিজিক ভবন এফআর টাওয়ারে (ফারুক রূপায়ণ টাওয়ার) ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টায় অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। ২২ তলা ভবনের অষ্টম তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় ও ক্রমেই সেটি অন্যান্য তলায় ছড়িয়ে পড়ে।  অগ্নিকাণ্ডে ২৬ জনের মৃত্যু হয় এবং ৭০ জন আহত হন।

বঙ্গবাজার

২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল ভোর ৬টার দিকে আগুন লাগে রাজধানীর বঙ্গবাজারে। বেলা ১১টা পর্যন্ত পাঁচ ঘণ্টায়ও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিটের পাশাপাশি কাজ করছে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সাহায্যকারী দল। যোগ দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একটি টিম। পুলিশ ও র‌্যাব আশপাশের রাস্তায় যান চলাচল ও উৎসুক জনতার ভিড় নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।   

বেইলি রোড

বৃহস্পতিবার রাতে বেইলি রোডের সাততলা গ্রীন কোজি কটেজ নামের বহুতল ভবনে আগুন লাগে। ঘড়ির কাটায় সময় তখন পেরিয়েছে রাত সাড়ে নয়টা। প্রতিটি ফ্লোরে রেস্টুরেন্ট। আর সবকটি রেস্টুরেন্ট ভর্তি ক্রেতা। আগুনের খবর পৌঁছাতে খুব বেশি সময় লাগেনি। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও বের হতে পারেননি অনেকেই।
আগুনের খবর পেয়েই একে একে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিট। প্রাণপণে শুরু হয় কাজ।

আগুনের সূত্রপাত কিংবা ক্ষয়ক্ষতির পুরোপুরি তথ্য কোনো সংস্থা এখনো না দিতে পারেনি। ভবনটির নিজস্ব অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা ছিলো কি না এ বিষয়েও কেউ কিছু বলছে না। । তবে  সিআইডি বলছে কেমিক্যাল পরীক্ষা করে উদঘাটন করা হবে দুর্ঘটনার পেছনের কারন।

news24bd.tv/ডিডি

এই রকম আরও টপিক